Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বন্ধ হবে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা

ওসমানীনগরের কাগজপুরের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ পুন:নির্মাণের দাবি

| প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : ‘কাগজপুরের ব্রীজে গাড়ি উঠলে কাঁপা আরম্ভ করে। যেন মনে হয় বইচাল আরম্ভ হইছে। গাড়ি ব্রীজে বারি খাইয়া বিকট আওয়াজ করে। আশপাশের মানুষ থাকইন আতংক নিয়া। কোন সময় ব্রীজ ছাড়িয়া পড়ি যায় আল্লা জানোই। এ ব্রীজ সংস্কার না করিয়া আবার নতুন খরিয়া ভালা খরে বানাইবার দাবী জানাইরাম।’
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলাধীন কাগজপুরের ব্রীজের করুন বর্ণনা দিলেন সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় স্থানীয় সাদিপুর ইউনিয়নের সদস্য শপন মিয়া। গত শনিবার দুপুরে সড়জমিনে গেলে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।
জানা যায়, সিলেটের প্রবেশ পথ শেরপুর ব্রীজেরর পরেই কাগজপুর ব্রীজ। এ ব্রীজ মহাসড়কের প্রশস্তকরণের সময় নির্মাণ করা হয়। ওসমানীনগর উপজেলাধীন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাগজপুরের ব্রীজ দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্রীজের উপরের ভেলি ডেকিং ভেঙে গেছে। অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। ব্রীজের উঠা নামার আগে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যেন কেউ দেখার নেই। কাগজপুর ঝুঁকিপূর্ণ ব্রীজ পুণ:নির্মাণের দাবি জানান সচেতন মহল।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কাগজপুর ব্রীজ বর্তমানে মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গত শনিবার ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, ভাঙা অংশ সংস্কার করছে সিলেট সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ সময় তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, ব্রীজ ঠিকই আছে উপরের ¯েøফ উঠে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। গাড়ি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করতে না পারায় স্থায়ী সমাধান করা যাচ্ছে না। তারা আশা করছেন আরো কিছু দিন পর গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে স্থায়ী সমাধান করবেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, ১৯৯০ সালে শেরপুরের কুশিয়ারা নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের দীর্ঘদিন হলেও এভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু কাগজপুর ব্রীজে টেকসই কাজ না হওয়ার কারণে কিছু দিন পর পর মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে। ভালো মানের কাজ না হওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপদের এক কর্মকর্তা জানালেন, ট্রাফিক আইন না মেনে এ ব্রীজের উপর দিয়ে অভারলোড গাড়ি চলাচল করার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি করছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রীজের উপর বড় বড় উচু নিচু ঢেউ সৃষ্টি হওয়ার ফলে গাড়ির ধাক্কা লেগে বিকট শব্দ সৃষ্টি হয়। ব্রীজের আশে পাশের মানুষ আতংকের মধ্যে থাকেন। ব্রীজে গাড়ির ধাক্কার শব্দ একমাইল দূর থেকে শুনা যায়। অন্য দিকে ব্রীজের পাশে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাতও ভেঙে গেছে। যে কোন সময় পা ঢুকে যেতে পারে। দ্রæত মেরামত করা না হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্রীজের ফিটনেসও দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। গাড়ি ব্রীজের উপর উঠা মাত্র ঝাকুনি শুরু হয়। সতর্কতার জন্য টানানো হয় লাল পতাকা। স্থানীয়রা স্থায়ী ও টেকসই কাজ করার মাধ্যমে সমাধানের দাবি জানান।
চালকরা জানালেন কয়েক দিন পর পর ব্রীজের উপরে আস্তর উঠে গিয়ে ¯েøপ উঠে যায়। যার ফলে দাড়ালো চাকুর মত দাড়িয়ে থাকে লোহা জাতীয় পাত ও রডগুলো। প্রায় সময় গাড়ির চাকার সাথে আঘাত লেগে টায়ার কেটে যায়। বিকল হয়ে পড়ে দুরপাল্লার গাড়ি। ব্রীজের উপর দাড়িয়ে থাকে দীর্ঘ সময়। তখন সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। দুরের যাত্রীরা পড়েন নানা সমস্যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী জানালেন, কাগজপুর ব্রীজটি নির্মাণ করতে হলে পাশের পুরাতন ব্রীজ সচল করে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বর্তমান ব্রীজ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু এ ব্রীজ মেরামত করতে বড় ধরণের কোন বরাদ্ধ না থাকায় তাতে বড় করে হাত দেয়া যাচ্ছে না। তিনি ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানান, অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫টন ওজনের গাড়ি চলাচলের জন্য। কিন্তু প্রতিটা ট্রাক ৩০ থেকে ৪০টন মাল নিয়ে চলাচল করে। যার ফলে একটি ব্রীজ তার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না।
এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজি আব্দুর রব বলেন, টেকসই কাজ না হওয়ার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে কাজ না করার কারণে এবং তাদের চরম অবহেলার কারণে ঘন ঘন এ সমস্যা হচ্ছে। আমরা দ্রæত স্থায়ী সমাধান চাই। নতুবা যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটবে।
সিলেট বিভাগীয় সড়ক ও জনপদের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুল মজিদ চৌধুরী বলেন, কাগজপুরের ব্রীজের মূল ভাঙ্গা বহু আগে ঠিক করা হয়েছে। তাতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। উপরের ¯েøফ অংশ মাঝে মধ্যে উঠে যায়। গাড়ি চলাচলের কারণে স্থায়ী সমাধান করা যাচ্ছে না। তবে কিছু দিন পর বিকল্প গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে স্থায়ী সমাধাণ করা হবে। মূল ব্রীজে কোন সমস্যা নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ