Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমনখেত পাহারায় কলাগাছ ও পলিথিন!

| প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমনখেতে ইঁদুরের উপদ্রবে কৃষকরা রীতিমতো দিশেহারা হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তানোরসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের আমনখেতে ইঁদুরের আক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এদিকে এসব এলাকায় আমনখেতে পাহারাদারের ভ‚মিকা পালন করছে কলা গাছ, পলিথিন ও অডিও ক্যাসেটের ফিতা। তানোরের শুকদেবপুর গ্রামের চাষি আলম মÐল (৩২) তার আমনখেতে ইঁদুর তাড়াতে কলাগাছ ও লাঠি পুঁতে তাতে পলিথিন ব্যাগ, অডিও ক্যাসেটের ফিতা টানিয়ে কিছুটা সফলতা পেয়েছেন। তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউপির বেড়লপাড়া গ্রামের কৃষক ভুলু (৩৩) বলেন, চলতি মৌসুমে তার চার বিঘা আমন চাষ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় তার খেতে ধান ভালোই আছিল। কিন্তু তার ধানের বেশির ভাগ ইঁদুর কেটে সাবাড় করে ফেলেছে। অথচ তিনি কৃষি বিভাগের কাছে থেকে এখানো তেমন কোনো পরামর্শ পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমনের শেষ সময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। তিনি বলেন, শুধু বিষটোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেধে দিলে ও রাতে ফসলের খেতে টায়ার পোড়ানো পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুরের উপদ্রব কম হবে। 

রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. রফিকুল ইসলাম জানান, ইঁদুরের দ্বারা দেশে বছরে ফসলের ক্ষতি হয় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইঁদুর দ্বারা মোট ৭২৩ কোটি ৬২ লাখ সাত হাজার ৩৫৫ টাকার শুধু ধান, চাল ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৩ সালের এক গবেষণার উদাহরণ দিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। তাই ইঁদুর দমন বা প্রতিহত করতে কৃষকদের সচেতন হতে হবে। রাজশাহী জেলা কৃষিস¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার ২২৪ হেক্টর। এর মধ্যে পোকা দমণের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধনিচা গাছ লাগনো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমনের চাষাবাদ হবে প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের ওপরে। তানোর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা সমশের আলী বলেন, এই ইঁদুর গাছে এমনকি অনেক সময় পানির উপর খড়কুঁটে দিয়ে বসবাস করে। এই ইঁদুর দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সামনে যা পায় কেটে তছনছ করে দেয়। আমনখেত বাতাসে দোলে এমন পাতাযুক্ত ছোট কলা গাছ রোপণ করে খুঁটির সঙ্গে পাতলা পলিথিন বেঁধে দিয়ে ইঁদুর তাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। তিনি বলেন, বাতাসে কলা পাতা নড়লে বা পলিথিন নড়লে মানুষ আছে ভেবে ইঁদুর পালিয়ে এ ছাড়াও রাতে ফসলের খেতে টায়ার পোড়ানো হলে ইঁদুরের উপদ্রব কমে।
রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, ইঁদুর একটি জাতীয় সমস্যা ইঁদুর যা খায় তার থেকে বেশি ফসল নষ্ট করে। তাই কৃষকদের পোকা দমনে যেমন পরামর্শ দেয়া হয় পাশপাশি ইঁদুর দমনেও নানা পদ্ধতি ব্যবহার করে ইঁদুর তাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে ইঁদুরকে পুরোপুরি দমন করে ফেলতে হবে। যাতে তারা আর বংশ বিস্তার করতে না পারে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ