Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজশাহীতে রেশ রেখে শেষ হলো আরবি ভাষা ও ইসলামি জ্ঞান প্রতিযোগিতা

| প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : শিক্ষা নগরীতে গত রবিবার হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমী জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন। প্রায়শই এখানে গণিতসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও গান, নাচ, আবৃতি মডেলিং অভিনয় বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজনও কম নয়। শিক্ষা নগরী হওয়ায় এখানকার শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে চলে আয়োজন। কিন্তু এবারের আয়োজন ছিল সম্পন্ন আলাদা। এর আগে কখনো হয়নি আরবি ভাষা ও ইসলামী জ্ঞান বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতা। অনেকটা কল্পনার বাইরে ছিল মাদরাসা পড়–য়া ছেলে মেয়েদের নিয়ে এমন এক অনন্য আয়োজন হতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও আর পত্রিকার পাতায় দেখা গেছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘‘ইয়েস কার্ড’’ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন। এমনটি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কখনো হয়নিতো বটেই। তাদের নিয়ে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে চালানো হয় নেতিবাচক প্রচার প্রচারনা। এরই বিপরীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যে কোন অংশে কম নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষে অনেক ভাল অবদান রেখে চলেছে। তারই জানান দিতে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন ব্যাতিক্রম অথচ বাস্তবধর্মী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। যার রুপকার হচ্ছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ। মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন আয়োজনের চিন্তা ভাবনা গুলো শেয়ার করেন সংশ্লিষ্টজনদের সাথে। তারা সবাই এক ব্যাক্যে তার এমন মহৎ উদ্দেশ্যকে সাধুবাদ জানান। উপর মহল হতে মেলে সবুজ সংকেত। শুরু হয় সারা দেশের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরবি ভাষা ও ইসলামী জ্ঞান বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতার আয়োজন। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাদরাসার তৃনমূল পর্যন্ত চলে যায় নির্দেশনা। বিষয়টা সাড়া ফেলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রথম থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এরপর জেলা পর্য্যায় থেকে ইয়েসকার্ড নিয়ে বিভাগীয় পয্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। বিভাগীয় পর্য্যায়ের আয়োজন গুলো হয় জাঁকজমকপূর্ণভাবে। যা বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। এসব আয়োজন শিক্ষামন্ত্রী, সচিব, ইউজিসির কর্মকর্তাবৃন্দসহ সুধিজন উপস্থিত হয়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে ঢাকায় যাবার ছাড়পত্র অর্থাৎ ইয়েসকার্ড তুলে দেন। এমন সব মেহমানদের কাছে পেয়ে গর্বিত ও অনুপ্রানিত হয় শিক্ষক ও অংশগ্রহনকারীরা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত তার যথার্থতা মেলে। সম্মানীত বোধ করে। প্রতিযোগিতার বিচারক অতিথিরা খুশী হন এমন আয়োজন ও মেধাবীদের পেয়ে। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যে কোন অংশে কম নয় তার প্রমান মেলে। ছেলে মেয়ে সবার অংশগ্রহন প্রতিযোগিতাকে প্রানবন্ত করে তোলে। যার রেশ মেলে রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিযোগিতা শেষের দিন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজন বছর বছর করার অনুরোধের মধ্যে দিয়ে। বিভাগীয় পর্যায়ের আয়োজন প্রায় শেষ। এখন খুব শীঘ্রই ঢাকায় হবে বিভাগীয় পর্যায়ের ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিযোগিদের নিয়ে চুড়ান্ত রাউন্ড। এরপর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। থাকবেন দেশের বিশিষ্টজনরা। চুড়ান্ত রাউন্ড নিয়ে এখন ব্যাস্ত আয়োজকরা।
রাজশাহী বিভাগের চুড়ান্ত রাউন্ডের জন্য নগরীর প্রানকেন্দ্রর একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন ছিল দৃষ্টিনন্দন। ভিতরে ও বাইরে সাজানো হয়েছিল নানা ধরনের ব্যানার ও ছবির বিলবোর্ড দিয়ে। যা পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভেতর থেকে ভেসে আসছিল প্রতিযোগিদের কেরাত, আরবি ভাষায় বক্তব্য ও জ্ঞানের কথা। কানায় কানায় হল ভর্তি দর্শক শ্রোতাতো বটে। বাইরেও এর রেশ ছিল। ছেলে মেয়েদের কন্ঠে ইসলামী জ্ঞান ভাষা সাহিত্য ব্যকারন কেরাত এবং সাধারন জ্ঞানের প্রশ্নের উত্তর দূঢ়চিত্তে দেবার ব্যাপারটি ছিল লক্ষ্যনীয়। মারহাবা মারহাবা বলে উৎসাহিত করছিলেন উপস্থিতিরা। কোথাও ছিলনা কোন বিশৃঙ্খলার চিহৃ। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতারাও ছিলেন তৎপর। যার ফলে সবার সহযোগিতায় এমন আয়োজন ভালভাবে শেষ হয়। রাজশাহী বিভাগ থেকে ইয়েসকার্ড পেয়েছে তিনজন মহিলাসহ তের জন শিক্ষার্থী। এদের হাতে ইয়েস কার্ড তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। মঞ্চে ছিলেন নওগা নামাজগড় কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মওলানা আব্দুস সাত্তার। রাজশাহী মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মওলানা মোকাদ্দাসুল ইসলামসহ আদর্শ মানুষ তৈরীর কারিগররা। প্রধান অতিথির ভাষণের পর ভিসি আহসান উল্লাহর যেন মিশে যান সবার সাথে। উপস্থাপকের হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নিজেই তারুন্যে ভরা উপস্থাপনা করে পুরো অনুষ্ঠান স্থলকে প্রানবন্তময় করে তোলেন। ফলে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান রুপ নেয় আনন্দ আর উৎসবের। অনুষ্ঠান শেষে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিযোগিতা নিয়ে অনেক কথা বলেন। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে এদেশের আলেম উলামা মাশায়েখের সংগ্রামের ফসল। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাণ ফিরেছে। একে সবাই মিলে সহযোগিতা করে বাস্তব ভিত্তিক চিন্তার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে হবে। আমূল পরিবর্তন নয় বরং গঠনমূলক পরিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশে ইসলামী শিক্ষা প্রসারের এ মাধ্যম। মাদরাসা হতে প্রকৃত জ্ঞানী আলিম তৈরী করতে হবে। যারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পবিত্র কোরআন হাদীসে আলিমদের মর্যদার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী মর্যদা দেয়া হয়েছে। এটা ধারন করতে হবে। এমন আয়োজনের ব্যাপারে বলেন প্রতিযোগিতা জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। শানিত করে চিন্তা ও মেধার গতিকে। লেখা পড়ার পাশপাশি জ্ঞান আহরন ও বিকাশের জন্য এমন প্রতিযোগিতা আবশ্যক। নইলে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে। তাদের মেধার বিকাশ ও স্বীকৃতির জন্য এসব করা হচ্ছে। প্রথমবারের মত এমন আয়োজন থেকে প্রাপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। আয়োজন সফল করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ