Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌমাছি পালনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করতে বাদায় (বন-বাদাড়ে) যেতেন সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু এখন আর যান না। তাই বলে যে মৌ-মধু-মৌমাছির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, তা নয়। আগে সুন্দরবনে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে মধু সংগ্রহ করলেও এখন বৈজ্ঞানিকভাবে মৌমাছি পালন করে তা থেকেই সংগ্রহ করেন মধু। শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়, সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপক‚লের সাড়ে চার শতাধিক যুবক এখন সফল মৌমাছি পালক। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা এখন ঘুরছেন সারাদেশে। ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে পালন করছেন মৌমাছি। আর তাতেই উৎপাদন হচ্ছে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও রপ্তানিযোগ্য মধু।
বিসিক সাতক্ষীরা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে বিসিক যুবকদের ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৪৮টি ব্যাচে শ্যামনগরের উপক‚লীয় এলাকার ৪৯৩জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌমাছি পালনে ৫২জনকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ঋণ। সূত্র আরও জানায়, প্রশিক্ষিত যুবকরা ২৯৫টি ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার গড়ে তুলেছেন। এসব মৌ খামার নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে দেওয়া হয় মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ। সিরাজুল ইসলামও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এখান থেকেই।
সিরাজুল ইসলাম জানান, তার আড়াইশ’ ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্স রয়েছে। সেগুলো এখন নারায়ণগঞ্জের সোনারগায়ে। বাক্সগুলো সেখানে রাখা হয়েছে রানী মৌমাছি উৎপাদনের জন্য। রানী মৌমাছি জন্মালেই বাক্সগুলো নিয়ে যাওয়া হবে সিরাজগঞ্জে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে। তিনি বলেন, প্রতিটি মৌ বাক্স থেকে বছরে নূন্যতম এক মণ মধু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বরুইফুলের মধু আট হাজার, কালজিরার মধু ১৫ হাজার, ধনের মধু ছয় হাজার ও লিচু ফুলের মধু আট হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। মৌ চাষী মুন্সীগঞ্জের বাবু বলেন, মৌমাছি পালন অত্যন্ত লাভজনক। সারাদেশে বৈজ্ঞানিকভাবে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে বিপুল পরিমান মধু উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে সারাদেশে সাতক্ষীরার যুবকরাই ২৯৫টি ভ্রাম্যমাণ খামারে মৌমাছি পালন ও মধু উৎপাদন করছে। তবে, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য মধু বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ব্যাপারে বিসিক সাতক্ষীরা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল ওদুদ বলেন, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২-১৩ অর্থ-বছরে বিসিক সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে এবং এতে আমরা অনেকটা সফল। এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, কয়েকটি কোম্পানি চাষীদের কাছ থেকে মধু ক্রয় করে রপ্তানি করে। এতে চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। মৌ চাষীরা যাতে সরাসরি মধু রপ্তানি করতে পারে, সেজন্য সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীতে মধু রিফ্রেশনর সেন্টারের জন্য দুটি প্লট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু শুনছি, এটি সাতক্ষীরা থেকে কেটে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাতক্ষীরাতেই মধু রিফ্রেশনর সেন্টার স্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছি। এটা হলে মধু রপ্তানির পথে সব বাধা কেটে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ