Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবনযুদ্ধে সফল সৈনিক ব্রাহ্মণপাড়ার প্রতিবন্ধী শিল্পি

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ আবদুল আলীম খান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) থেকে : সদিচ্ছা, সুদৃঢ় সংকল্প আর অধ্যবসায়ই মানুষের জীবনে সাফল্য বয়ে এনে তাকে করে তোলে গৌরবান্বিত। এভাবে মানুষ অসাধ্যও সাধন করতে পারে। আর সদিচ্ছা শক্তির প্রভাবে জীবন চলার কণ্টকাকীর্ণ পথের সব বিষাক্ত কাঁটা নিজ হাতে উপড়ে ফেলে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে হয় সাফল্যের উচ্চ শিখরে। কেননা, ‘রাত যতো গভীরই হোক, প্রভাত ততোই নিকটে। কাজেই জীবন চলার পথ যতো কণ্টকাকীর্ণই হোক, সাফল্য আসবেই। অভীষ্ট সাফল্যে পৌঁছতে হলে মানুষকে এমনি সদিচ্ছা পোষণ করেই শত বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। জীবন যুদ্ধে এমনি সদিচ্ছা সম্পন্ন এক সফল সৈনিক কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল এলাকার প্রতিবন্ধী নারী শিল্পি আক্তার। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, আশীর্বাদ” এর স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। সাভাবিক ভাবে না হাটতে পারলেও দর্জির কাজ করে পরিবারের হাল ধরেছেন তিনি। তার কাছ থেকে দর্জি শিক্ষাগ্রহণ করেছে বিভিন্ন এলাকার প্রায় শাতধিক নারী। তাদের অনেকেই বাড়িতে কিংবা দোকানে দর্জির কাজ কারে নিজেদের জীবিকা নির্ভর করছেন। নিজের মেধা, মনন, মমতা ও ভাল দক্ষতা দিয়ে পোষাক তৈরী করে এলাকার নারীদের মন জয় করেছেন প্রতিবন্ধী শিল্পি আক্তার। তিনি আজ সমাজের কাছে প্রতিবন্ধী নন, আলোকিত নারী।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল গ্রামের নোয়াপাড়া এলাকায় জন্ম নেয়া আব্দুল কাদিরের প্রতিবন্ধী মেয়ে মোসাঃ শিল্পি আক্তার। সবে মাত্র তার বয়স ২৪ বছর চলে। তার ১টি পা চিকন এবং আকারে ছোট। এ ছাড়াও তার ২ পায়ের আঙ্গুল গুলোতেও সমস্যা রয়েছে। এক পায়ের উপর ভর করে খুরিয়ে খুরিয়ে হেটে গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন তিনি। অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী নারী শিল্পি আক্তার গ্রামের বাজারে একটি ছোট দোকান ভাড়ায় নিয়ে দর্জির কাজ করেন। এতে যা পারিশ্রমিক পাওয়া যায় দোকান ভাড়াসহ আনুসাংঙ্গিক খরচ মিটিয়ে সুন্দর ভাবে চলছে তার সুখের জীবন। তার কাছ থেকে এলাকার নারীরা জামা কাপড় সেলাই করে তাদের মনের মত হওয়ায় বাড়তে থাকে সুনাম ও ক্রেতার সংখ্যা।
এই ব্যাপারে শিল্পি আক্তার জানান, গ্রামে চাচা চাচীর আশ্রয়ে থেকে গ্রামের স্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করি। লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে প্রতিবেশি এক কাকা খোরশেদ আলম, তিনি নিজে থেকে আমাকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সমাজসেবা অফিসের সাথে যোগাযোগ রেখে আসি। এক পর্যায়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ঢাকা সাভার সিআরপি’তে ৩ মাসের দর্জির প্রশিক্ষণগ্রহণ করি। তার পর আরো উন্নত প্রশিক্ষনের জন্য আমার ভাইয়ের সহযোগিতায় ঢাকা কাচপুরের লাভলী লেডিস টেইলার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকে নিজের খরচে দর্জি কাজ করি। এভাবেই ১ বছর কেটে যায়। তার পর পরিবারের সাথে গ্রামে চলে আসি এবং এক প্রকার হতাশার মধ্যে সময় গুলো কাটতে থাকে। বেশ কিছুদিন এভাবেই পার করা পর আমার এক কাকা ইলিয়াজ সরকারের সহযোগিতায় নিজ গ্রামের বাজারে কাকা একটি দোকানের ব্যাবস্থা করে দেয়। তার পর থেকে গ্রামের বাজারে টেইলারী প্রতিষ্টান নিয়ে ৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছি। আমার এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক নারী দর্জি প্রশিক্ষণগ্রহণ করেছে। বর্তমানেও আমার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন মেয়ে দর্জির কাজ করছে। এছাড়াও বেতন ভ‚ক্ত ৩ জন সহযোগী নিয়ে আমি নিজেসহ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আমি কাজের মান ভাল করার চেষ্টা করি এবং পারিশ্রমিকও কম নেই। সব মিলিয়ে আমার এই প্রতিষ্ঠান ভালই চলছে। এসময় তিনি আরো জানান, গ্রামের বাজারে দর্জি কাজ করে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও সকল খরচ মিটিয়ে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মত আমি সঞ্চয় করতে পারি। বছরে গড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মত সঞ্চয় হয়। সরকারী সুযোগ সুবিদা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৩ সলের দিকে তিনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধিনে জয়িতা নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ