Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হত দরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দিনের আলোতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে “স্বপ্ন”

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার :“স্বপ্ন(প্রকল্প) আমাকে দিনের আলোয় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। স্বামী পরিত্যক্তা বা নানা কারণে সমাজ যখন আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে অসহায় ছিলাম, তখন এ প্রকল্প আমাদের নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে”। স্বপ্ন (প্রকল্প) আমাকে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বাল্যবিবাহের কারণে অল্প বয়সে সবকিছু হারিয়ে একসময় নিঃস্ব হলেও আমি এখন স্বাবলম্বী। বেঁচে থাকার আশাই যেখানে ছিল ক্ষীণ, সেখানে সমাজও আমাদের সমীহের চোখে দেখে। এভাবেই, স্থানীয় সরকার, পল্ল­ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন উৎপাদনশীল ও সম্ভাবনাময় কর্মের সুযোগ এবং নারীর সামর্থ্য (স্বপ্ন) প্রকল্পের মাধ্যমে জীবন পরিবর্তনের গল্প শোনালেন কুড়িগ্রামের আনজুমান আরা এবং মোসাম্মদ সুফিয়া খাতুন। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২৬ মে একনেকে ৫ বছরের জন্য অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলার ১৪টি উপজেলার ১২৪টি ইউনিয়নের মোট ৪ হাজার ৪শ ৬৪ জন মহিলা উপকারভোগীকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, সারাদেশে ৬৫ হাজার অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত-দুস্থ নারীর ক্ষমতায়ন ও একটি অনুকরণীয় মডেল প্রতিষ্ঠা করে প্রকল্পের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের মতো সরকারি কাজে নারীদের অস্থায়ী ভিত্তিতে ১৮ মাসের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি মহিলাদেরকে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নারী-পুরুষ সম্পর্ক উন্নয়ন, নারী অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূর্যোগ মোকাবেলা, স্বশিক্ষণ সহজ হিসাব, নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । একই সাথে সংশ্লিষ্ট জেলা সমূহে প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় জরিপ কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রশিক্ষন চাহিদা নিরুপন করে বিবিধ আয়বর্ধকমূলক কর্মকাÐে মহিলাদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কর্মদক্ষতার প্রশিক্ষন প্রদান করা, যা তাদের জন্য উৎপাদনশীল বিনিয়োগের জন্য ঘূর্ণায়মান তহবিলভিত্তিক নগদ অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত নারীগণ মজুরি থেকে দৈনিক ৫০ টাকা বাধ্যতামূলক সঞ্চয় করার শর্তে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য দৈনিক ২০০ টাকা হারে মজুরি প্রদান, চাকরির সংস্থান অথবা উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও বাজারের সঙ্গে সংযুক্তকরণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো: ইমদাদ উল্লাহ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রকল্পটি সম্পর্কে তিনি বলেন, স্বপ্ন প্রকল্প অসহায় নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। প্রকল্পে দাতা সংস্থার প্রতিশ্রæত অর্থ প্রাপ্তি না হওয়া সর্ম্পকে তিনি বলেন, আশা করি শীঘ্রই বিষয়টি সমাধান হবে।এছাড়া প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি উম্মুক্ত রয়েছে, আলোচনা সাপেক্ষে যে কেউ অর্থায়ন করতে পারবেন বলে জানান। প্রকল্পের আওতায় কয়েকজন উপকারভোগীরা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, চরম দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করায় সাধারনত বেঁচে থাকার প্রয়োজনে দৈনিক উপার্জিত মজুরির প্রায় পুরোটাই ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এই প্রকল্পে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের শর্তটি জুড়ে দেয়ার ফলে ১৮ মাসের কর্মসময়ে ১৫০ টাকা হারে ৪৫০ কর্মদিবসে ৬৭,৫০০ টাকা মজুরি এবং ১৮ মাস কাজের মেয়াদ শেষে এককালীন সঞ্চিত ২২,১৫০ টাকা হাতে পেয়েছি। এই পুঁজি দিয়ে গরু-ছাগল বা সেলাই মেশিনের মতো আয়বর্ধনমূলক সম্পদ ক্রয় করে সাবলম্বী হয়েছি।
প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. কাজল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ প্রকল্পে সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হত দরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের অনেক মৌলিক আর্থিক বিষয়াদি সম্পর্কে ও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ও সংশ্লিষ্ট বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হয়। যার মাধ্যমে তারা বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে একটি টেকসই রূপ দিতে সক্ষম হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ