পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1720346576](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোয়াইটগোল্ড নামে খ্যাত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের লক্ষাধিক গলদা চাষীরা এখন চরম বিপাকে। চাষের প্রারম্ভে রেনু পোনা নিয়ে চলে তেলেছমাতি কান্ড। দাদন ব্যবসায়ীদের কষাঘাত চলে পুরো চাষাবাদের সময়। ব্যাংক ঋণের কোন সুযোগ নেই তাদের। তদুপরি রয়েছে এনজিওদের চড়া সুদের প্রচন্ড চাপ। আর এখন ভরা মৌসুমে গলদার দাম কেজিতে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা কমে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ খাতের মাঠ পর্যায়ের সৈনিকদের দুর্দশা লাঘবে সরকারী কোন উদ্যোগ বা কর্ম পরিকল্পনা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে চিংড়ি চাষীদের হাজার হাজার পরিবার। বঙ্গোপসাগরের কোলে লালিত পালিত সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা খুলনা সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাটের জনপদে চিংড়ি চাষ এক সফলতার স্বর্ণ অধ্যয়। স্বাধীনতার পরে এ অঞ্চলে পাটকল সহ বিভিন্ন ভারী শিল্প গড়ে উঠলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারীদ্র বিমোচনে দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় শিল্প স¤্রাজ্যে যখন ধ্বস নামতে শুরু করে ঠিক তখন মাঠ চাষিরা ঝুঁকে পড়েন সমন্বিত মৎস্য চাষ প্রকল্পের দিকে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রায় ২০-২২টি উপজেলার গ্রাম গ্রামান্তরে চিংড়ি চাষিরা তাদের মৎস্য ঘেরে সোনা ফলাতে শুরু করে। প্রায় প্রতি বছর যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি হয় তার সিংহভাগ উৎপাদন হয় খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষিরা জেলায়। এ চিংড়ি চাষ এখন রীতিমত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক নতুন অর্থনৈতিক বিপ্লবের নাম।
সূত্রমতে, মাঠ পর্যায়ে ২০-২৫ শতাংশ জায়গা থেকে শুরু করে ২০-৫০ একর জমি নিয়ে কৃষকরা পৃথক পৃথক মৎস্য ঘের করে আসছে। প্রান্তিক গলদা চাষিদের জমির পরিমাণ কারো কারো ১ বিঘা থেকে ৫ বিঘা পর্যন্ত। প্রান্তিক চাষিরা যখন গলদা রেনু মৎস্য খামারে অবমুক্ত করে তখন থেকে শুরু হয় তেলেছমাতি কারবার। নদীর রেনুর কথা বলে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে হেচারীর রেনু। তাছাড়া ভারত ও থাইলন্ডের নিম্ন মানের কালোবাজারীর পোনা ঢুকছে এঅঞ্চলে প্রতিবছর। ফলে পোনা অবমুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক প্রান্তিক চাষিরাই প্রতারণার শিকার হয়ে প্রথম হোচটটি খায়। এরপর হাজার হাজার চিংড়ি চাষিরা ব্যাংক লোন না পেয়ে দারস্ত হয় মহাজন নামক দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা নির্ধারিত কমমূল্যে (দাদন ব্যবসায়ীদের বেধে দেয়া) চিংড়ি বিক্রির অঙ্গিকার নিয়ে টাকা লগ্নি করে থাকে। এছাড়া মাইক্রোক্রেডিটের নামে ভুঁইফোড় সব সমিতি এনজিও এসব প্রান্তিক চাষিদের কিস্তি ভিত্তিক ঋণ দিয়ে থাকে। মোট হিসাবে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ চড়া সুদে এসব সংস্থার কাছ থেকে চাষিদের বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে হয়। ফলে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে বিপনন পর্যন্ত সাপ্তাহিক কিস্তিতে প্রান্তিক চাষিদের ঋণের টাকা শোধ দেয়ার রিসাইকেলিং কর্মকান্ড চলতে থাকে। এতেই প্রান্তিক চাষিদের গলদঘর্ম অবস্থা। এরপর গলদা চিংড়ি বিপননের জন্য যখন প্রস্তুত, তখন মূল্য হ্রাস চাষিদের মাথায় আকাশ ভাঙ্গার নামান্তর মাত্র। বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক চাষি। লোকসানের মুখে এই মুহুর্তে তাদের নাওয়া খাওয়া নেই। গত বছর দশ গ্রেডের চিংড়ির মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৯৫০ টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। পঞ্চম গ্রেডের মাছ গত ৩-৪ মাস আগে ছিল ১১শ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ফলে প্রান্তিক চাষিদের জন্য এটি একটি দুর্যোগ। খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষিরা জেলায় প্রায় লক্ষাধিক চিংড়ি চাষি অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করছে। সাতক্ষীরার আশাশুনির চিংড়ি চাষী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ৩ বিঘার ওপর আমার একটি চিংড়ি ঘের আছে। পোনা ছাড়া থেকে শুরু করে মাছের খাবার দিয়ে এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী এবার আমার ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। মাছেরও অবস্থা ভাল। কিন্তু দাম কম। তাই এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। যাকে বলে পানির দামে। খুলনার থুকড় গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী শাহ ইফতেখার আলম বাবু বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আমার চিংড়ি প্রকল্প। এ মাসে যে বেচা কেনা হয়েছে তা অর্ধেক বলা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হবে নিশ্চিত।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ৩ জেলায় প্রায় লক্ষাধিক চিংড়ি চাষী এবার চিংড়ি চাষ করেছে। কিন্তু সবাই এখন ঝুঁকিতে। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, বাগেরহাট এখন কুয়েত। অর্থাৎ চিংড়ির টাকায় এ অঞ্চলের ৭৫-৮০ শতাংশ মানুষ স্বাবলম্বী। অধিকাংশ লোকেরেই চিংড়ি ঘের রয়েছে। অনেকেই ব্যাংক এনজিও দাদন ব্যবসায়ী সমিতি সহ আত্মীয় স্বজনের কাছে ঋনগ্রস্ত। চিংড়ির মূল্য কমে যাওয়ায় তারা এখন চরম হতাশায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।