Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহী আওয়ামী লীগে স্নায়ু যুদ্ধ দলের নয় এমপি লীগের রাজনীতি

| প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু, রাজশাহী ব্যুরো : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজশাহী আওয়ামীলীগের মধ্যে শুরু হয়েছে স্নায়ু যুদ্ধ। কোথাও কোথাও আবার বিরোধ প্রকাশ্যে লাভ করেছে। বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে এতদিনের ছাইচাপা আগুন যেন তেজ ছড়াতে শুরু করেছে। একে অপরকে সাইজ করতে তৎপর। দলের মধ্যে চলছে মেরুকরন আর নিজ শক্তি প্রদর্শন। টার্গেট আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। যারা এক সময় এমপির নিশান বরদার ছিল। তার ছায়ায় ফুলে ফেপে ওঠে এখন তাদের চোখমুখ খুলে গেছে। তারাই এখন বিরোধীর ভুমিকায় অবর্তীন।
রাজশাহীর ছয় সংসদীয় আসনের প্রায় সবকটিতে রয়েছে হাইব্রীড এমপি। অভিযোগ রয়েছে এরা অতীতে দলের সাথে জড়িত না থাকলেও অর্থ আর প্রভাবের জোরে হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করে ত্যাগি পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে আসে ২০০৮ সালে। এরপর থেকে শুরু হয় নব্য এমপিদের আধিপত্য বিস্তারের তৎপরতা। সুযোগ সন্ধানীরা ভিড়ে যায় এদের আশেপাশে। আর ত্যাগি নেতাকর্মীরা এদের কনুইয়ের গুতোয় চলে যায় সাইড লাইনে। শুরু হয় আওয়ামী লীগের নয় এমপি লীগের রাজনীতি। ক্ষমতা আর টাকার জোরে এসব হাইব্রীড নেতারা হয়ে ওঠেন দৌর্দান্ত প্রভাবশালী। সাধারণ মানুষতো দুরে থাক দলীয় নেতাকর্মীরা এদের কাছে ঘেষতে পারেনা। আবার এলাকায় কারো কারো দেখা মেলে কদাচিত। অন্যদিকে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। যারা তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করবে। ফলে সাধারণ মানুষ অসহায়। আওয়ামীলীগ নয় এমপি লীগকে শক্তিশালী করতে কোথাও কোথাও অনুপ্রবেশ ঘটেছে সর্বহারা, জেএমবি, শিবির ক্যাডারসহ নানা অদ্ভুত কিসিমের মানুষের। আর এরা সাংঘাতিক দাপুটেও। যাদের অপকর্মের কারনে আওয়ামীলীগের ভাল অর্জন চলে যাচ্ছে বিসর্জনে। ক্ষুব্ধ দলের পুরানো সমর্থক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকের কন্ঠে ক্ষোভের সুর ‘‘ওরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেনা’’। নিয়োগ বাণিজ্য থেকে ত্রাণ সবকিছুতে লুটপাট। খাসজমি পুকুর সবি গিলে খেয়েছে। খাই খাই ভাব তাদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। এক সময় যারা এসবের মধ্যে ছিল তাদের কেউ কেউ বিক্ষুব্ধ হয়ে বিরোধিতায় নেমেছে। তাদের কন্ঠে বেরিয়ে আসছে অপকর্মের বিবরন। এরা দাবী জানাচ্ছে আগামী নির্বাচনে এদের আর মনোনয়ন না দেবার। আবার ভিন্ন চিত্র রয়েছে এদের কেউ কেউ এমপির ঘনিষ্ট সহচর থাকলেও এখন অর্থবিত্ত হওয়ায় তাদেরও প্রার্থী হবার বাসনা জেগেছে। তারাও মাঠে নেমেছে। এনিয়েও বিরোধ বাধছে।
রাজশাহী-১ (তানোর- গোদাগাড়ী) আসনে এমপি রয়েছেন শিল্পপতি ওমর ফরুক চৌধুরী। প্রথম দফায় এমপি হয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তানোরের জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় চলনে বলনে তার প্রভাব সুস্পষ্ট। মেজাজটা একটু চওড়া। পরবর্তীতে মন্ত্রীত্ব হারান। এখানেও দলের মধ্যে কোন্দল প্রকট। আওয়ামীলীগের নয় এমপি লীগের রাজনীতি চলে।
রাজশাহী-২ সদর আসনে এমপি রয়েছেন জোটের শরীক ওয়াকার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। শুরুটা ভাল হলেও এখন স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাথে সর্ম্পকে ফাটল ধরেছে। আওয়ামীলীগ নেতারা নানা অভিযোগ তুলে এ গুরুত্বপূর্ন আসনটি নিজেদের ঘরে রাখতে চাইছে। আর এনিয়ে এক সময়ের মধুর সর্ম্পক গড়াচ্ছে তিক্ততার দিকে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) নগরীর উপকন্ঠের এ আসনে বিগত নির্বাচনে এমপি হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। এর আগে এমপি ছিলেন মেরাজ মোল্লা। নানা কারণে সমালোচিত হয়ে দল থেকে ছিটকে পড়েন। ভাগ্য খুলে যায় আয়েন উদ্দিনের। বিগত নির্বাচনে মেরাজ মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান আর আয়েন উদ্দিন আওয়ামী লীগের। ভোটে নিজেরা নিজের খেলা করেন। আয়েন নির্বাচিত হন। এ আসনটির দিকে আওয়ামী লীগের অনেকের নজর। আর এনিয়ে বিরোধ বাড়ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ বেশ কজন তৎপর। এনিয়ে চলছে ¯œায়ু যুদ্ধ।
রাজশাহী-৫ (বাগমারা) সর্বহারা জেএমবি অধ্যুষিত এলাকা এক সময় রক্তাক্ত জনপদ হিসাবে খ্যাত ছিল। এক সময় এখানকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন সরদার আমজাদ হোসেন। তার মৃত্যুর পর এটি হাইব্রীডদের দখলে চলে যায়। বিএনপি, আওয়ামীলীগ সব আমলে মনোনয়ন দেয়া হয় ধনকুবেরদের। সেই সূত্রে বিএনপির সময় এমপি হয়েছিলেন প্রকৃচি নেতা আবু হেনা। এরপর আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। রাজনীতিতে নতুন হলেও ধনের জোরে চমক সৃষ্টি করেন। বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়েন। পুরানো নেতাকর্মীরা ছিটকে গেলেও শূন্যস্থান পুরন করে সুযোগ সন্ধানীরা। এতদিন ভালই চলছিল। হঠাৎ করে ছাইচাপা আগুন জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। হামলা মামলাসহ নানা অনিয়ম দূনীতির কথা বাতাসে ভাসছে। এমনকি সাংবাদিক সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তীর ছোঁড়া হয়েছে। এনিয়ে চলছে বাদ প্রতিবাদ। দিন যত যাবে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে এটা এখনি আঁচ করা যাচ্ছে।
রাজশাহী-৫ (দূর্গাপুর-পুঠিয়া) এখানে দলের দু:সময়ে এমপি হয়েছিলেন প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক। পরবর্তীতে এমপি হয় বিএনপির নাদিম মোস্তফা। এরপর রাজনৈতিক সিডরে বিএনপি তছনছ হয়ে গেলে অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মত আসেন শিল্পপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। বিত্তের জোর ও সাংগঠনিক কারণে এমপি হন। এরপরের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। ভাই চাচাসহ নানাজনের অপকর্মের কারণে বির্তকিত হয়ে ওঠেন অল্প সময়ের মধ্যে। এসব নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। পরের দফায় ফাঁকা মাঠে ফের নির্বাচিত হয়ে যান। হয়ে পড়েন বাধাহীন। নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে আভ্যন্তরীন কোন্দলেও চরমে ওঠে। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ যায় হাইকমান্ডে। সম্প্রতি শোক দিবসের অনুষ্ঠান নিয়ে পুঠিয়ায় ঘটে অপ্রিতিকর ঘটনা।
রাজশাহী-৬ আসন (চারঘাট-বাঘা) আসনটিতে বেশীর ভাগ সময় এমপি হয়েছেন এলাকার বাইরে অবস্থানকারী মানুষ। ডা: আলাউদ্দিনের পর এমপি হন বিএনপির আজিজুর রহমান, এ্যাড, কবির হোসেন। এলাকার রায়হান উল আলম এমপি হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে নগরী থেকে হাজির হন শিল্পপতি শাহরিয়ার আলম। এখানে দলের আভ্যন্তরীন কোন্দল মোটেই কম নয়। বহিরাগত দুর্নাম ঘোচাতে শাহরিয়ার আলম বাঘায় বাড়ি করেছেন। বিগত নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে দলের প্রার্থী ছিল বিদ্রোহী হিসাবে। নির্বাচনের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়ে লাইম লাইটে চলে আসেন। কিন্তু দলের কোন্দল নিরসন করতে পারেননি। নিজেকেও পারেননি সবার কাছে তুলে ধরতে। তাই ছাপাচাপা আগুন জ্বলছে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে তা ফের জ্বলে উঠতে শুরু করেছে। রাজশাহীর সব আসনের এমপিরা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। মহল বিশেষ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এখন অপপ্রচারে নেমেছে। এরা দলের মিত্র নয়। তবে সবঠিক হয়ে যাবে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ