Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুমিল্লার বাজারে সবজির দামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

আড়তদার ও দোকানিদের সিন্ডিকেটে অস্থির বাজারদর

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : এবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে সবজি ও বিভিন্ন ফসলহানি ঘটেছে। রাস্তা-ঘাট চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় পরিবহন ভাড়াও বেড়েছিল। এসব ঘিরে বাজারে সবজিসহ নিত্যপন্যের দাম বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছিল। বন্যা পরিস্থিতি অনেক আগেই উন্নত হয়েছে। রাস্তাঘাটও মেরামত হয়েছে। সবকিছুই যখন স্বাভাবিক তখন কুমিল্লার বাজারগুলোতে সবধরণের সবজি ও নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। বাজারে সবজি ভরপুর। অথচ দাম নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সবজির এ দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ ক্রেতাদের। সরবরাহ কম, আড়তে দাম বেশি এমনসব অজুহাত দেখিয়ে গত দুই মাস ধরে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের অস্থির করে তুলেছে বিক্রেতারা। মুনাফালোভী সিন্ডিকেটধারী ব্যবসায়িরা ক্রেতাদের একরকম জিম্মি করে ইচ্ছেমতো সবজির দাম বাড়িয়ে বাজার অস্বাভাবিক করে তুলেছে। সাধারণ ক্রেতাদের দাবী, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করা হলে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে ফিরে আসবে। এখন বর্ষা বৃষ্টি হরতাল অবরোধ কিছুই নেই। অথচ কোন কারণ ছাড়াই কুমিল্লার বাজারগুলোতে গত দুই ধরে সবধরণের সবজি বেশি দরে বিক্রি করছেন দোকানিরা। বিশেষ করে সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার সবজির দাম অত্যধিক বেশি থাকে। কুমিল্লা নগরীর বাজারগুলোতে ইতিমধ্যে শীতকালীন সবজির কিছু আইটেম বাজারে এসেছে। কিন্তু দাম বেশি। ক্রেতারা কারণ জানতে চাইলে দোকানিদের একই কথা সবজির সরবরাহ কম আর আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ওই একই অজুহাতে গত দুইমাস ধরে সবজির বাজারে দাম চড়া রেখে চলেছে দোকানিরা। সবজির দরদাম নিয়ে বিক্রেতাদের সাথে কথা বললেই বুঝা যায় তারা দাম বৃদ্ধি চক্রের সদস্য। ক্রেতাদের সাথে তাদের হাবভাব এমন যে, ‘মন চাইলে একদরেই সবজি কিনুন, না হয় আসুন’..। বিক্রেতাদের এমন আচরণই বলে দিচ্ছে তারা সিন্ডিকেট করেই সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রন করছে।
গতকাল শুক্রবার নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, নিউমার্কেট, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীরবাজার, টমছমব্রীজ-রামমালা রোডের বাজার, মগবাড়ি মোড়ের বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিকেজি হিসেবে টমেটো ১২০ টাকা, শীম ১৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, করল্লা ৭০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, কচুমুখি ৪০-৫০ টাকা, কচুরলতি ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, কাকরোল ৭০ টাকা, মূলা ৪০-৫০ টাকা, কইডা ৮০ টাকা, জলপাই ১২০ টাকা, ধনিয়াপাতা ২০০ টাকা, কাচামরিচ ২০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস আগেও এসব সবজির দাম বর্তমান দরের অর্ধেক ছিল। অথচ তখন বন্যা পরিস্থিতির বিষয়টি আলোচনায় ছিল। আর এখন সবকিছুই স্বাভাবিক। আড়তেও আসছে প্রচুর সবজি। তারপরও বাজার নিয়ন্ত্রণ নেই দামের দিক থেকে। রাজগঞ্জ বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, গত দুইমাস ধরেই সবজির দাম বাড়তি। শীতের সবজি পুরোপুরি বাজারে না আসা পর্যন্ত নাম কমবে না। তবে সবজির দাম সপ্তাহে কিছুটা কমে আবার বেড়ে যায়। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে এগুলোর দাম এবং শীতের কিছু নতুন সবজির দাম বেশি। দোকানিদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কেননা আড়তেই পাইকারি দাম বেশি। তবে সবজি বিক্রেতারা দাবী করে বলেন বাজারে তাদের কোন সিন্ডিকেট নেই। কুমিল্লায় সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নিমসারের কয়েকজন আড়তদার ও রাজগঞ্জ বাজারের আড়তদাররা জানান, সবেমাত্র দুর্গাপূজা, ল²ীপূজা শেষ হয়েছে। এসময়ে সবজির দাম একটু বেশি থাকে। তবে এবারে সবজির দাম অন্যান্য বছরের তুলানায় দ্বিগুন বেড়েছে এটা সত্যি। তার কারন হিসেবে আড়তদাররা জানান, দেশের যেসব স্থানে সবজি উৎপাদন হয় সেখানে এবারে বন্যা হয়েছে। তাই সবজির ফলন কম হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কুমিল্লা অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি বাজারে ভরপুর হলে দাম আস্তে আস্তে কমে আসবে। এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, আড়তদার ও দোকানিরা মিলে সিন্ডিকেট করেই সবজির দাম বাড়িয়েছে। সবজির সরবরাহ কম আড়তদারদের এমন যুক্তি সঠিক না। কুমিল্লা অঞ্চলে সবসময় সবজির ব্যাপক ফলন হয়ে থাকে। কুমিল্লায় উৎপাদিত সবজিই দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে, চাহিদা মেটাচ্ছে। আর কুমিল্লার মানুষ বেশি দামে সবজি কিনছে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এবং অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান না হওয়ায় সবজি বাজার এখন নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কাছে আতঙ্ক ও অস্থিরতার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতির লাগাম প্রশাসনের কঠোরভাবে টেনে ধরা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ