Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সরকারি ওষুধ

খুলনায় সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরবরাহ সঙ্কট

খুলনা ব্যুরো : খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার কলেজ ছাত্র মানিক (২৩) বাড়ির কাজের সময় সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন-১ এ ভর্তি করা হয় তাকে। একমাত্র উপার্জনক্ষম দিনমুজুর পিতার পক্ষে সাপে কামড়ের চিকিৎসা করানো দুরুহ। অথচ খুমেক হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই হাতে গোনা দুই/একটি ছাড়া সব ওষুধই তাকে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। শুধু মানিক নয় একই অবস্থা গত ১৫দিনে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে খুমেক হাসপাতালে আসা ২৭জন রোগীর। বিষক্রিয়ার জন্য একমাত্র ওষুধ এন্টিভেনর আইসিউতে থাকার কথা বললেও ওয়ার্ডে রোগীরা পাচ্ছে না কোন ওষুধ। খুলনা অঞ্চলে বেড়েছে সাপে কামড়ের ঘটনা।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে দেখা গেছে, গত ১৫দিনে এখানে ২৭জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে ২১জন পুরুষ ও নয়জন মহিলা। এরমধ্যে বিথি শেখ (২৬), ইসমাইল (২৫), আমিনুর (৩৫), মানিক (২৩), আজহারুল (৪০), রিয়াজ (৫০), শুশীল কুমার দেবনাথ (৫৬), হেমায়েত মৃধা, মঙ্গল, আলী আদনান, শুভ্রদেব হালদার, তাপসী (৩৫), খাদিজা (৫০), খুকুমনি (২৭), নাদিরা (৫২) ভর্তি আছেন খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন ৫, ৬, ৭ ও ৮ ওয়ার্ডে।
অনেকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবার অনেকে সরাসরি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসলেও তাৎক্ষনাৎ চিকিৎসা মেলে না খুমেক হাসপাতালে। হাতে গোনা ওমিপ্রাজল, ওসমিপ্রাজল, গ্রæপের কয়েকটি গ্যাসটিকের ট্যবলেট আর ইনজেকশন ছাড়া সাপে কাটা রোগীদের জন্য তেমন কোন সেবা নেই খুমেক হাসপাতালের। ওয়ার্ড ইনচার্জ ও অন্যান্য নার্সরা বলেছেন। ডাক্তাররা যে সকল ওষুধ লেখেন এরমধ্যে সাপ্লাই থাকা ওষুধ গুলো তাদের দেয়া হয়। বাকি ওষুধ না থাকার কারণে বাইরে থেকে কিনতে হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রচন্ড গরমের কারণে খুলনাসহ আশেপাশের এলাকায় গর্তের ভিতর থেকে বিভিন্ন ধরণের সাপ লোকালয়ে বেরিয়ে আসায় সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সাপের কামড়ে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই শ্রমজীবী হওয়ায় ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ মেটানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শরীরে বিষক্রিয়ার প্রতিরোধে ব্যবহৃত একমাত্র বিশেষায়িত ওষুধ এন্টিভ্যানম ইনজেকশন যার বাজার মুল্য ১০ হাজার টাকার বেশি। এদিকে, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে আইসিউতে ভ্যন্টিলেটর লাগাতে হয়। ২৪ ঘন্টা বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যন্টিলেটর খরচ ৩০ হাজার টাকার বেশি।
যশোর কেশবপুরের বাসিন্দা আলফাজ উদ্দিনের ছেলে আজহারুল (৪৫), যশোর ঝিকরগাছার জামাল বিশ্বাসের ছেলে আমিনুর (৩৫), যশোর বাঘারপাড়ার গণি মোল্লার ছেলে রিয়াজ (৫০) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দুই একটি ছাড়া তেমন কোন ওষুধ পাননি। খুমেক হাসপাতালের মধ্যে সরকারি সরবরাহ ওষুধ নিয়ে রোগীদের মডিসিন-১ এর ওয়ার্ড ইনচার্জ বিথিকা মালাকরসহ অন্যান্য নার্সদের প্রশংসা করেন ওয়ার্ডের রোগীরা চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারছে না। তবে সাপে কাটা রোগীদের জন্য ইনজেকশন না দিতে পারায় জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনছেন তারা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এসএম কামাল হোসেন বলেন, শাপের কামড়ের রোগীদের ইনজেকশন এন্টিভেনম যে একদম নেই তা নয়। মাঝে শুনেছিলাম ওষুধ নাই তারপর আমি ঢাকা থেকে কিছু ওষুধ আনিয়েছি। সংকটের কথা জানানেই, খোঁজ নিতে হবে। কাউকে সাপে কামড়ালে দড়ি দিয়ে কামড়ানো যায়গার বাধার রেওয়াজ প্রচলিত থাকলেও বিষয়টি সঠিক নয়। সাপে কামড়ালে ক্ষত যায়গা কোনভাবেই নাড়াচারা করা যাবে না। পায়ে কামড়ালে চেয়ারে বসিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ