বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : প্রতিমাসে গড়ে ৯জন খুন হচ্ছে! তাও শিক্ষা সংস্কৃতি ও প্রাচীন এতিহ্যের জেলা কুমিল্লায়। একের পর এক খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। পারিবারিক কলহ, জমি-জমা নিয়ে দ্ব›দ্ব, প্রতিবেশি সম্পর্কের অবনতি, যৌতুকের কারণ, স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া ঘটনা, প্রেমের ঘটনা, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের আধিপত্য, মুক্তিপণসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রতিমাসে ৮-১০টি খুনের ঘটনায় পুলিশও হিমশিম পোহাচ্ছেন। একটি খুনের তদন্ত শুরু না হতেই আরেকটি খুন। খুনের মামলার নথিপত্র নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। সমাজের বিশিষ্টজনরা বলছেন সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় কথায় কথায় ছুরিকাঘাত করছে, গুলি ছুঁড়ছে অথবা পিটিয়ে মারছে।
কুমিল্লা জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির গতমাসের সভায় খুনের ঘটনা ও অন্যান্য অপরাধকর্ম বেড়ে যাওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এবছরের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত কুমিল্লার ১৬ উপজেলায় ৭২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের মধ্যে আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমন সংখ্যাও কম নয়। তারমধ্যে কয়েকটি আলোচিত খুনের মধ্যে রয়েছে দাউদকান্দি উপজেলার যুবলীগ নেতা আমির হোসেন ওরফে রাজন হত্যাকান্ডটি। গত ৬মে দুপুরে দাউদকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে মুখোধারি সন্ত্রাসীরা বলদাখাল রাস্তার মোড়ে রাজনকে ঘেরাও করে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। মুরাদনগরের রহিমপুর গ্রামে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে গত ১৯এপ্রিল উপজেলা আওয়ামীলীগের দুইগ্রæপের সংঘর্ষে গলাকেটে খুন করা হয় ফারুক ও সাইদুর নামে দুইজনকে। মুরাদনগরে গত ১জুন খুন হোন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম। গত ১১এপ্রিল কুমিল্লা সদরের পালপাড়া ব্রীজের নিচে রক্তাক্ত লাশ মিলে পত্রিকা হকার ফারুকের। কুমিল্লা ব্রিটিনিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র শাহজাদাকে গত ২৭মে তার বন্ধুরা নগরীর নজরুল এভিনিউতে খুন করে। গত ৯ফেব্রæয়ারি কুমিল্লা শহরতলীর চানপুরে বিল্লাল বাহিনীর হাতে খুন হোন ব্যবসায়ি ছাদেক আলী। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় গত ৮জানুয়ারি নগরীর নুরপুরে খুন হোন হাসান নামে এক যুবক। গত আটমাসে এসব খুনের ভিড়ে শিশু খুনের ঘটনাও ঘটেছে কুমিল্লায়।
বিভিন্ন ঘটনায় গত জানুয়ারি থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত কুমিল্লার ১৬উপজেলার ১৭টি থানা এলাকায় ৭২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। জানুয়ারি মাসে ৬টি, ফেব্রæয়ারিতে ৫টি, মার্চে ১৩টি, এপ্রিলে ৭টি, মে মাসে ৯টি, জুনে ১৩টি, জুলাই মাসে ৮টি এবং আগষ্ট মাসে ১১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে আটমাসে কোতয়ালী থানা এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১টি। একই সময়ে ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে দাউদকান্দিতে। অন্যান্য উপজেলায় ১ থেকে ৬টি পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে। এভাবে গেলো আটমাসে কুমিল্লা জুড়ে একের পর খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়ের কারণে ঘটে যাওয়া এসব খুনের কারণে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিও এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা কমলে সব ধরণের অপরাধ প্রবণতাও কমে আসবে। আর এজন্য সমাজে বসবাসকারি একে অন্যের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সম্পর্কের উত্তরণ ঘটাতে হবে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, টহল ব্যবস্থা জোরদার এবং সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পরামর্শ আমলে নেয়ার জন্য থানাগুলোতে ওপেন হাউজ ডে কার্যক্রম প্রতিমাসে নিয়মিত করতে পারলে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে এবং তাতে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত খুনের ঘটনা ও অন্যান্য অপরাধ প্রবনতা হ্রাস পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।