Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দৃষ্টিনন্দন হবে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রুমু, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম। যেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় দলের সেরা সেরা ফুটবলার ও ক্রিকেটার। তারকা ফুটবলার এজাহারুল হক টিপু, আশীষ ভদ্র এবং তারকা ক্রিকেটার বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নুরুল আবেদীন নোবেল, ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য আকরাম খান, শহীদুর রহমান, জাহিদ রাজ্জাক মাসুম, নাফিজ ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দিন এই মাঠেরই সৃষ্টি। এছাড়া বর্তমান জাতীয় ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবালও খেলেছেন এই আউটার স্টেডিয়ামে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন নিয়াজ স্টেডিয়াম নামে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা লাভের প্রায় শুরু থেকেই এই আউটার স্টেডিয়াম খেলোয়াড় গড়ার নার্সারী হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করে আসছিল।
চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকদের ঐতিহ্যবাহী মাঠটিকে স্বর্ণ দিয়ে মুড়িয়ে রাখার কথা। কিন্তু তারা সেই কাজটি করতে পারেনি। বরং এরই মধ্যে আউটার স্টেডিয়ামের একাংশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক নির্মাণ করা হচ্ছে সুইমিং কমপ্লেক্স। এই সুইমিং কমপ্লেক্স নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে নানা বিতর্ক। এটি নিয়ে আইনি আদালতও গড়িয়েছে। বাকি যে অংশটি রয়েছে খেলাধুলার পরিবেশ নেই সেখানে। এখানে থাকছে অবৈধভাবে সারি সারি মিনিট্রাকের যথেচ্ছ পার্কিং, কার চালনা শিক্ষণসহ ক্রীড়া বহির্ভূত কর্মকাÐ। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সৃষ্টি হয়েছে পুতিগন্ধময় পরিবেশ। আউটার স্টেডিয়ামের আশপাশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে ভ্রাম্যমান পতিতা এবং ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণ চলছেই। গুটিকয়েক ডেকোরেশন ব্যবসায়ী আউটার স্টেডিয়ামের পাশে বাঁশসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র মজুদের ডিপোতে পরিণত করেছে। একপাশে সড়কবাতিতে আলো ঝলমল থাকলেও তিনপাশ প্রায় অন্ধকরাচ্ছন্ন থাকে।
আউটার স্টেডিয়ামের পূর্বদিকের নুর আহমদ সড়কের পশ্চিমপাশের ফুটপাত দিয়ে কাউকে যেতে হলে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বন্ধ করে যেতে হয় তাকে। এখানে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এই মাঠটির অবস্থা অথৈবচ। হারিয়ে ফেলেছে আউটার স্টেডিয়াম তার ঐতিহ্য। মনে হচ্ছে অভিভাবকহীন এই আউটার স্টেডিয়ামটি। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়।
কয়েক বছর আগে সিজেকেএস’র সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এই আউটার স্টেডিয়ামকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেও সেটিও বাস্তবতায় রূপ দিতে পারেননি। এখন আউটার স্টেডিয়ামের বাকি যে অংশটি রয়েছে সেটিসহ আশেপাশের ফুটপাতগুলোকে সিটি কর্পোরেশন নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চাইছে। দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলবে বাকি অংশটি। নগরে চলাচলের জন্য একজন নাগরিক হিসেবে প্রথম আমার অধিকার নিশ্চিন্তে ফুটপাতে চলাচলের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এর পাশাপাশি খেলার জন্য খেলার মাঠ থাকবে উন্মুক্ত। সিটি কর্পোরেশন এই কাজে এগিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুরো আউটার স্টেডিয়ামের নতুন চেহারায় নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার জন্য তিন ধাপে উন্নয়নের কাজ হবে। এ কাজের মধ্যে থাকছে হাটার উপযোগী ফুটপাত, শরীরচর্চা কেন্দ্র, ৭১ ফুট উচু বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ, প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড, দক্ষিণমুখী গ্যালারী, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড, বুকস্টল, পর্যটন তথ্য কেন্দ্রসহ আরো অনেককিছু। এরই মধ্যে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেনের নির্দেশনায় শুরু হয়েছে নকশা তৈরির কাজ। এ কাজে স্থপতির সাথে রয়েছেন আরো তিনজন অরিত্র দে, অর্চিসমান দাশ ও মাহমুদা চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে স্থপতি জেরিনা হোসেন ইনকিলাবকে জানান, প্রথমধাপের কাজের নকশা ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশনকে জমা দেওয়া হয়েছে। কাজের বাকি দু’টি অংশের নকশা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা দেওয়া হবে। নকশাগুলো সিটি কর্পোরেশন অনুমোদন করলে শুরু হবে মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। আর এই কাজটি সম্পন্ন হলে আউটার স্টেডিয়ামের আশপাশ এলাকা দৃষ্টিনন্দন এক আনন্দভুবনের ভরে উঠবে। পূর্বদিকের ফুটপাতের কাজটি হচ্ছে প্রথম ধাপের অংশ।
এই কাজটি সম্পন্ন করতে কমপক্ষে চারমাস সময় লাগবে। এই ফুটপাতকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি লেইন থাকবে যা দিয়ে মানুষ দ্রæতগতিতে বাস স্টপেজে আসা যাওয়া করতে পারেন। আরেকটিতে থাকবে ধীরগতিতে মানুষ চলাচলের জন্য। এটির নিচে থাকবে ছোট ছোট স্পট লাইট যাতে মানুষ চলাচলের কোন অসুবিধা না হয়। এর ফাকে ফাকে থাকবে কিছু ছোট ও মাঝারী গাছ। এছাড়া বয়স্করা চলার পথে বিশ্রাম নিতে পারেন এবং রোদ বৃষ্টিতে পথচারীরা আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য থাকবে ছাউনী। এগুলো থাকবে সবশেষ লেইনটিতে। বর্তমানে যে স্থানে শৌচারগারটি রয়েছে সেখানে তৈরী করা হবে একটি বিজয় স্তম্ভ। এই স্তম্ভের কাছাকাছি থাকবে একটি উন্মুক্ত দৃষ্টিনন্দন বসার চত্বর।
দ্বিতীয়ধাপের কাজের অংশে থাকছে দক্ষিণমুখী গ্যালারী। এছাড়া আরো থাকছে পশ্চিম দিকের জায়গায় চট্টগ্রামের পর্যটনের তথ্য বিবরণী কেন্দ্র, সিজেকেএস’র অফিস রুম, শিশুদের খেলাধুলার স্থান এবং তাদের অভিভাবকদের বসার স্থানসহ আরো বেশকিছু স্থাপনা। পর্যটন তথ্য কেন্দ্র থেকে পর্যটকরা জানতে পারবে চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা কোন কোন স্থানসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য। বর্তমানে যে শৌচাগারটি রয়েছে সেটি দক্ষিণমুখী গ্যালারীর নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। সবশেষ ধাপের কাজ হবে মাঠের।
প্রসঙ্গত এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের পাশে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে ছোট অথচ দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। আউটার স্টেডিয়ামের ওই পাশের সড়কের দুইপাশে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বেশকিছু স্থাপনা। তবে অনেকটা অবহেলিত ছিল আউটার স্টেডিয়াম এলাকা। ঐতিহ্যবাহী এই আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ থেকে চট্টগ্রামবাসী দেশ ও জাতিকে উপহার দিয়েছে অনেক কৃতী ফুটবলার ও ক্রিকেটার। তাই এটি করা হবে খেলার উপযোগী মাঠ। একমাত্র খেলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এটি। সুইমিংপুল লেভেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাঠের কাজ করা হবে। যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে মাঠে। ক্রিকেটারদের জন্য মাঠের একপ্রান্তে কয়েকটি নেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা, ব্যায়ামের জন্য কিছু স্থায়ী জায়গা নির্ধারিত করা থাকবে। সিজেকেএস’র কিছু লকার রুম, অফিস রুম, খেলোয়াড়দের দৃষ্টিনন্দন লাউঞ্জ থাকবে এখানে।
এই লাউঞ্জে লেখা থাকবে এই মাঠে খেলে যারা জাতীয় তারকা হয়েছেন তাদেরই নাম। তাছাড়া মাঠের এক পাশে থাকবে মুক্তমঞ্চ। আর এভাবেই ৬৯ বছরের গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম ও এর আরেক প্রাণ আউটার স্টেডিয়াম হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত কর্মচঞ্চল এবং দৃষ্টিনন্দন। এমনটি প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট স্থপতিগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ