Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাঁড়াশি অভিযানে দুদক

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুনীতি ও হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে সাঁড়াশি অভিযানে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভোক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক ফাঁদ পেতে এবং তাৎক্ষণিক অভিযান এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে রাজধানীর পাসপোট অফিস, জিপিএ, সদরঘাটস্থ ট্রেজারি ভবনসহ বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে। সম্প্রতি ১৫ থেকে ২০টি অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় সংশ্লিষ্ট অফিসের প্রধানসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদেরকে সর্তক করে এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রফতার করে দুদক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিযান পরিচালনার জন্য কমিশনের একাধিক টিম সশস্ত্র পুলিশসহ সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতির খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। এছাড়াও ব্যাংকিংখাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় কমিশনের সশস্ত্র টিমের সদস্য সহ একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, অভিযোগে জানাতে হললাইনটি একটি প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে। সরকারি অফিসে ঘুষ-দুর্নীতির খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছে আমাদের বিশেষ টিম। আগামীতে আরো বেশি অভিযান চলবে। এ প্রসঙ্গে ডিজি মুনীর চৌধুরী বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেই অভিযান চলছে। সামনে এ অভিযানের মাত্রা ও আওতা আরও বাড়ানো হবে।
এর আগে পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনার চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালিত হবে জনগণের কল্যাণে। তিনি বলেন আমরা দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছি। আমরা কাউকেই ছাড় দিচ্ছি না কিংবা ভবিষ্যতেও ছাড় দিব না।
দুদক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে শুরুতে থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুনীতির প্রতিরোধে সবাত্মভাবে কাজ করছে। সরকারের ২৫টি দপ্তরে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক টিম কাজ করছে। এই টিমের প্রতিবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রতিটি টিমের সুপারিশ সরকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অবহিত করছে। যাতে সরকার পদ্ধতি উন্নয়নের মাধ্যমে দুর্নীতির উৎসসমূহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও দুনীতি প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে গত মাসে গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি মতবিনিময সভা করে। এসময় গণমাধ্যমের কর্মরত ব্যক্তিদের বিভিন্ন পরামর্শ নেন। এরপর নিজের পরিকল্পনামত সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুনীতি মুক্ত জনগণকে সেবা দিতে বিভিন্ন টিম গঠন করে। এছাড়াও দুদকের চালুকৃত হটলাইনে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে একটি বিশেষ টিম রাজধানীতের বিভিন্ন দপ্তরের অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ইতোমধ্যে ১৫ থেকে ২০ টি অভিযান পরিচালনা করেন। এতে প্রায় ডজন খানেক সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে।
ঢাকার জিপিওতে অভিযান: দুদুকের হললাইনে অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, ঢাকার জিপিওতে বৈদেশিক পাশের্^ল প্রেরণের কার্যক্রমে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হচ্ছে । ওই অভিযোগে ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের দুজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি ৫ সদস্যের সশস্ত্র পুলিশ ফোর্সসহ একটি এনর্ফ্সেমেন্ট টিম গঠন করে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিমটি বেলা সাড়ে দশটায় পৌঁেছে যায় জিপিওর বৈদেশিক ডাক প্রেরণ শাখায়। এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যদের উপস্থিতিতে বদলে যায় জিপিওর দৃশ্যপট। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ঘটনা বন্ধ হয়ে যায়। দুদক টিমের সদস্যরা পর্যবেক্ষণে প্রায় দুই ঘন্টা। তারা সেবা প্রদানের কিছু ত্রুটি-বিচ্যূতির কথা জেনে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন হয়রানিমুক্ত সেবা প্রদানের পরামর্শ প্রদান করেন।
মেডিকেল কলেজে অভিযান: গত ৯ অক্টোম্বর অভিযোগ আসে। অভিযোগে বলা হয়ে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মালামাল বিক্রির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম হাজির হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন টিমের সদস্যরা। টিমের সদস্যরা নিলাম কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেন।
সদরঘাটস্থ ট্রেজারি ভবনের: অভিযোগে ভিত্তিতে ঢাকার সদরঘাটস্থ ট্রেজারি ভবনের পেনশান শাখায়দুদক অভিযানে যান। দুদকের উপপরিচালক মনজুর আলম এর নের্তৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম এবং দুদকের নিজস্ব আর্মড ইউনিটের সদস্যেদের তৎকষণাৎ ঘটনাস্থলে পাঠান টিমের সদস্যরা সকাল সাড়ে দশটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। দুদক টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ১ ঘন্টা অবস্থান করেন। অবস্থানকালে দুদকের সদস্যরা ঘুষ-লেন-দেনের কোনো ঘটনা না পেলেও সেবা প্রদানে গাফলতি পর্যবেক্ষণ করেন।
ভূমি কর্মকর্তা আটক: গতকাল ঘুষ নেয়ার সময় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের ভাংগুড্ডা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে দুদক। ওই কর্মকত্র্রা নাম আবুল হোসেন। তিনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
এছাড়াও ঢাকার বাইরে বাগেরহাটের রামপাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ পায় হটলাইন ১০৬। তাৎক্ষণিক দুদক কর্র্তৃপক্ষ স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে খাদ্য সরবরাহকারীকে জরিমানা করে মোবাইল কোর্ট। সেথেকে গত ১ সপ্তাহ ঐ হাসপাতালে মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এভাবে দুদকের হটলাইনের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা ক্রমান্বয়ে রাজধানী থেকে উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ডিজি মুনীর চৌধুরী বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেই অভিযান চলছে। সামনে এ অভিযানের মাত্রা ও আওতা আরও বাড়ানো হবে। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভূমি অফিসের এসি (ল্যান্ড) সার্ভেয়ারের প্রতিবেদন পেতে লাগবে এক লক্ষ টাকার ঘুষ ! অন্যথায় জমি ক্রেতার বিপক্ষে প্রতিবেদন তৈরী করার হুমকিও আব্দুল হালিম। এরপর ঘুষ হিসাবে ৬০ হাজার টাকা গ্রহণকালে কতর্মকর্তাকে আটক করে দুদকের বিশেষ টিম। এর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের, বিআরটিএসহ তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে তিন কর্মকর্তাকে ঘুষগ্রহণকালে গ্রেফতার করে সংস্থাটি। দুদুক মহাপরিচালক মোহম্মদ মুনীর চৌধূরী বলেছেন, অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেই অভিযান চলছে। আগামীতে এসব অভিযানের আরও বাড়ানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ