Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি লক্ষীধন ত্রিপুরা

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কবির হোসেন, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) থেকে : স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি কাপ্তাইয়ের দূর্গম পাহাড়ী এলাকার লক্ষীধন ত্রিপুরা। স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হন্তক্ষেপ কামনা করছেন। লিখিত একটি পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কাপ্তাই ইউপির বাসিন্দা ভাইজ্যাতলী মৌজা হরিণ ছড়ার এলাকার বসবাসরত লক্ষীধন ত্রিপুরা (৬০) জানান, ১৯৬৭ সালে পুলিশে চাকরী নিয়ে রাজশাহী সারদা ট্রেনিং যায়। ১৯৬৮সালে ট্রেনিং পাশ করে নোয়াখালী মাইজদীতে বদলি হয়। ১৯৭০সালে নভেস্বরে বিবাহ করে ছুটি শেষে আবার চাকরীতে যোগদান করা হয়। ২৬মার্চ পাক বাহিনীর উৎপাত বেড়ে যাওয়ার কারণে নোয়াখালী পুলিশ লাইনের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন, তোমাদের নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পাড় চলে যাও। পরে আমি নোয়াখালী হয়ে ফেনী পৌছার পর ভারত বর্ডার পার হয়ে শ্রীনগর বাজার উঠি।
অতঃপর ঐদিন ওখানে রাত কাটিয়ে ভোর হওয়ার সাথে, সাথে সাব্রং চলে যাই। আবার রামগর পার হয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্ত পাকবাহিনী চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা রক্ষিদের কারণে বাড়ি যাওয়া আর স¤¦াব হয়নি। পরে রামগর থানায় আবার যোগদান করি। প্রায় একসপ্তাহ অবস্থান করার পর পাকবাহিনী রামগর থানা আক্রমন করে। আমি আবার পালিয়ে সাব্রæং চলে যাই। ঐখানে থাকা অবসন্থায় রেডিওতে সংবাদ শুনি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বি,ডি পালিয়ে না থেকে মুক্তি ফোর্সে যোগদান করার ঘোষণা দেয়। আমি ঘোষণা শুনে হরিনাতে গিয়ে মুক্তিফোর্সে যোগদান করি। এবং মুক্তিযোদ্বে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধকরি। কিছুদিন পর মেঘালয়ে অরেমে প্রদেশে ট্রেনিং সেন্টারে চলে যাই। সেখানে নাগারে ছয় মাস ট্রেনিং দেওয়ার পর প্রথম যুদ্ধ করি রংপুর শীল মারি বন্দরে। আমার সাথে থাকা শলমারি বন্দরের মোজাহিদ আব্দুর রহিম সিপাহী ঐ যুদ্ধে শহীদ হন। পরে আবার ভারত আসা হয়। ভারতে কয়েক দিন থাকার পর ময়মনসিংহ, জামালপুর গিয়ে একটি মাইন্ড পোড়ানে হয়। তাতে কোন কার্যকর না হওয়ার দরুন আবার ভারত চলে যাই। পরবর্তী সিলেট বড়লেখা পৌছে ঐখানে মুক্তিঘাটি করে যুদ্ধ করি।
এক পর্যায়ে পাকবাহিনী থেকে রাজাকার আমাদের হাতে ধরা পরে। এর কিছুদনি পর ভারতে চলে যাই। কিছুদিন ভারতে অবস্থান করার পর আবার ভারত থেকে সিলেট মৌলভীবাজার গিয়ে ঘাটি করি। ঐখান থেকে আমরা কালিদহ থানায় আক্রমণ করে ঐ এলাকাকে আমরা মুক্তি বাহিনীর দখলে নিয়ে আসি। তার পরের দিন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। তার পরে আমাকে ১৫দিনের জন্য জয়েনলিপ ছুটি দেওয়া হয়। ১৫দিন ছুটি ভোগ করার পর আবার আমি নোয়াখালী মাইজদি পুলিশ লাইনে যোগদান করি। ১৯৭৪ সালে আমার স্ত্রী ডেলিভারি হওয়ার কারণে ১মাসের ছুটি নিয়ে আসি। এর পর হতে আমি আমার এলাকা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার হরিণছড়া নামক এলাকায় স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে এখন পর্যন্ত পাহাড়ে ঝুম চাষ করে মানবতার জীবন যাপন করছি। দেশের জন্য যুদ্ধ করে আজ দেশ স্বাধীন। কিন্ত আমি পরাধীন রয়ে গেলাম। কেউ আমার কোন খোঁজ খবর নেয়নি বা নেওয়ার চেষ্টা করেনি। মুক্তিযোদ্ধা না করে আজ অনেকেই অনেক কিছু পেয়েছে কিন্তু আমি বঞ্চিত হয়ে পাহাড়ের মধ্যে ধুকে, ধুকে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট পাচিছ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন আমার বিস্তারিত সন্ধান নিয়ে আমাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাধীনতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ