পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারাদেশেই বাহারি নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ ও কেরানীগঞ্জের অলিগলিতে প্রস্তুতকৃত নকল ও নিম্নমানের সাবান, চন্দন, মেছ্তা-দাগ নাশক ক্রিম, নানা প্রসাধনী, তেল, পারফিউম সবকিছুই পাইকারী ও খুচরা বিক্রিও হচ্ছে। এসব নকল সামগ্রীর প্যাকেট বা বোতলে সাঁটানো বিভিন্ন দেশের লেভেল। রকমারি বিদেশী পণ্যের সমারোহে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। পৃথিবীর যত নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধণ সামগ্রী সবই তৈরী হচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। অবাক করার বিষয় হলো, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানেও বিক্রি হচ্ছে নকল পণ্য। গত বুধবার র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত গুলশান ২ নং সেকশনের ল্যান্ডভিউ মার্কেট থেকে ১১টি নকল মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করেছে। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, মোবাইল সেটগুলোর গায়ে স্যামসাং এর লেবেল ও স্টিকার লাগানো থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো ওই কোম্পানীর নয়। তিনি বলেন, নকলের প্রবণতা আগের তুলনায় কমেছে তবে এখনও তৈরী হচ্ছে। নকলমুক্ত পণ্যের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আরও সময় লাগবে।
অভিজাত শপিং সেন্টার থেকে শুরু করে শহর-বন্দর, প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটবাজার পর্যন্ত সর্বত্রই নকলের বাহার। নকলের ভিড়ে আসল পণ্য এখন অনেকটাই উধাও। শিশুদের চকলেট ও গুঁড়া দুধ, ঘি, আটা, তেল, সাবান, মধু, মসলা, দই, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, নিত্যব্যহারের কসমেটিকস, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, গাড়ি ও কম্পিউটারের পার্টস এমনকি গানের সিডিও নকল হচ্ছে। নকল সামগ্রী মানেই কোনো ব্রান্ডেড কোম্পানীর সামগ্রী হুবুহু প্যাকেট করে বাজারজাত করা। চোখ ধাঁধানো নকল সামগ্রীর ঝকমকে প্যাকেটের সামনে আসল পণ্য পাত্তাই পায় না। হাইটেক সামগ্রীসহ সব ধরনের নকল পণ্য রাজধানীর ফুটপাতেও পাওয়া যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধও। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে নকল কারখানায় তৈরি ওরস্যালাইনে হাটবাজার, ফার্মেসী সয়লাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, নকলের প্রবণতা বন্ধ করতে হলে আইনের সঠিক প্রয়োগসহ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। ভোক্তারা যদি সচেতন হয়ে সংঘবদ্ধভাবে নকল পণ্য বা ভেজাল খাদ্যকে বর্জন করে তাহলে এর দাপট আর থাকবে না। যারা অধিক মুনাফার আশায় এগুলো তৈরী করছে তারা নিরাশ হতে হতে একদিন এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।
বিএসটিআই এর একজন কর্মকর্তা জানান, এক সময় পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় ৫৩ রকমের নকল প্রসাধনী তৈরী হতো। ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর এখন আর আগের মতো নকল জিনিস তৈরী হচ্ছে না। তবে একেবারে যে বন্ধ হয়েছে তাও নয়। বিএসটিআই-এর ওই কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে চকবাজারের খান মার্কেটে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ীকে জেল জরিমানা করা হয়। মালিক সমিতির কিছু ব্যবসায়ী নকল সামগ্রীর ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার অঙ্গীকারও করেন। কিন্তু বন্ধ করা যায় নি নকলের তৎপরতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখন চীনের তৈরী খেলনা সামগ্রী থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর নকলের মহোৎসব চলছে। ঢাকার বাইরে এগুলো বিক্রি হয় বেশি। চকবাজার থেকেই পাইকাররা সেগুলো কিনে নিয়ে যায়। দেশের গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে ‘চায়না’ বলেই বিক্রি হয় এসব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার নকল কারখানাগুলোর দিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হওয়ার পর অনেক নকল কারবারী সেখান থেকে কারখানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারখানা কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়েছে। আবার সেখানেও নিরিবিলিতে ধরা পড়ার ভয়ে কেউ কেউ যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও মুগদার ব্যস্ত ও ঘিঞ্জি এলাকাকে বেছে নিয়েছে। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে অনেক আগে থেকেই আছে নকল ফ্যানসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি তৈরীর কারখানা। রায়েরবাগে আছে নকল খাঁটি গাওয়া ঘি, মধু, দই ও মিষ্টির কারখানা। যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকাতেই নকল ক্যাবল তৈরীর কারখানা আছে কমপক্ষে ৫০টি। দনিয়া ও পাটেরবাগ এলাকায় নকল মশার কয়েল, ঘি, গুড়, হারপিক, খাবার স্যালাইন, ভিটামিন ওষুধ, সুইচ, ছকেট, হোল্ডার কারখানা আছে বেশ কয়েকটি। আছে শতাধিক নকল মিনারেল ওয়াটারের কারখানা। দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের পেছনে গভীর নলকূপ বসিয়ে মিনারেল ওয়াটারের কারখানা চালাচ্ছে একটি চক্র। মুগদাতে নকল সোয়াবিন তেল থেকে শুরু করে নকল ডিটারজেন্ট পাউডার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে অবাধে। পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের অলিতে গলিতে তৈরী হচ্ছে নকল টিভি, ফ্রিজ, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোটর, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন মেশিনসহ বিভিন্ন দামী ইলেকট্রিক সামগ্রী।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিউটিশিয়ানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নকল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা জটিল হয়, দেহে ছড়িয়ে পড়ে নানা ধরণের রোগ। এসব তৈরিতে এসিড, পানি, মোম, সুগন্ধি ও পারফিউমের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়। মোমের পরিমাণ বেশি হলে তা ত্বকে ঢুকে লোমক‚প বন্ধ করে দেয়। ফলে মেছতা, ব্রন, ফাঙ্গাস জাতীয় রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কারিযুক্ত প্রসাধণী ব্যবহারে সরাসরি স্কিন ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। নকল প্রসাধণী তৈরিতে নিম্নমানের ভেজাল সামগ্রী ব্যবহার করায় চুলকানি, ফোস্কা পড়া, ত্বকের প্রদাহ, সংক্রমণ এসব নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
জানা গেছে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা জেনে শুনেই অতি লাভের আশায় নকল পণ্য বিক্রি করেন। প্রতারিত হন ব্যবহারকারী বা ক্রেতারা। থাইল্যান্ডের বিখ্যাত হেড অ্যান্ড শোল্ডার, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যান্টিন প্রো-ভি শ্যাম্পু ও ডাভ ক্রিম বা ভারতের গার্নিয়ার শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্রিম, লিপস্টিক, লোশন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর চকবাজার ও মৌলভীবাজারে। সেখানকার শতাধিক পাইকারি দোকানে এসব পণ্য মূল দামের অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। তবে এগুলো সবই নকল। পণ্যের প্যাকেট বা বোতল ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করেও আসল-নকল বোঝারও উপায় থাকে না।
ভুক্তভোগীদের মতে, বিএসটিআই-এর নির্লিপ্ততাই নকল সামগ্রীর দাপটের জন্য দায়ী। শিল্প মন্ত্রালয়ের অধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি যুগ যুগ ধরে জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে দায় এড়িয়ে চলছে। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, বিএসটিআই’র অভিযান অব্যাহত থাকলে নকল পণ্যের দাপট কমতে বাধ্য। জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের এক সহকারী পরিচালক বলেন, একথা ঠিক যে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তাই বলে বিএসটিআই যে বসে আছে তা কিন্তু নয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম ইনকিলাবকে বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে খাদ্য সামগ্রীতে ভেজালের মতো পণ্যসামগ্রীতেও নকলের প্রবণতা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কমেছে। তবে এখনও যে তৈরী বা বিক্রি হচ্ছে না তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, অভিজাত মার্কেটগুলোতে দামী দামী নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বসুন্ধরা সিটি মার্কেটেও অভিযান চালিয়ে নকল পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কনজুমার কেয়ার সোসাইটির (সিসিএস) উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. আব্দুর রহমান (পিএইচডি) বলেন, নকলের প্রবণতা আমাদের দেশের তৈরী পণ্যের ভবিষ্যত নষ্ট করে দিচ্ছে। এগুলো বন্ধের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ দরকার। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।