Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি রফতানি পুরোপুরিই বন্ধ

| প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টেকনাফ থেকে মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরুর পর টেকনাফ স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। দু-দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানী ও কমেছে। একই সাথে এই বন্দর দিয়ে মিয়ানমারের যাতায়াত (ইমিগ্রেশন) কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানায়, ১৯৯৫ সালে এই বন্দরটি যাত্রা শুরু হয়। গত ২২ বছরে এই বন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয় ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯ মেট্রিকটন পণ্য। যার মূল্য ৪ হাজার ২৭ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ৭৪১ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় মাত্র ৭৫ হাজার ২৭৯ মেট্রিকটন পণ্য। যার মূল্য ১৯৫ কোটি ১২ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৮ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭৮ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজার। অবশ্য আমদানি-রপ্তানিতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তবে চলতি (২০১৭-২০১৮) অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ে ধস নামতে পারে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো: হাশেম সিআইপি জানায়, এই স্থলবন্দর মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গেই সিংহভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। এখন মংডু এলাকায় সহিংসতায় তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে অল্পসল্প আমদানি-রপ্তানি চলছে, তা মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরের সঙ্গেই হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ বন্দরটি যে কোনো সময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতে পারে।
তিনি আরো জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি থাকলে আমদানি নির্ভর টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, মিয়ানমার থেকে এই বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ৯৫ ভাগ পণ্যের মধ্যে রয়েছে, চাল, মাছ, শুঁটকি, কাঠ, গরু, আদা, রসুন, পিয়াজ, আচার, শুকনো বড়ই ও বাঁশ। অন্যদিকে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের ৫ ভাগের যে রপ্তানি পণ্য রয়েছে তা হলো প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, ঔষধ, সেমাই, লম্বা চুল ইত্যাদি
ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমদানি-রপ্তানি করা এসব পণ্যে শুল্ক হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ পায় ২৮ দশমিক ৯০ টাকা। গত ২৫ আগস্টের পর মংডু থেকে যেসব পণ্য আমদানি করার কথা ছিল তা এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। মংডু থেকে ২৪ আগস্টও ১৩টি ট্রলারভর্তি পণ্য আসে এই বন্দরে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ওই ট্রলারগুলোও আর যায়নি। এখন আমাদের যতটুকু আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে তা আকিয়াব থেকে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, গত এক মাসে এই স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে প্রায় ৮০ ভাগ। যে ২০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে তা বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময়ে শূন্যের কোটায় নেমে আসবে, বন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে যে ব্যয় হয়, তাও উঠে আসা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় গত ২৪ আগস্ট থেকে আরাকান রাজ্যে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন।
টেকনাফ কাস্টমস কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, গত আগস্টে দেড় কোটি টাকার বেশি আমদানি শুল্ক আদায় হলেও চলতি মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ৫৭ লাখ তিন হাজার ৬৩৫ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার আংশিক।
টেকনাফ সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, টেকনাফের সঙ্গে মংডু স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন পুরোপুরিই বন্ধ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ