Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্যকর হচ্ছে না ডিএফও’র নির্দেশ, ফের অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনকর্মী ও নৌ-পুলিশ ম্যানেজ
করে দু’সপ্তাহ ধরে সুন্দরবনে মাছ ধরার অভিযোগ
শরণখোলা উপজেলা সংবাদদাতা : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে পূর্ব সুন্দরবনের পোড়া মহলে (অগ্নিকাÐপ্রবণ এলাকা) আবারো মাছ ধরা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কতিপয় অসাধু বনকর্মী ও ধানসাগর নৌ-ফাড়ি পুলিশের যোগসাজোসে ওই এলাকার অন্ততঃ ৮/৯টি বিলসহ ছোট ছোট খালগুলিতে গত দু’সপ্তাহ ধরে অবৈধভাবে কৈ, ষোল ও মাগুরসহ অন্যান্য মাছ ধরা হচ্ছে। ওই এলাকা থেকে ৭/৮ মণ মাছ ধরে গত বুধবার (০৪ অক্টোবর) রাতে খুলনায় পাচার হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে পূর্ব সুন্দরবনে ওই পোড়ামহলে আবারো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটনার আশংকা রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলা সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশন আওতাধীন পচা কোরালিয়া, তুলাতলা, নাংলী, মুর্তির খাল, মাইডার খাল, নাপিতখালী, ছোট টেংড়া, বড় টেংড়া ও কলমতেজীর মাথায় বিল ও খালগুলিতেস বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে অবৈধভাবে কৈ, ষোল ও মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে থাকে একাধিক চক্র। ধানসাগর নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে ৫ হাজার এবং ধানসাগর স্টেশন, কলমতেজী ও নাংলী ফাঁড়ির কতিপয় দুর্নীতিবাজ বনকর্মীদের সাথে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা চুক্তিতে চক্রটি পোড়ামহলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে। তারা গত দু’সপ্তাহ ধরে ধুমধাম সহকারে মাছ আহরণ করছে। ওই এলাকা থেকে ৭/৮ মন মাছ ধরে গত বুধবার রাতে খুলনায় পাচারকালে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিএফও (পূর্ব বিভাগ) মাহামুদুল হাসানের নির্দেশে তাদেরকে ধরতে বনকর্মীরা উপজেলার পল্লীমঙ্গল এলাকায় অবস্থান নেয়। কিন্তু অভিযানের খবর ওই পাচারকারীদের কাছে চলে গেলে তারা বিকল্প পথে খুলনায় চলে যায়। এলাকার অনেকেইে এ অভিযানকে আইওয়াশ বলে অভিহিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক ধানসাগর ইউনিয়নের বটতলা, বান্দাঘাটা, উত্তর রাজাপুর এলাকার ব্যাক্তি জানান, বন সংলগ্ন বটতলা, রতিয়া রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর, দক্ষিন রাজাপুর, পশ্চি রাজাপুর, বান্দাঘাটা এলাকার অর্ধ-শতাধিক ব্যাক্তি ওই বিল ও খালগুলিতে প্রতিদিন বিকালে মাছ ধরতে প্রবেশ করে। সারা রাত কারেন্ট জাল পেতে মাছ ধরে আবার ভোর হওয়ার পূর্বেই তারা চলে আসেছে লোকালয়ে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। পরদিন সন্ধ্যার পর এ মাছ বটতলা বাজার সংলগ্ন জনৈক লতিফ পাহলানের বাড়িতে এনে ছোট ছোট ড্রামে করে মটরসাইকেলে করে পল্লীমঙ্গল, রামপাল অথবা মোড়েলগঞ্জ হয়ে খুলনায় চালান হচ্ছে। এদের নেতৃত্বে রয়েছে বটতলা এলাকার সরকার দলীয় প্রভাবশালী এক মৎস্য ব্যবসায়ী ।
প্রসঙ্গত, গত এক দশকে ওই এলাকায় পোড়ামহলে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে। মাছ ধরা জেলেরা মাছ আহরণ শেষে পরের বছর মাছ ধরা স্বার্থে লতা-পাতা ও গুল্মতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পরিস্কার করে আসে। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বনে। এছাড়া, জেলেদের ফেলে দেয়া বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে সাধারনতঃ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে।
সংশ্লিষ্ট ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা হুমাউন কবির ও ধানসাগর নৌ ফাড়ির ইনচার্জ বি,এম বদিউজ্জামান কোন ধরনের চুক্তির কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ যদি বনে প্রবেশ করে মাছ ধরে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, (ডিএফও) পূর্ব বিভাগ মাহমুদুল হাসান বলেন, অগ্নিকান্ড প্রবন এলাকায় মাছ ধরার বিষয়ে সংশ্লিস্ট স্টেশন ও ফাড়িগুলিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গোবিন্দগঞ্জে বন্যায় কৃষকের সর্বনাশ দশ খাতে ক্ষতি প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৭৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থসহ ১০টি খাতে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ৫৮ হাজার কৃষক পরিবারের ফসল বিনষ্ট হয়েছে রোপা আমন সহ অন্যান্য ফসলে ৯৪ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিবরণে জানা গেছে। অপরদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে কৃষিতে ক্ষতি ৭৮ কোটি ৭৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯শ’ ১০ টাকা। সব মিলে এবারের বন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে ১০টি খাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ১৩২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ১৩৮ টাকা। এর সাথে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব সমন্বয় করলে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪৮ কোটি ২৬ লক্ষ ৮০ হাজার ২২৮ টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ বন্যায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনগড়া ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তৈরী করেছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর কাটাখালী পয়েন্টে বিপদ মুক্ত পানির স্তর (লেভেল) ২০.১৫ সেন্টিমিটার। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় কাটাখালী পয়েন্টে পানি প্রবাহের স্তর ছিল ২০.৭৬ সেন্টিমিটার, অর্থাৎ বিপদ সীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপরে। এবারের বন্যায় করতোয়া নদীর কাটাখালী পয়েন্টে পানি প্রবাহের স্তর (লেভেল) ছিল ২০.৯১ সেন্টিমিটার এবং বিপদ সীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যাহা ১৯৮৮ সালের রেকর্ড অতিক্রম করে ১৫ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। বন্যায় এ উপজেলায় ১০জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১জন সাপের কামরে, ১জন বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে এবং ৮ জন পানিতে ডুবে মারা যায় বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানাযায়। এক্ষেত্রেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডিফরমে ৭জন মৃত্য ও ১জন নিঁেখাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ০৩ অক্টোবর উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সংগৃহীত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অফিসের ১৯-০৯-২০১৭ বিকাল ৪টা ১৯মিনিটে ডিজাস্টার ফরম এর নির্ধারিত ছকে দেয়া তথ্য মতে ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ৪৬০.৪২ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের মধ্যে ২৫০ বর্গ কিঃমিঃ এলাকা বন্যা কবলিত হয়। বন্যা কবলিত এলাকাগুলো হচ্ছে শিবপুর, হরিরামপুর, কোচাশহর, ফুলবাড়ী, কাটাবাড়ী, রাখালবুরুজ, মহিমাগঞ্জ, সাপমারা, কামারদহ, শালমারা, নাকাই, দরবস্ত, তালুককানুপুর ও গুমানীগঞ্জ ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ০৬, ০২, ০৪ ও ০৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ সব এলাকায় ৭২ হাজার ৭৫০টি পরিবারের ২লক্ষ ৭৪ হাজার ৫০৮ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্য সূত্র মতে কাঁচা পাকা ঘরবাড়ী খাতে ৬ কোটি ৮৮লক্ষ ৭৫হাজার টাকা, কৃষি খাতে ২৪৭০ হেক্টরে প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৮০০ কেজি ফসল উৎপাদন হিসাবে প্রতি কেজি ফসলের দাম ৩০টাকা ০.৮৫ পয়সা ধরে ২১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৭৫হাজার ৮৯০ টাকা এবং ৮৮৬০ হেক্টরে প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৮০০ কেজি ফসল উৎপাদন হিসাবে প্রতি কেজি ফসলের দাম ২৩ টাকা ০.১৫ পয়সা ধরে ৫৭ কোটি ৪১ লক্ষ ৯০হাজার ২০ টাকা। বিদ্যুৎ খাতে ৯ লক্ষ টাকা, মসজিদ ও মন্দির খাতে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, কাঁচা পাকা রাস্তা ও ব্রীজ কার্লভাট খাতে ৪২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা, পরিবেশ খাতে ১২ লক্ষ টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাতে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা, হস্ত চালিত নলকূপ খাতে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, শৌচাগার খাতে ৫৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও মৎস্য খাতে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ ৬০ হাজার ২২৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে কৃষি খাতে রোপা আমনে ৮৮৫০ হেক্টর জমির প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৮০০ কেজি চাউল উৎপাদন হিসাবে প্রতি কেজি চাউলের দাম ৩৪ টাকা ধরে ৮৪ কোটি ২৫ লক্ষ ২০হাজার টাকা এবং শাকসবজিতে ২৭০ হেক্টরে প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৮০০ কেজি ফসল উৎপাদন হিসাবে প্রতি কেজি শাকসবজির দাম ২৫ টাকা ধরে ১০ কোটি ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য ও বাজার মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় ১২৭ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট হয়েছে কৃষকের।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম ৪ অক্টোবর জানান, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনটি এখনো চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। কাজ চলছে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। অপরদিকে স্মরনকারের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮ হাজার কৃষক পরিবারের জন্য পুনর্বাসনে এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ১০০জন কৃষকের মাঝে এক বিঘা জমিতে আবাদের জন্য পোপা আমনের চারা বিতরন। ২০১৭-১৮ বর্ষে খরিপ-২, রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে মাসকলাই, গম. ভ‚ট্টা, সরিষা, বিটি বেগুন ও মুগ উৎপাদনে প্রনোদনা হিসেবে ৫৮ লক্ষ ১৩ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। যাহা ৪ হাজার ৭৬০ জন কৃষকে ১ বিঘা জমিতে আবাদের জন্য বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ