Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের চরম ভগ্নদশা ২৯ কি.মি. রাস্তা বেহাল : বাড়ছে যাত্রীদের দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে আবুল কালাম আজাদ : সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভগ্নদশায় ঝাঁঝড়া হয়ে গেছে প্রাচীনতম এ সড়কটির বুক। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ভাঙা এ সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যাত্রীদের কাছে নরক হিসেবে দেখা দিয়েছে। অসংখ্য খানাখন্দের কারণে যাত্রীসাধারণের দুর্গতি চরম আঁকার ধারণ করেছে। সংস্কারের নামে কিছু স্থানে পিচ তুলে ইট-সলিংয়ের কারণে উপকারের বদলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সচেতন যাত্রীরা এ সড়ক দিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সড়কের করুণ অবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। চলাচলকারী চার উপজেলার দুর্ভাগা জনসাধরণের এ সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ সংস্কার ও প্রশস্ততা দাবি জানান। স্থানীয় আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সমন্বয় সভা ও মোরার বাজারসহ একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন অবশ্য আগামী শীত মৌসুমে ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের প্রশস্তকরণ ও সংস্কার কাজ হবে।
সরেজমিন পরিদর্শকালে দেখা গেছে, সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ ২৯ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে এই সড়কের সিলাম ইউনিয়নের শেখপাড়া-টিকরপাড়া সংলগ্ন, সিলাম মাঝপাড়া জামে মসজিদের সামন, বিবির মোকাম থেকে আনন্দবাজর (আখড়াবাজার), চারকাটি রাস্তারমূখ, সিলাম ইউনিয়ন পরিষদের সামন, কলা বাগানবাজার, বটেরতল, জালালপুর ইউনিয়নের ডাকির মহল জামে মসজিদের সামন, আজমতপুর, পিড়িলা-কোনা, দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের নশিওরপুর, নর্থ-ইস্ট বালাগঞ্জ কলেজের সামন, খাঁপুর রাস্তারমুখ, মোরার বাজার, চাম্পার কান্দি, জামালপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে প্রসূতি নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের। দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে সড়কটির সংস্কার কাজের ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদাবি জানান।
জান যায়, ২০১৪ সালের দিকে এ সড়কের দায়সারা সংস্কার হলেও মোরারবাজার থেকে স্থানীয় জান মোহাম্মদ খালের বেইলি ব্রিজ পর্যন্ত সংস্কারহীন রাখা হয়। এ ছাড়া এ সড়কে কিছু স্থানে পিচ তুলে গত বছর ইট সলিং করা হয়। এতে উপকারের বদলে কষ্ট মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী জনসাধারণ সংস্কারের দাবিতে ইতোমধ্যে মানববন্ধন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে এ সড়কের করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেট শহরের সাথে এ এলাকার জনসাধারণের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের এ করুণ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করা উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আলাপকালে এ সড়কে চলাচলকারী ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন বালাগঞ্জ উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মো. ছালামত খান, গহরপুর রিকশা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নেছাওর আলী বলেন, বড় বড় গর্ত আর ভাঙনের কারণে প্রতিদিন গাড়িতে কাজ করাতে হয়, গাড়ি বিকল হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্থায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে করে আমাদের নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। অনেক সময় বাকবিতর্ক এবং যাত্রীদের সাথে অযথা ঝগড়া বিবাদ করতে হচ্ছে।
ইর্থইস্ট বালাগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোস্তফা মিয়া, জানান, গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এ সড়ক দিয়ে চারটি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও চাকরিজীবীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন সড়ক ভাঙা থাকায় বাস-চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই।
গহরপুর জামেয়া’র প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুছলেহুদ্দিন রাজু বলেন, এ সড়কের অবস্থা অনেক দিন থেকে নাজেহাল। সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম শামীম বলেন, আমরা তিন ইউনিয়নবাসী চরম অবহেলিত। আমাদের ভোটের অধিকার থাকলেও নাগরিক হিসেবে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন যাবত হাজার হাজার মানুষ সীমাহীন কষ্টের স্বীকার এ রাস্তার কারণে। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন।
দেওয়ানবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দুদু মিয়া বলেন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা ও অনিয়মের কারণে এ সড়কে যাত্রী সাধারণ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব ও সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদ অ্যাড. জুয়েল আহমদ জানান, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এ সড়কের করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রী সাধারণের কাছে এ সড়ক এখন নরক হয়ে পড়েছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, সাবেক মন্ত্রী এমএজি ওসমানীর এপিএস ও স্কটল্যান্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহনুর চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ সড়ক অবহেলায় রয়েছে। দেশে এসে নিজের চোখে সড়কের এ করুণ পরিণতি দেখলাম। আমরা প্রবাসীরা নিজের জন্য কোনো কিছু চাই না, দেশ ও এলাকার উন্নয়ন চাই। দ্রæত এ সড়কের সংস্কার করা হোক।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগ সিলেটের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, এ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মেরামতের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ