পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আজ ১০ মহাররম, রোববার পবিত্র আশুরা। এদিনে কারবালা প্রান্তরে সাইয়েদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) হক ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এবং ইসলামের শত্রæ ও বাতিল ইয়াজিদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে নির্ভীকভাবে শাহাদতের অমীয় সুধা পান করে ইসলামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে দাঁড় করিয়ে গেছেন (সুবহান্নাল্লাহ)।
আর এজন্যই আল্লামা ইকবাল (রহ.) বলেছেন, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ’। এ মহান দিনে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদতের মাধ্যমে ইসলামকে জিন্দা রাখার জন্য যে রক্ত প্রবাহ শুরু হয়েছিল নতুন নতুন ইয়াজিদ বাহিনীকে প্রতিহত করতে সে রক্ত প্রবাহের ধারা অব্যাহত থাকবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। ঈমানের বলে বলীয়ান এবং সত্য ও ন্যায়ের সাধক হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) হক ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে অন্যায় ও সত্যের বিরুদ্ধে থেকে নির্ভীকভাবে শাহাদতের অমীয় সুধা পান করে পৃথিবীর বুকে চির অমর হয়ে আছেন। যতদিন পৃথিবীসহ আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকূল থাকবে, ততোদিন তার নাম ও কীর্তি পৃথিবীজুড়ে অভিনন্দিত ও অনুকরণীয় হতে থাকবে। সাইয়েদেনা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) প্রমাণ করে গেছেন, অন্যায় ও অসত্যের কাছে কখনও মাথা নত করা যাবে না।
সত্য তথা হক প্রতিষ্ঠায় মাথা উঁচু করে প্রাণ উৎসর্গ করলে আদর্শ প্রতিষ্ঠাসহ জগতের বুকে চির অমøান ও উজ্জ্বল থাকা যায়। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার মাধ্যমে এ শিক্ষাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা মুসলিম উম্মাহর অগ্রযাত্রায় নবতর চেতনার উন্মেষ এবং রাব্বুল আলামীনের প্রদর্শিত পথে চলার ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকারের জন্য যুগে যুগে ইসলামের উত্থানে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। আশুরার দিনে কারবালা প্রান্তরে প্রতিটি ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণময় ও তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আছে। তাইতো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপলব্ধি ছিল ‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা।’ কারবালার মত লড়াই যুগে যুগে চলতেই থাকবে। এখনও চলছে মুসলিম দেশে দেশে।
পবিত্র আশুরার দিনটি বৈশিষ্ট্যময় হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হচ্ছে এদিনে জগৎ সৃষ্টির সূচনা হয়। এ দিনেই (শুক্রবার) মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস হবে। এদিনেই হযরত আদম (আ.)কে জান্নাত থেকে পৃথিবীর বুকে অবতরণ করানো হয়। এ দিনেই আল্লাহ তায়ালা তার তওবা কবুল করেছিলেন। হযরত নূহ (আ.) এদিনেই মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়ে নৌকা থেকে পৃথিবীর বুকে আবার অবতরণ করেছিলেন। এদিনে হযরত ইদ্রিস (আ.) সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করেন। হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘদিন কঠিন রোগ ভোগের পর এদিনে রোগমুক্ত হন। এদিনেই হযরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে বের হয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। আশুরার দিনে হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ তায়ালার অশেষ কুদরতে নমরুদের অগ্নিকুÐে ৪০ দিন অবস্থান করে সুস্থ অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এদিনে হযরত দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল হয় এবং হযরত সোলায়মান (আ.) বাদশাহী লাভ করেন। ১০ মহাররমে হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.) এর সাথে মিলিত হন। আশুরার দিনেই হযরত মূসা (আ.) আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলেছিলেন। এদিনেই আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইল স¤প্রদায়কে ফেরাউনের বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করেন এবং লোহিত সাগরে ফেরাউন ও তার বাহিনীর সলিল সমাধি ঘটান। পবিত্র আশুরার দিনেই আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা (আ.)কে শত্রæদের হাত থেকে রক্ষা করে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন। বিভিন্ন বর্ণনা মতে, এদিনে ২ হাজারের মত পয়গমম্বরগণের জন্ম হয়েছিল, এবং এদিনেই উনাদের দোয়া কবুল হয়েছিল।
আশুরার দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার দিন। ১০ মহররমের পূর্ব দিনের দিবাগত রাত পবিত্র আশুরার রাত। এ রাতে সকল নবীগণের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আশুরার এ রাতে মহান আল্লাহতালা উম্মতে মোহাম্মদীগণের দোয়া কবুল করেন। তাই আশুরার দিনসহ আগে বা পরে আরো একটিসহ মোট দু’দিন রোজা রাখার কথা বলেছেন, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার পর রমজানের রোজা ছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোজা হচ্ছে আশুরার রোজা। রাসূল (সা.) আশুরার দিনের প্রশংসা করে বলেছেন, আশুরার দিনের সম্মানে মুমিনগণ রোজা রাখলে দোজখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না। আশুরার দিনে ১০ আয়াত কোরআন তেলাওয়াতকারী সারা বছরের কোরআন তেলাওয়াতের ছোয়াব পাবে। যে আশুরার দিনে রোজা রাখলো, সে যেন সারাজীবন রোজা রাখলো। আশুরার দিনে ৪ রাকাত নফল নামাজ নিম্নরূপে আদায় করলে পেছনের ৫০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। ৪ রাকাত নফল নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ২৫ বার সূরা এখলাস পড়তে হবে।
আশূরার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তিনি যেন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত উম্মতকে ইফতার করালো। যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ এর দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে-পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর ওই ব্যক্তিকে সচ্ছলতা দান করবেন। (তবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ, মুমিন কে মাহে ওয়া সাল ইত্যাদি) ‘পবিত্র আশূরার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে, কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন।’ ‘যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরার দিন মিশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে, সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবে না।’ (মাক্বাছিদে হাসানা, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ্) ‘যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরার দিন গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবে না এবং সে অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।’ পবিত্র আশুরার দিন সরকারি ছুটির দিন। এ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রিন্টমিডিয়া বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে পত্রিকা, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ মহান দিবস উপলক্ষে আশুরার দিনের পূর্বরাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভিন্ন মসজিদ, দরবার, খানকায় মিলাদ মাহফিল, আলোচনায় অংশ নিবেন। জিকিরসহ নানা নফল এবাদত বন্দেগী করবে। শিয়া মুসলমানরা আজ তাজিয়া মিছিল করবে। এদিনে মুসলমানগণ ঘরে ঘরে বিশেষ খাদ্য তৈরি ও বিতরণ করবে। আর এতে রয়েছে প্রভূত বরকত।
কর্মসূচী : বিশ্ব সুন্নী আন্দোলন : মুসলিম মিল্লাতের মহান জাতীয় শহীদ দিবস শাহাদতে কারবালা উপলক্ষে বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের উদ্যোগে আজ সকাল ১১টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা ইমাম হায়াত। প্রধান মেহমান থাকবেন হাফেজ আল্লামা সৈয়দ সাইফুর রহমান নিজামী শাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।