Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়াহহাব মিঞাই প্রধান বিচারপতি

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন-দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এখন আর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নন আবদুল ওয়াহহার মিঞা; তিনি হলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ স্বীয় ক্ষমতাবলে গতকাল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির এই দায়িত্ব দেন। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এস কে সিনহা ছুটি নেয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির অধীনেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক রদবদল করা হবে’। সে প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে বলেছেন ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কেবল রুটিন ওয়ার্ক করবেন। এর বাইরে তাঁর প্রশাসনিক পরিবর্তন বা অন্য কিছু করার রেওয়াজ নেই’। এস কে সিনহার বিদেশ চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই ‘ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি’ থেকে আবদুল ওয়াহহার মিঞাকে প্রেসিডেন্ট ‘প্রধান বিচারপতির’ এই দায়িত্ব দেন।
সুপ্রিম কোর্টের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে চাননি আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি। এরই প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিদেশে সফররত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দেশে ফিরে ‘প্রধান বিচারপতির’ দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত।
এক মাসের ছুটিতে বিদেশে অবস্থানরত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করলে ৫ বিচারপতি জানান তারা এস কে সিনহার সঙ্গে কোনো বেঞ্চে বসবেন না। প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ও গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেওয়া লিখিত বিবৃতিকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ অবিহিত করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গতাকালের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি নিন্মরূপ।
৩০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট (বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি শব্দ ব্যবহার করা হয়) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যাতিত আপিল বিভাগের অপর পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মোঃ ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তারমধ্যে বিদেশে অর্থপচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে আরও বলা হয় বিচারপতি মোঃ ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ বিচারপতি এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই ১১টি অভিযোগ বিষদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওই সব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
এই সিদ্ধান্তের পর ওইদিন (পহেলা অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুমতি নিয়ে ৫ বিচারপতি তাঁর হেয়ার রোডের বাসভবনে গিয়ে অভিযোগসমূহ নিয়ে বিষদভাবে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর তার কাছ থেকে কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লিখিত ৫ বিচারপতি সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় ওই অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁর (এস কে সিনহা) সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাঁদের (৫ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুষ্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে প্রেসিডেন্টের কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে প্রেসিডেন্ট তা অনুমোদন করেন। সেই প্রেক্ষিতে (বিবৃতিতে ততপ্রেক্ষতে) প্রেসিডেন্ট সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্যতম বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিয়াকে দেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচারবিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের তরফ হতে কোনো প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে উপরোক্ত বিবৃতি প্রদান করা হল।
অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে, যদি কোনো রকম সত্য না হতো, তাহলে দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এসমস্ত কথা বলা কি সম্ভব হতো? আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেছেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দালিলিক প্রমাণসহ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তে তা প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যদি কোন দুর্নীতি বা অন্য কোন অভিযোগ ওঠে তাহলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে কাউকে দুর্নীতিবাজ বলার আইনগত সুযোগ নেই। আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়ার হোসেন বলেছেন, পৃথিবীতে অনেক প্রধান বিচারপতি এই রকম চাপের মুখে পড়েছিলেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই রকম চাপ সহ্য করার শক্তি থাকতে হয়।



 

Show all comments
  • আরমান ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:২০ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি এই দেশের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসিব মোশাররফ ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ৬:৪২ এএম says : 0
    প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়া অবশ্যই রাজনৈতিক ফায়দা আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Bokul ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:৩৬ পিএম says : 1
    এই আমার সোনার বাংলা যে জন্য দেশ স্বাধীন করেছিল লক্ষ্য লক্ষ্য শহীদ তাদের তর তাজা বুকের রক্ত দিয়ে . আমরা আজ তার সুফল পাচ্ছি ! আর এই জন্যই আমরা বলি " বিসমিল্লাহর " পরিবর্তে " জয় বাংলা "! (This is my golden Bangla that the country had independently targeted the target martyr with their fresh chest blood. We get his benefits today! And that's why we say "Bismillah" instead of "Joy Bangla"!)
    Total Reply(0) Reply
  • MOHAMMED AZIZ ULLAH CHOWDHURY ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 2
    KHOMOTER LOBHE ARO KOTOJE KI KORBE EY SORKAR DHEKTE THAKUN
    Total Reply(0) Reply
  • Abduz Zaher ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ২:০৩ পিএম says : 1
    ইতি মধ্যে সিনহা কে নিয়ে আদালত যে বিবৃতি দিয়েছে তা জনগনের প্রশ্নের মুখোমুখি। আদালত কে প্রমান করতে হবে আদালত জনগনের। সরকারের নয়। অবশেষে সিনহা প্রমান করলো সে বাংলার বাঘ। জনগন আর মেরুদন্ডহীন বিচারপতি চাই না।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mostafa ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ২:০৫ পিএম says : 0
    উদাহরণ হয়ে রইল
    Total Reply(0) Reply
  • Moinul Islam ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ২:০৫ পিএম says : 0
    Very Good.
    Total Reply(0) Reply
  • Atiqur Rahman Rubel ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ২:০৬ পিএম says : 1
    বিচার বিভাগ টাও ...........................
    Total Reply(0) Reply
  • Md Salim ullah ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০৫ পিএম says : 1
    Now our Mr.President also admit as part of Awami drama. For the sake of justice, the doors of the Supreme Court were closed and closed forever.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ