Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে পেশাদার রক্তদাতাদের কাছে জিম্মি রোগীরা

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : রক্তের সংকটকে পুঁজি করে পেশাদার রক্তদাতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসাপাতাল ও ক্লিনিকের রোগীরা। এখানে রক্তের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কার্যত পেশাদার রক্তদাতারা। বন্দরনগরীতে বছরে রক্তের চাহিদা ৬০ হাজার ব্যাগ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সন্ধানী’ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ইউনিট থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ব্যাগ। বিশাল ঘাটতি ও সাধারণ মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে রক্ত নিয়ে চলছে জমজমাট বাণিজ্য। সুস্থ মানুষকে নিয়মিত রক্ত দিতে সন্ধানী উদ্বুদ্ধ করলেও বছরে রক্তের বিশাল ঘাটতি থেকে যায়।
সন্ধানী চমেক ইউনিট সূত্রে জানা যায়, পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তে রয়েছে ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন রোগ জীবাণু। এসব রক্ত দেহে প্রবেশ করলে এসব রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের আত্মীয় স্বজনের কাছে এ রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চমেক হাসপাতালের বøাড ব্যাংকের সামনেই এসব রক্তদাতারা ঘর সংসার পেতে বসেছে। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা পেশাদার রক্তদাতার কাছ থেকেও রক্ত নিতে পারছেনা। আর ওই রক্ত নিলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। কারণ এতে অসুস্থ রোগীর দেহে প্রবেশ করছে আরও কঠিন জীবাণু। এদিকে ঘন ঘন রক্ত বিক্রির কারণে পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তে হিমোগেøাবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এসব রক্ত শরীরে তেমন কাজ করছেনা বলে চিকিৎসকরা মত প্রকাশ করেছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রামে রক্তের চাহিদার শতকরা ৬৫ ভাগ পূরণ করছে পেশাদার রক্তদাতারা। রোগীর আত্মীয় স্বজন দান করে ২৫ ভাগ, স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা মাত্র ১০ ভাগ।
এছাড়া চট্টগ্রামে সংকট রয়েছে বøাড ব্যাগেরও। কেউ স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে চাইলে ব্যাগের কারণে অনেক সময় রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। এ ব্যাগের বাজার মূল্য পড়ে ১০০ টাকার উপরে। বøাড ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যাগ না থাকায় রক্ত সরবরাহও অনেক সময় বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার সমাজ (বামাস) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির বিভাগীয় পরিদর্শক জাহানারা বেগম বলেন, রক্তের সংকটকে পুঁজি করে এক শ্রেণির প্রতারক রোগীদের সাথে প্রতারণা চালিয়ে আসছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেও ভুক্তভোগী বলে জানান। ঘন ঘন রক্ত বিক্রির কারণে পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তে হিমোগেøাবিনের পরিমাণ কমে যায় এগুলো কিনেও কোন কাজ হয়না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৮০ দশকে সন্ধানীর যাত্রা শুরু হলেও বহুমূখী সমস্যার কারণে এ প্রতিষ্ঠানটি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনি। যানবাহন, রেফ্রিজারেটর, স্ক্যানিং সংক্রান্ত নানা যন্ত্রপাতিসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে সন্ধানীর কার্যক্রম আক্ষরিক অর্থেই কোনমতে অব্যাহত রয়েছে। মূলত মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাই চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। সন্ধানীর কার্যক্রমের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষুদানে উৎসাহ প্রদান, কর্নিয়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ইত্যাদি রয়েছে। রক্তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা, বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহ, বিনামূল্যে কর্নিয়া সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সন্ধানীর পক্ষে এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়না বলে জানা গেছে। এদিকে সম্প্রতি স্বেচ্ছায় রক্তদান দিবস ও চক্ষুদান দিবস উপলক্ষে ‘রক্তের জাত নেই, দৃষ্টিতে মৃত্যু নেই’ শীর্ষক সন্ধানীর প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রক্ত সংকটের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ