Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমবে কৃষকের হয়রানি : চট্টগ্রামে বাস্তবায়ন সূচনা

কৃষি ঋণে সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন

| প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : ফসল ফলাতে গরিব কৃষকের জন্য ঋণ জরুরি। কিন্তু সেই কৃষি ঋণ পাওয়া কৃষকের ‘অধিকার’ হলেও এক্ষেত্রে পদে পদে হয়রানি জটিলতার শেষ নেই। এতে করে গরিব কৃষক সুদি মহাজনের কিংবা এনজিও’র ফাঁদে পড়তে বাধ্য হন। অনেক সময় সর্বস্ব হারিয়েও ফেলেন চড়া সুদের ঋণ শোধ করতে গিয়ে। কৃষকরা ফসল, ক্ষেত-খামারে উৎপাদনের আশায় ঋণ পেতে ব্যাংকের দ্বারস্থ হন। তবে অবর্ণনীয় ভোগান্তি আর জটিলতা পোহাতে হয় ঋণ চাইতে গিয়ে। মূলত তিনটি কারণে ঋণ প্রত্যাশী কৃষক ব্যাংকে ঘুরে ঘুরে ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন অথবা জটিলতায় আটকে যান। এক. কৃষি ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের কৃষকদের কৃষি ঋণ প্রদানে অনীহা। যদিও কৃষি ঋণকে কাগজে-কলমে ‘অগ্রাধিকার’ বিবেচনার কথা বলা হয়। দুই. ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিগত জটিলতা, যার ফলে অধিকাংশ গরিব অশিক্ষিত কৃষক ভয়ে ভড়কে যান। এবং তিন. কৃষি ঋণের আবেদনপত্র দাখিল থেকে ঋণ মঞ্জুর পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় কাগজপত্র ইত্যাদি সেকেলে পদ্ধতিতে চলছে। এতে করে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে চলছে হয়রানি ও বিড়ম্বনা।
এই প্রেক্ষাপটে কৃষি ও পল্লী ঋণ প্রদান কার্যক্রমের ক্ষেত্রে একটি সময়োপযোগী সহজীকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। মূলত ডিজিটাল ও অ্যাপভিত্তিক কৃষি ঋণ প্রদানের সহজ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন অগ্রণী ব্যাংক লিঃ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব শাখার ম্যানেজার মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনলাইন কৃষি ও পল্লী ঋণ এটুআই প্রোগ্রামের চট্টগ্রাম জেলার প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। কৃষি ও পল্লী ঋণ কার্যক্রম সহজীকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে তিনি ইনকিলাবকে জানান, আমার উদ্ভাবনটি প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আলাদা। এতে পছন্দের ব্যাংক থেকে ঋণ সম্পর্কে হালনাগাদকৃত তথ্য-উপাত্ত (যেমন- সুদের হার, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ) তালিকা পাওয়া যাবে। কৃষকের পছন্দসই ব্যাংকে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ব্যাংকে না গিয়েও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে যেকোন স্থান থেকেই যে কোন সময় ঋণের জন্য আবেদন, ঋণের কিস্তি, প্রদানের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখসহ যাবতীয় তথ্য এসএমএস’র মাধ্যমে জানার সুবিধা রাখা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সঠিক প্রক্রিয়া, পদ্ধতি এবং সংযুক্তি সম্পর্কে জানার সীমাবদ্ধতা সর্বোপরি কৃষি ঋণ বিতরণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের অনীহার কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা কৃষিঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে (যেমন- বিআরডিবি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, জাতীয় যুব উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি) কৃষি ও পল্লী ঋণের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কৃষি ও পল্লীঋণের সকল তথ্য উন্মুক্ত করে থাকে। বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান ও দাতাসংস্থা থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণের সেবা প্রদান করা হয়। অথচ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সুদের হার সম্পর্কে সহজপ্রাপ্য ও সহজবোধ্য তথ্য ভাÐার প্রয়োজন হলেও তা অনুপস্থিত। এ কারণে কৃষকরা সহজ উপায়ে ঋণের আবেদন করতে পারেন না। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার ৫ লাখের বেশি কৃষকের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ কৃষক কৃষি ও পল্লী ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। বাকি ৭৫ শতাংশ কৃষকের মধ্যে একটি বড় অংশই কৃষি ঋণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। কৃষি ঋণের আবেদন ও গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব রয়েছে তাদের। এ কারণে সৃষ্ট ভয় ও ব্যাংকারদের অসহযোগিতার কারণে ঋণের আবেদন করেন না। আবেদনের প্রক্রিয়া এবং সংযুক্তি সংক্রান্ত ভুলের কারণে আবেদন সংক্রান্ত জটিলতায় পড়েন গ্রাহকরা। এর ধারাবাহিকতায় সিদ্ধান্ত প্রদানে বিলম্বের কারণে হয়রানির শিকার হন তারা। কৃষিখাতে ব্যাংক ঋণের জটিলতায় অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে সুদি মহাজন ও এনজিও’র খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারান।
ব্যাংক থেকে কৃষকদের ঋণপ্রাপ্তিতে সমস্যার পেছনে কৃষি ঋণ প্রদানে ব্যাংকসমূহের অনীহা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মনিটরিং কর্মকর্তাদের যথাযথ মনিটরিং না করা, ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সুদের হার সম্পর্কে তথ্য না থাকা, সুবিধাজনক স্থান থেকে সঠিকভাবে আবেদন করার সুযোগের সীমাবদ্ধতা, সঠিক প্রক্রিয়া ও সংযুক্তি সম্পর্কে জানার ও জানানোর অভাব ইত্যাদি
উদ্ভাবনে সমাধান
ব্যাংকার মোঃ জসিম উদ্দিনের উদ্ভাবিত কৃষি ঋণ সহজীকরণ পদ্ধতিতে রয়েছেÑ একটি অনলাইনভিত্তিক ইউজার ইন্টারফেস যেখানে সংশ্লিষ্ট সমস্যার ক্ষেত্রে আবেদনের প্রক্রিয়া নির্দেশিত থাকবে। ঋণের সুদের হার সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য প্রদান করা থাকবে। আবেদনের সাথে প্রদত্ত সংযুক্তিসমূহের তালিকা প্রদশিত থাকবে। সংযুক্তিসমূহের সঠিক মডেল ও সাধারণ ভুল সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে। কৃষকগণ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে অথবা ইউডিসির সহযোগিতায় এ সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। গ্রাহকের আবেদন অনলাইনে প্রাপ্তির সাথে সাথেই নথি চালু করা হবে। কৃষকের আবেদন যাচাইকালে তা উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট জমা হবে। সিদ্ধান্ত সম্বলিত নির্দেশনাবলী গ্রাহককে এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
বাস্তবায়ন সূচনা
চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ব্যাংকসমূহ অনলাইনে কৃষি ও পল্লী ঋণের তথ্য কৃষকদের দিয়ে আসছে। মোঃ জসিম উদ্দিন জানান, পাইলট প্রকল্পের আদলে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে হাটহাজারী উপজেলায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে সাফল্য আসছে। হাটহাজারী উপজেলার লীড ব্যাংকিংয়ের জন্য প্রতি মাসে মিটিংয়ের প্রয়োজন হয়না। যার যার ইউজার এক্সেস অনুযায়ী মাসিক বিবরণী ইনপুট করা হয়। ঋণ প্রদান, আদায়সহ উপজেলায় সার্টিফিকেট মামলার যাবতীয় তথ্যাদি একনজরে দেখা সম্ভব হয়। এরফলে হাটহাজারী উপজেলায় কৃষি ও পল্লী ঋণের তথ্যাদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলার ১৪ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তী সময়ে প্রথমে অগ্রণী ব্যাংক লিঃসহ ধাপে ধাপে সারাদেশে এ উদ্ভাবনী বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষি ও পল্লী ঋণ কার্যক্রম সহজীকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় মোঃ জসিম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিক সেবায় উদ্ভাবন বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তার সনদপত্র এবং হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন ও পানিসম্পদ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদপত্র দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ