পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘বিশ্বশান্তির অগ্রদূত ও বিশ্বমানবতার বাতিঘর’ বলে উল্লেখ করায় গোটা জাতি লজ্জা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনে এখনকার মতো এমন ভয়াবহ দুঃশাসন ও নাজুক পরিস্থিতি আর কখনো আসেনি। ঠিক এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্য হাস্যকরও। সারাদেশের মানুষের শান্তি নষ্ট করে অশান্তির বীজ বপন করে কী শান্তির দূত হওয়া যায় কিনা সে প্রশ্ন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকাল (শুক্রবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী লিখিত বক্তব্যে দেশের ‘ভয়াবহ’ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের মতো মানবধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা খুললেই বা গণমাধ্যমে খবর বের হয় নিখোঁজ কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা যা শুধু উদ্বেগজনক নয় ভয়ংকর আতংকের। অথচ সরকার বরাবর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐ, গুমের মতো বিষয়গুলো অস্বীকার করছে। ২০টি মানবাধিকার সংগঠনের এই মোর্চা হিউম্যান রাইটস ফোরাম বলেছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন ৮২৩ জন। একই সময়ে গুমের শিকার হন ৩৪ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত সীমান্ত সহিংসতায় মারা গেছেন ১৪৭ জন। ২০১৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ১৪ জন মানবাধিকারকর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া গত বছর ১১৭ জন সাংবাদিক শারীরিক, মানসিকভাবে লাঞ্ছনা, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। তবে বিএনপি’র তথ্য মতে এই গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সংখ্যা আরো বেশী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জুলুম নির্যাতন চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম ভেঙ্গে পড়েছে। নারী-শিশু নির্যাতন ও পাশবিকতা থামছেই না, নারীরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, কোমল মতি শিশু ও স্কুল কলেজের মেয়েরাও আতংকিত জীবন যাপন করছে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠিত সবশ্রেনির মানুষ। মানুষের বাক স্বাধীনতা বলতে ছিটেফুটাও নেই, গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে চাল, আটাসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, চালের দাম কয়েকটাকা কমেছে বলে মন্ত্রীরা গলাফাটালেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি এক টাকাও। লুটপাটের কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। কলকারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম, বিদেশী বিনিয়োগ নেই, দেশী বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। সরকারের ব্যর্থনীতির কারণে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো দুরে থাক লাখ লাখ কর্মক্ষম শ্রমিককে ফেরত পাঠানোর ফলে রেমিটেন্স প্রবাহে ধস নেমেছে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি না হওয়ায় বেকারত্বের কড়াল গ্রাসে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন যুবসমাজ। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি, ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। পরিবেশ বিনাসী প্রকল্প নিয়ে সুন্দরবনকে ধ্বংস করার পায়ঁতারা করছে। মিথ্যা উন্নয়নের জোয়ারে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক ও ব্রীজ কালভার্টের বেহাল দশা বিরাজ করছে। কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ভয়ংকর রুপ নিতে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ দুঃশাসন উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জীবনে এমন ভয়াবহ দুঃশাসন ও নাজুক পরিস্থিতি আর কখনও আসেনি। ঠিক এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন “শেখ হাসনিা বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত, বিশ্ব ,মানবতার বাতিঘর”। ওবায়দুল কাদেরের হাস্যকর এমন মন্তব্যে গোটাজাতি লজ্জা পেয়েছে। সারাদেশের মানুষের শান্তি নষ্ট করে অশান্তির বীজ বপন করে কী শান্তির দূত হওয়া যায় কিনা সে প্রশ্ন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। ৭২-৭৫ এ দেশে যখন দুর্ভিক্ষ চলছিল তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতাও শান্তির জন্য জুলিওকুরি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তখন মানুষ বলতো ‘শেখ সাহেবের মাথায় জুলিওকুরি, আমরা সবাই ভাতে মরি’। রক্তাক্ত দু:শাসনের ওপর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ওবায়দুল কাদের ঘোষিত ‘শান্তির দূত’ হিসেবে অভিহিত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিনাভোটের আওয়ামী সরকার রোহিঙ্গা ইস্যু’র মধ্যে বিদ্যমান অমানবিক কর্তৃত্ববাদী প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিকে আড়াল করার চেষ্টা চালালেও দেশের জনগণ কিছুই ভুলে যায়নি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার কূনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব ছাড়াই শেষ হয়েছে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্ক। এছাড়া গতকালও (বৃহস্পতিবার) জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিবে কিনা সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ার প্রধান কারণ কূটনীতিক ব্যর্থতা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব সোচ্চার হলেও বর্তমান সরকারের ভুমিকা নতজানু। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা নির্যাতন চালানো হচ্ছে, এমনকি বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও জাতিসংঘসহ প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশগুলোকে পাশে নিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কারণ একটাই-জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তাদের কোন নৈতিক ভিত্তি নেই। শুরু থেকে বাংলাদেশে আশ্রয়ের সন্ধানে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় না দিয়ে মৃত্যুর গুহায় ঠেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মতোই রোহিঙ্গাদের সাথে আচরণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এমনকি মিয়ানমার বাহিনীর মতো কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই এই নিরীহ জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করা হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। অথচ মিয়ানমার বাহিনীর বর্বরতা শুরুর পরপরই গত ২৮ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাদের পাশে দাঁড়াতে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিলে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ তাদের পাশে দাঁড়ায়। এমনকি বিশৃঙ্খলা এড়াতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবীও জানিয়েছিল বিএনপি। বিএনপি’র দাবী অনুযায়ী সেনাবাহিনী মোতায়েনের ফলেই এখন রোহিঙ্গা উপদ্রæত এলাকায় অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সরকার যে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল না তার প্রমান হলো বিএনপি’র ত্রাণ তৎপরতায় বাধা দান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশে যে সংকট তৈরী হয়েছে এমন সংকট ১৯৭৮ ও ১৯৯২ তে বিএনপি সফলতার সাথে মোকাবেলা করেছিল। বর্তমান সংকটেও বিএনপি’র পক্ষ থেকে বারবার জাতীয় ঐক্যের আহবান জানানো হলেও তারা বিএনপি’র আহবানে সাড়া না দিয়ে একপক্ষ নীতি অবলম্বন করছে সরকার। অথচ সরকার এই জাতীয় সংকটের কোন সুরাহা করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে উৎসুক জনতা যোগ দিতে গেলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এই সরকারের আমলেই দেশের জনগণ সা¤প্রদায়িক সংঘাতের কথা আবারও নতুন করে শুনেছে। এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার দুলু, মুনির হোসেন, গোলাম মূর্তজা তুলা প্রমুখ। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।