Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতিকে দেশ ত্যাগে চাপ দেয়া হচ্ছে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর পর এখন দেশত্যাগে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গুন্ডামির মাধ্যমে জোরপূর্বক এক মাসের ছুটি দিয়ে গোটা বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়েছে সরকার। যেভাবে তাকে নাজেহাল করা হয়েছে, যেভাবে বিচার বিভাগের সম্মান, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নস্যাৎ হয়েছে তাতে বিচার বিভাগের সম্মান ও ভাবমূর্তি বলে কিছু অবশিষ্ট রইলো না। গতকাল (শনিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আসলে প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার এটি একটি প্রথম পদক্ষেপ। এখন নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই। সব বিভাগের ওপরই একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল শেখ হাসিনার। মানুষের বিচার প্রার্থনার শেষ আশ্রয় স্থলটুকু আর থাকলো না। এর ফলে আগামী দিনের সকল রায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ হবে বলে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রধান বিচারপতিকে হুমকি দিয়ে ছুটি নিতে বাধ্য করা অথবা ছুটির নামে জালিয়াতি করা হয়েছে সেটি নজীরবিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবতার জন্য নয় প্রধানমন্ত্রী ক্রুয়েলিটির কারণে পুরস্কার পেতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। কেননা দেশে এখনো বহু মানুষ ও বিএনপি নেতাকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী প্রধান বিচারপতির ছুটি প্রসঙ্গে বলেন, প্রধান বিচারপতির সাথে এই আচরণের পর এই সরকারের দুঃসহ দৌরাত্মের বিরুদ্ধে সকলে মিলে সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের লোকদেরসহ ন্যায় বিচার পাওয়ার আরা কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। সরকারের নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার শিকার হবে সরকার বিরোধীরা। দেশকে স্থায়ী দুঃশাসনের বজ্রআটুনিতে বেঁধে ফেলা হলো। বিচার বিভাগের ওপর আরো নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ন্যায় বিচারের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়া হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঘটনায় গোটা বিচার ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হলো। তিনি বলেন, একজন সুস্থ ব্যক্তিকে অসুস্থ বানিয়ে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার ইতিহাস আওয়ামী লীগের অনেক পুরনো। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হককে পাগল বানানো হয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ এর কত নেতাকেই অসুস্থ বানিয়ে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতিকেও তারা আওয়ামী স্টাইলে অসুস্থ বানিয়ে এখন বিদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে। বাস্তবে প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। গত পরশু তিনি যখন মন্দিরে গেছেন তখন তার সাথে যাদের দেখা হয়েছিল তারা পরিস্কার করে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তার বাসভবনে দেখা করে গণমাধ্যমকে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠিয়ে এখন দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্য গত দু’দিন ধরে সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা দেখা করে তাঁর ওপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করছেন। অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বারবার প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করার চেষ্টা করলেও পুলিশি বাঁধায় দেখা করতে পারেনি।
‘কোনো সমস্যাই দেশের অগ্রগতি থামাতে পারবেনা’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ কথাতো তিনি বলবেনই, কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী দলের চিন্তা ও বিশ্বাসসহ গণতন্ত্রই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মনঃপীড়া ও তার ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র সমস্যা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ রাষ্ট্রের স্বাধীন স্তম্ভগুলিকে কঠিন কুঠারাঘাতে উপড়ে ফেলে এখন প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার আধিপত্যের রঙিন অগ্রগতি ও ক্ষমতাসীনদের লোভ লালসার অগ্রগতিতে জাতীয় সম্পদ লোপাট হতে আর কোনো বাধা থাকার তো কথা নয়।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের ঋণ চুক্তি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, নানা শর্তের বেড়াজালে ভারতের সঙ্গে তৃতীয় ঋণের ৪৫০ কোটি ডলারের (৩৬ হাজার কোটি টাকা) চুক্তি করেছে সরকার। ভারত থেকে লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় নেয়া আগের দুটি ঋণের (তিনশ’ কোটি ডলার) সার্বিক কার্যক্রম সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে থাকলে পুনরায় একই ধরণের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ আগের দুটি প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২০১৬ সালে চুক্তি হওয়া দ্বিতীয় ঋণের ২০০ কোটি ডলার এখনো ছাড় হয়নি। আর প্রথম ঋণের ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে সাত বছরে ছাড় হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সুতরাং ভারতের সঙ্গে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আবারো কঠিন শর্তে যে ঋণ চুক্তি করা হয়েছে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কারণ অতীতে ভারতের সাথে ঋণ চুক্তিতে কঠিন শর্ত আরোপ করায় প্রকল্পগুলো এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ঋণের শর্তে বলা হয়েছে বাস্তবায়িতব্য সরবরাহ প্রকল্পের ৭৫ ভাগ পণ্য অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। পাশাপাশি প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ হতে হবে সেই দেশ থেকে। এছাড়া ভৌত অবকাঠামো প্রকল্পের ৬৫ ভাগ পণ্য কিনতে হবে ভারত থেকে। এছাড়া বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পে ভারতের ঠিকাদার নিয়োগের শর্ত রয়েছে। আর প্রকল্পগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণ, দরপত্র প্রণয়ন, প্রকল্পের নকশা তৈরি এবং দরপত্র চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। বিভিন্ন দেশের ঋণের তুলনায় এ ঋণে শর্ত বেশি এবং পরিশোধের সময়সীমাও কম। পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে এটি স্বস্তিকরও নয়। এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘস্থায়ী হবে। শুধু তা-ই নয়, পরোক্ষভাবে ঋণের সুদের হার আরো অনেক বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে একটি প্রবাদ মনে পড়ে যায়-‘যার শিল তারই নোড়া, তারই ভাঙ্গি দাঁতের গোড়া’।
‘সার্বভৌমত্বের নামে আমরা অন্যদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবো না’ দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের এই বক্তব্য আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তাহলে কি তিনি সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে অন্য দেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে চাচ্ছেন? জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সার্বভৌমত্ব সংহত রেখেই অন্য দেশের সম্পর্ক ও জোট গঠন করেছিল।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, বিলকিস জাহান শিরিন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ