Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র আশুরা পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর পরিবেশে শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় কুদরতে কালেমার নিদর্শন স্বরূপ বেশ কিছু দিন ও রাতের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মহররম মাসের ১০ তারিখটি আশুরা নামে খ্যাত। এই দিনটির মাহাত্ম্য ও ফজিলত অত্যন্ত বেশি।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও সংক্ষিপ্ত কর্মসূচিতে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র আশুরা পালিত হয়। এ উপলক্ষে পুুলিশ রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শুক্রবার জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন পেশ ইমাম ও খতিবরা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ দিবসটি উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের করার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে শুক্রবার সকালে রাজধানীর হোসনি দালানের ভেতরে শিয়া সম্প্রদায়রা সংক্ষিপ্ত আকারে তাজিয়া মিছিল বের করে। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার খুৎবা পূর্ব বায়নে পেশ ইমাম আশুরার তাৎপর্য ও ফজিলত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। বাদ জুমা দিবসটি উপলক্ষে কারবালার শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণ করেন।

এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সকলকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক শুক্রবার বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করেছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত বৃহস্পতিবার বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ সময় জাতীয় মসজিদে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংস্থা) মু. আ: আউয়াল হাওলাদার। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন শায়খুল হাদীস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ। আলোচনা শেষে তিনি দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, পরিচালক আনিছুর রহমান সরকারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।

মহররমের দশ তারিখে প্রথমত আশুরার দিন পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা পবিত্র লাওহে মাহফুজ ও যাবতীয় সৃষ্ট জীবের রূহ পয়দা করেছেন। সমস্ত দুনিয়ার নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর এই দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছে। মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) কে আল্লাহপাক এই দিনেই পয়দা করেছিলেন। এই দিনই আল্লাহপাক তাঁর তাওবাহ কবুল করেছিলেন। একই দিনে তাকে জান্নাতে দাখিল করেছিলেন। দরবারে এলাহীতে বহু কান্নাকাটির পর এই তারিখেই আল্লাহপাক হযরত ইদ্রিস (আ.) কে সশরীরে জান্নাতে নিয়ে গেছেন। এই দিনই হজরত নূহ (আ.) এবং তাঁর অল্প সংখ্যক ঈমানদার উম্মতগণ অল্প কয়েক দিনের রসদপত্র নিয়ে কিস্তিতে সওয়ার হয়েছিলেন এবং তুফান হতে মুক্তিলাভ করেছিলেন।

এই দিন আল্লাহ পাক হজরত ইব্রাহিম (আ.) কে পয়দা করেছিলেন এবং এই দিনই তিনি নমরূদের অগ্নিকুন্ড হতে নাজাত লাভ করেছিলেন। এই দিনেই হজরত মুসা (আ.) তুর পর্বতে আল্লাহপাকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন এবং তাওরাত কিতাব লাভ করেছিলেন। আর এই দিনই পাপিষ্ঠ ফেরাউন নিজের দলবলসহ হজরত মুসা (আ.)-এর পশ্চাধাবন করতে গিয়ে ‘বাহরে কুলজমে’ ডুবে ধ্বংস হয়েছিলেন। হজরত আইয়্যুব (আ.) এই দিনে রোগ হতে মুক্তি লাভ করে ধন-সম্পদ ফিরে পেয়েছিলেন। হজরত ইয়াকুব (আ.) প্রিয় পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে বহু শোকতাপ স্মরণ করার পর ফিরে পেয়েছিলেন। এই দিনই মহান আল্লাহ পাক হজরত ইউনুস (আ.) কে মাছের পেট হতে উদ্ধার করেছেন।

এই দিনেই হজরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এই দিনেই তাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হযরত জিব্রাইল (আ.) এই দিনে আল্লাহপাকের রহমত নিয়ে হজরত আদম (আ.)-এর নিকট প্রথম উপস্থিত হয়েছিলেন। এই দিনই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র, শাবাবে আহলে জান্নাত, সাইয়্যেদ হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তাঁর সঙ্গী-সহচরগণ করবালা ময়দানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে শাহাদতবরণ করেছেন। এই দিনই আল্লাহপাক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ও আসমান হতে বৃষ্টি নাজিল হয়েছে। আর এই দিনেই কোনো এক শুক্রবারে ইস্রাফিলের সিঙ্গার ফুৎকারে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট :
ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল হান্নান আল-হাদী বলছেন, হজরত হোসাইন (রা.) এর চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে। হজরত হোসাইন (রা.) বাতিলের বিরুদ্ধে কখনো আপোস করেননি। বাতিল ও তাগুতি শক্তির মোকাবেলায় ইমাম হোসাইন (রা.) এর চেতনা বুকে ধারণ করে ময়দানে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে।

গতকাল পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডস্থ কার্যালয়ে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল-হাদী এসব কথা বলেন। পরে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে তিনি দোয়া পরিচালনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পবিত্র আশুরা পালিত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ