Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কাউন্সিলরের অর্থ উপার্জনে ৪ বছর পার

প্রতিশ্রæতি ভুলে কেসিসি’র অধিকাংশ

| প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থ নয়; জনগনের জন্য কাজ করে জনসেবক হওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তবে প্রতিশ্রæতি ভুলে অধিকাংশ কাউন্সিলর অর্থ উপার্জনেই চার বছর কাটিয়েছেন বলে অভিযোগ ভোটারদের। টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, লাভজনক ইজারা হাতিয়ে নেয়া, নিজ এলাকার নির্মাণ কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন, বেনামে ঠিকাদারীতে মানহীন কাজ, জবর দখল, নিয়োগ বাণিজ্য ও মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া কতিপয় কাউন্সিলরের রুটিনওয়ার্ক। অর্থ-বিত্ত-বৈভব্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে জনবিচ্ছিন্নও হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই। ক্লিন-ইমেজে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের এলাকায় কথা বললে এমনি অভিযোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে থেকে। অবশ্যই সৎ ও ন্যায়পারায়ন কাউন্সিলরও রয়েছেন কেসিসিতে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহানগরী ও ফুলতলা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ঠিকাদারী, দখলবাজী ও শালিসী বৈঠক করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরীর ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সালামের ভাই মোঃ নূর ইসলাম ২নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সাহেদা বেগমের সচিব। ভাই কাউন্সিলর হবার সুবাদে নিজে কাজ না করে অন্য একজনকে দিয়ে দায়সারা কাজ করান তিনি। ফলে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হন ওয়ার্ডবাসী। দৌলতপুর থানার একাধিক কাউন্সিলর প্রত্যক্ষ-পরাক্ষভাবে ঠিকাদারী কাজ করে। মানহীন কাজ, আবার কাজ না করেও বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছিল একাধিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রায়ত্ব জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী খালিশপুরের একজন কাউন্সিলর হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন। খালিশপুরের একাধিক ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবার অভিযোগ এলাকাবাসীর। সর্বশেষ কোরবানীর পশুর হাট পরিচালনা করে বিপুল অংকের অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে খালিশপুরের একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। সাবেক মেয়রের আস্থাভাজন একাধিকবার নির্বাচিত ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ সম্মেলনে মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, জবর দখল ও সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনার অভিযোগ উঠে। একই পরিবারের দু’জন জনপ্রিয় কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র হওয়ায় কেসিসি’র বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা তাদের-ই হাতের মুঠোয়। ঘাট এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের একজন কাউন্সিলর নগর ভবনের টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, মানহীন ঠিকাদারী কাজে ও জবর দখলে সিদ্ধহস্ত। বাজার ও ঘাট শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজস্ব বাহিনীও রয়েছে তার। সোনাডাঙ্গা থানাধীন এলাকার একজন কাউন্সিলর বেনামে এজারা নিয়ে গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক পরিচালনা করছেন। ক্লিন ইমেজে তিনবার নির্বাচিত ওই কাউন্সিলর বিশেষ পরিবারের পরিচয়ে কেসিসিতে টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। তার পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একাধিক হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামী। তিনি অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন। নামেই এখনো ত্রাস সৃষ্টি হয় নগরীতে। টুটপাড়ার এনকে দাশ লেন সংস্কার কাজে ক্লিয়ারেন্স আটকে রেখে ঠিকাদারের হাত থেকে নগদ অর্থ নিয়েছেন একজন কাউন্সিলর। অনেক ক্লিন ইমেজ থাকলেও কাউন্সিলর সামান্য শালিস-বিচারও করতে পারেন বলে অভিযোগ রয়েছে লবনচরাবাসীর।
এছাড়া কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ রয়েছে। যেমন-নিজ এলাকায় নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী করা। অন্য কেউ কাজ করলে কমিশন ব্যতীত ক্লিয়ারেন্স না দেয়া, পরিবারের নামে-বেনামে ঠিকাদারী লাইসেন্স, মানহীন ঠিকাদারী কাজ করা, কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ না করেও বিল তুলে নেবার অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। এছাড়া কেসিসি’র টেন্ডার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ,সর্বশেষ কোরবানীর পশুরহাটের আদায়কৃত হাসিলের বিশাল অর্থ ভাগবাটোয়ারা, জবর দখল ও মাদক বিক্রেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় নেবার অভিযোগ রয়েছে সাধারণ ভোটারদের। নামে-বেনামে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। এসব কাজ পছন্দ করেন না বলে নিয়মিত নগর ভবনেই যাতয়াত ছেড়ে দিয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলর।
অপরদিকে, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কতিপয় মহিলা কাউন্সিল সুযোগ সন্ধানী ভূমিকায় থাকেন। ঝোঁপ বুঝে কোপ মারার মতোই মুখিয়ে থাকেন সুযোগের। সুযোগ-সুবিধা মতো সাধারণ কাউন্সিলরদের সাথে ঠিকাদারী ভাগাভাগী ও নিয়োগ বাণিজ্যে যুক্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের মধ্যে যিনি যতো জেষ্ঠ্য, তিনি ততো বড় সুবিধাবাদী।
এ প্রসঙ্গে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, “নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি যদি জনপ্রতিনিধিরা সারাবছর মনে রাখতেন, তাহলে উন্নয়নে জনগনের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে। আর নির্বাচনকালীন কমিটমেন্ট ভুলে গেলে জনপ্রতিনিধিরা জনসেবার চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি ঝুকে পড়েন। কেসিসি’র কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে পেরেছেন কি না, তা আগামী নির্বাচনেই স্পষ্ট হবে। যদিও অনেক ন্যায়পরায়ন ও সৎ কাউন্সিলরও রয়েছেন আমাদের।”
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, “কেসিসি যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। আবার প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন; মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রত্যেকেই স্বাধীন। ব্যবস্থাপনাটি যৌথ কিন্তু প্রত্যেকেই স্বাধীন। এমনটি হলে কাউন্সিলররা আত্মকেন্দ্রিকতা চলে আসে। সেই আত্মকেন্দ্রিকতা তাকে দুর্নীতিগ্রস্থ করে তুলতে পারে। এ সুযোগটা তার থেকে যায়। তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে। তারা তো ভুলে যান নির্বাচনে জনগনের কাছে দেয়া প্রতিশ্রæতি!” প্রসঙ্গত্ব, কেসিসি’র রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমান পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে হিসেবে গত মঙ্গলবার চার বছর মেয়াদুত্তীর্ণ হয়েছে। মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে তফসিল ঘোষণার বিধান রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ