Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইলিশ কেনার ধুম বাজারে বাজারে, ইলিশ ঠাঁই নিয়েছে ফ্রিজ আর আড়তের মজুদাগারে

| প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : বাঙালীর জাতীয় মাছ ইলিশ। মাঝে মাঝে সোনার হরিণ হয়ে যায় এই ইলিশ। উধাও হয়ে যায় বাজার থেকে। ইলিশের জন্য মানুষ পাগলের মত ঘুরে বেড়ায় বাজার থেকে বাজারে, আড়ৎ থেকে আড়তে। আগামীকাল ১ অক্টোবর থেকে ২২ দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা। বন্ধ থাকবে পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও বিপনন। এ খবর প্রচারিত হবার পর বাজারে ইলিশ কিনার ধুম পড়ে গেছে। ধুম পড়ে গেছে আড়তে আড়তে ইলিশ মজুদের। আর এই সুযোগে বিক্রেতারা ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। এরপরেও বাজারে ক্রেতাদের ঘাটতি নেই। ৫ কেজি, ১০ কেজি, ১৫ কেজি, ২০ কেজি করে ইলিশ কিনে নিয়ে গেছে মানুষ। একটাই কথা পরে যদি না পাই। এবছর যদি ইলিশ আর আমদানী না হয়। মানুষের এই ধারনা সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক বছর বাজার থেকে ইলিশ উধাও হয়ে যাবার কারণে। গত বছর এমন দিন বাজারে প্রচুর ইলিশ ছিল। মানুষ নিজেদের খুশীমত ইলিশ কিনে নিয়েছে। কিন্তু মূল প্রজনন মৌসুমের কারণে ১ অক্টোবর থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ইলিশ ধরা, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও বিপনন বন্ধ করে দেয় সরকার। কিন্তু ১৫ দিন পর বাজারে আর ইলিশ উঠেনি। মানুষ সোনার হরিনের মত বাজারে বাজারে ইলিশ খুঁজে ফিরেছে। কোথাও ইলিশ পায়নি। এরপর প্রায় দীর্ঘ এক বছর ইলিশের সন্ধান পাওয়া যায়নি নদ-নদী বা সমুদ্রের কোথাও। এর প্রকৃত কারণও জানা যায়নি। তবে মৎস কর্মকর্তাগন জানিয়েছেন যে, যে কোন প্রাকৃতিক কারণে ইলিশ নদীর মোহনা থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে সরে গেছে। বছরের শেষ দিকে কিছু ইলিশ আমদানী হয়েছিল। আড়তের মালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী বড় বড় আকারের এসব ইলিশ ছিল মায়ানমার থেকে আমদানী করা হয়েছিল। ভোক্তাদের মতে সে সব ইলিশ নাকি খেতে সু-স্বাদু ছিল না। যার কারণে এ বছর সকল শ্রেণী পেশার মানুষই ইলিশ কেনার দিকে বেশী ঝুকে পড়েছে। এবছর ইলিশের দাম আমদানী অনুযায়ী খুব বেশী না কমলেও দাম খুব বেশী নয়। ৫শত গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। ৬শত গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। এর উপরে ৭ থেকে ৮ শত গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭শত থেকে ৯শত টাকা কেজি দরে। গত বছর সঙ্কটের সময় এসব ইলিশ বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে ২২শত টাকা কেজি দরে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এ বছর ৩শত থেকে ৪শত গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩শত থেকে ৪শত টাকা দরে। যার ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ এবার ইলিশের স্বাদ কিছুটা হলেও পেয়েছে। অর্থাৎ সকল শ্রেণী পেশার মানুষই এবছর ইলিশ খেতে পেরেছে। তবে সচেতন ক্রেতারা বলেছে এবছর ইলিশের খুব একটা সঙ্কট হবে না। আগামী পয়লা বৈশাখে মানুষ পান্তা ইলিশ দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করতে পারবে। দাম একটু বেশী হলেও ইলিশ কেনা কঠিন হবে না। এ বছর আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার টন ইলিশ মজুদাগারে হিমায়িত করে রেখেছে। সাধারণ মানুষ ইলিশ খেতে না পারলেও ইলিশ বিক্রির মওকা সারা বছরই পেয়ে থাকে ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব। বছরের পয়লা অক্টোবর থেকে ১৫/২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ না রেখে সারা বছর যদি ডিমওয়ালা ইলিশ এবং জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকতো তবে বাংলাদেশের মানুষ সারা বছরই ইলিশ মাছ খেতে পারতো। রেকর্ড রয়েছে গত ১৯৮৮, ২০১০ ও ২০০৪ সালে বন্যার সময় মেঘনা অববাহিকার প্লাবণ ভূমিতে ইলিশ উঠে গিয়েছিল। সাধারণ জালে আটকা পড়েছিল প্রচুর সংখ্যক ইলিশ। ধান ক্ষেতের মধ্যেও ইলিশের ঝাক উঠে গিয়েছিল। সে সময় ইলিশের ঘাটতি থাকলেও সঙ্কট ছিলনা। সঙ্কট দূর করতে হলে সারা বছর জাটকা নিধন এবং ডিমওয়ালা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি জাটকা নিধন ও ডিমওয়ালা ইলিশ ধরার শাস্তি আরো বাড়াতে হবে।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ