Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন স্থানে নিহত ২ আহত ৪৫

হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ-ভাঙচুর : ৪ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যবিপ্রবির হলে ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা-গুলি-বোমাবাজি 
ইনকিলাব ডেস্ক : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হলে হামলায় ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাসসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা ও কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ’লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীর সদরঘাটে গতকাল (শুক্রবার) সকালে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত সুদীপ্ত বিশ্বাস রুবেল (২৯) নগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক। দলীয় কোন্দলের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। রুবেল ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপের নেতা। তাকে খুনের জন্য আ জ ম নাছিরউদ্দীন সমর্থিত ছাত্রলীগের কর্মীদের দায়ী করছে রুবেলের অনুসারীরা। তারা হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে যানবাহন ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। রুবেল নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকার বাবুল বিশ্বাসের পুত্র। সে তিনি সরকারি সিটি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন।
সদরঘাট থানার ওসি মর্জিনা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রুবেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে লোহার রড় দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। খুনিরা তার পরিচিত এবং দলীয় কোন্দলের জের বা পূর্বশত্রæতার জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
নিহতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, সকাল ৮টার দিকে রুবেলকে কয়েকজন যুবক বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তখন সে বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। পরে তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে কে বা কারা এ হত্যাকাÐ ঘটাতে পারে তা এখনও নিশ্চিত নয়। এই ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক করা যায়নি বলেও জানান ওসি মর্জিনা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রুবেলের মা বলেন, সকালে সে ঘুমাচ্ছিল। সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবক রুবেলকে ডাকতে আসে। পাশের বাসার এক মহিলা তখন তাকে ডেকে দেয়। ঘুম থেকে উঠে সে ওই যুবকদের সাথে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে বাসার অদূরে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। গুরুতর আহতাবস্থায় রুবেলকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈয়দ আফতাব উদ্দিন বলেন, সকাল ১০টার দিকে তাকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি জানান তার শরীরে একাধিক ফোলা জখম রয়েছে। ভারী কিছু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে সাত থেকে আটটি অটোরিকশা করে বেশ কয়েকজন যুবক দক্ষিণ নালাপাড়া মসজিদের কাছে নেমে হেঁটে রুবেলের বাসার দিকে যায়। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দও শোনা গেছে বলে জানান তারা। তাকে পিটিয়ে অচেতন করার পরও ওই যুবকরা অটোরিকশা যোগে এলাকা ত্যাগ করে। ওই যুবকের কয়েকজন সিটি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও জানান কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক রুবেল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। তার বন্ধুরা জানায় সিটি কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকেও নগর কমিটিতে ভাল কোন পদ পায়নি রুবেল। এনিয়ে তার মধ্যে কিছুটা হতাশা ছিল। পরে তাকে সহ সম্পাদক করা হয়। রুবেল ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রæপের অনুসারী ছিলেন।
রুবেলের বাবা বাবুল বিশ্বাস বলেন, তাকে রাজনীতি না করার জন্য অনেকবার বলেছি। সে কারও কথা শোনেনি। রাজনীতিই তার ছেলের জন্য কাল হল বলে মনে করেন তিনি। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। ময়না তদন্ত শেষে রুবেলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে রুবেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় সেখানে বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করা হয়। ৪টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। হঠাৎ মিছিল থেকে ভাঙচুর শুরু হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা আট দশটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ৪ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণ করে। কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, মিছিল থেকে বিক্ষুদ্ধ কিছু কর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও একটি গাড়িতে আগুন দেয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর ব্যুরো : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শহীদ মশিয়ুর রহমান হলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান গ্রæপের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা, গুলিবর্ষণ, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে হামলায় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাসসহ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতরা হলেন, শিক্ষার্থী সৌরভ হোসেন, মামুন হোসেন, ইদ্রিস আলী, তুহিন হাওলাদার, শরিফ হোসেন, রাসেল পারভেজ, তানভীর হোসেন, খায়রুল খন্দকার, মেহেদি হাসান মোহন, তৈয়বুর রহমান, নাসিম হাবিব, শাহিনুর রহমান, রায়হান উদ্দিন। কোড অব কন্ডাক্ট অনুযায়ী যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু ছাত্রলীগ এককভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে এই ক্যাম্পাসে তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এর আগে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একাধিকবার হামলা-পাল্টা হামলা হতাহতে ঘটনাও ঘটে। শিক্ষার্থী হত্যার পর বৃহস্পতিবার হলে বড় ধরণের হামলার ঘটনা ঘটলো। একটি সূত্র জানায়, যবিপ্রবিছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক মূলত দুই গ্রæপের নেতৃত্ব দেন। কোন্দলটা ক্যম্পাস দখলকে কেন্দ্র করে।
আহত শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কয়েকটি মাইকক্রোবাস নিয়ে যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে ক্যাম্পাসে যায়। তারা গেটের নিরাপত্তা রক্ষীদের জিম্মি করে একটি রুমে আটকে রাখে ও তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা শহীদ মশিয়ুররহমান হলে হামলা চালায়। যবিপ্রবি’র এক কর্মকর্তা জানান, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইল করলে তিনি রিসিভ করেননি। গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডিউটিরত কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা জানান, ক্যাম্পাসের পরিবেশ বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। বৃহস্পতিবার রাতে হলে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। পরে হলের শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন, পুলিশ এসে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ করে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে জানায়, কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে শহীদুল ইসলাম ওরফে হক ( ৫০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের ধলসা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাতিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন মন্ডল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাছেল আলী মন্ডলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গত কয়েক মাসে এই বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। এর সমাধানে প্রশাসনের সহায়তার কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তাতে বিরোধের অবসান হয়নি।
গতকাল সকালে ধলসা বাজারে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। এসময় উভয় পক্ষের লোকজন লাঠি-সোঁটা, বল্লম নিয়ে সংঘর্ষ শুরু করে। এতে ফলার আঘাতে শহীদুল ইসলাম হক নামের একজন নিহত হন। তিনি ছাতিয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন মন্ডল গ্রæপের সমর্থক বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে আহত ১৫ জনকে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। মিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান জানান, আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৫৫ পিএম says : 0
    এগুলো নিজেদের মধ্যে প্রাকটিস ম্যাচ চলছে। ব্যাপার না !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ