Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রায়পুরে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ক্লিনিকের ছড়াছড়ি

| প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হারুনুর রশিদ, রায়পুর (ল²ীপুর) উপজেলা থেকে : রায়পুর পৌর শহরসহ উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নের ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে অধিকাংশেরই নেই লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এমনকি সরঞ্জামাদি। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভুয়া বিশেষজ্ঞ-সার্জারি চিকিৎসক, এক্স-রে, প্যাথলজি, সনোলজিস্ট টেকনিশিয়ান, নার্স ও আয়ার ছড়াছড়ি। জটিল রোগের অপারেশনেও পিছিয়ে নেই বাহারি পদবির বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নামধারি এসব ভুয়া চিকিৎসক। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালরা চিকিৎসকদের কক্ষ থেকেই রোগীদের প্রভাবিত করে নিয়ে যায় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে।
অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষার উন্নত ব্যবস্থা নেই! এমন প্রশ্ন উঠিয়ে চিকিৎসকদের দালালচক্র রোগীদের সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। এতে করে ঐ চিকিৎসকরা ৫০ থেকে ৬০% পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের কমিশনের বিষয়টি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও রোগীরা এ ক্ষেত্রে অসহায়। এসব অবৈধ চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে অসাধু ক্লিনিক মালিক ও ভুয়া সার্টিফিকেটধারী ডাক্তাররা। সেই সাথে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে নানা অনিয়ম কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিরীহ রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শহরের মাতৃছায়া হাসপাতাল, মর্ডান হাসপাতাল, জনসেনা হাসপাতাল, সেবা হাসপাতাল, মেঘনা হাসাপাতাল ও মেহেরুননেচ্ছা হাসপাতালসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১০টি প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। ফরিদ ডায়াগস্টিক, মা ও শিশু ডায়াগস্টিক, হেলথ কেয়ার ডায়াগস্টিক, রীমর্টাস ডায়াগস্টিক, স্কয়ার ডায়াগস্টিক সেন্টার, নীরাময় ডায়াগস্টিক সেন্টারসহ ১৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ও ৮টি ক্লিনিক রয়েছে। অপরদিকে ৭৫টি দন্ত চিকিৎসাকেন্দ্র ও সহ¯্রাধিক ঔষধের ফার্মেসী রয়েছে। ৭৫টি দন্ত চিকিৎসালয়ের মধ্যে অনুমোদন আছে মাত্র ৪টির। হাসপাতালগুলোতে ১০টি করে বেডের অনুমতি থাকলেও অধিকাংশগুলোতেই ২০ থেকে ৩০টি বেডও বসানো হয়েছে। প্যাথলজিগুলোতে নেই ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান। রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক উপকরণ থাকার কথা। দক্ষতা ও পরীক্ষার ধরণ অনুযায়ী জনবল থাকতে হবে। যেমন- আলট্রাসনোগ্রাম করবেন এমবিবিএস সনদ প্রাপ্ত চিকিৎসক, এক্সরে করবেন রেডিওগ্রাফি টেকনোলজিস্ট কিন্তু রিপোর্ট লিখবেন এমবিবিএস সনদ প্রাপ্ত চিকিৎসক।
প্রতিটি কাজের জন্যই নির্ধারিত লোক থাকার কথা। কিন্তু রায়পুরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে শ্রেণীভিক্তিক দক্ষ লোকজন নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতারকরা নামিদামী ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে প্রায় ৫ লাখ জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসেবায় ৫০ শয্যার একটি মাত্র সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এতে ডাক্তার সঙ্কটসহ রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার কয়েকটি পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এ হাসপাতালটি। এতে বেশি অনিয়ম করছে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডাক্তাররা।
রোগী দেলোয়ারা বেগম ও হামিদ জানান, কয়েক দিন আগে আমার জ্বর ও পেটের ব্যাথা নিয়ে শহরের ফরিদ ডায়াগস্টিক সেন্টারের ডাঃ ফরিদকে দেখায়। এতে তিনি আমাদের কয়েকটি পরীক্ষা দেয় এবং তার হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে বলে। পরে তাঁর হাসপাতালের পরীক্ষা করতে গেলে ওই সব পরীক্ষাগুলো ১৪’শ টাকা দাবি করে। পরে তাঁরা সে পরীক্ষাগুলো বাহিরের একটি হাসপাতালে ৭’শ টাকায় করালে ডাক্তার ফরিদ পরীক্ষার কাগজ না দেখেই ভুয়া বলে ফেলে দেয়। বিষয়টি লিখিত ভাবে ইউএনওকে বলা হয়েছে।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, হাসপাতাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রায় সময় ভ্রম্যামান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জেল ও জরিমানা করে থাকি। ফরিদ ডায়াগস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রæত ওই ডায়াগস্টিকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ