পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শেখ হাসিনাকে হত্যার ‘ব্যর্থ চেষ্টা’এবং তাতে বিএনপিকে জড়িয়ে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে খবরের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল (সোমবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিদেশি একজন সাংবাদিক, তার তোড়জোড়, তার কথা-বার্তা, তার আর্টিক্যাল লেখা, সব কিছুতে মনে হচ্ছে, একটা যৌথ প্রযোজনায় কোনো কিছুর কাজ হচ্ছে। স¤প্রতি মিয়ানমারের ইন্টারনেট সংবাদপত্র মিজিমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর হামলার একটি ব্যর্থ চেষ্টার খবর আসে, যা পরে ভারতের সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার ও প্রকাশ হয়। তার সূত্র ধরে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমেও বিষয়টি আসে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই ধরনের খবর ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনটি যিনি করেছেন, সেই সুবীর ভৌমিকের বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান রিজভী।
তিনি বলেন, এত বড় দুঃসাহস তার হয় কী করে যে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে নোংরা কথা বলতে পারেন। আপনারা দেখেছেন, কী জঘন্যভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা কাহিনী রচনা, রূপকথা রচনা করে একের পর এক ওয়েবসাইটে বা বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন অথবা আর্টিক্যাল লিখছেন। এটা বিএনপির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে চালানো ‘অপপ্রচারের’ অংশ। এই ধরনের ঘৃণ্য অপপ্রচার একটা গভীর ষড়যন্ত্র। এর সাথে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা জড়িত। এই চক্রান্ত রোখার জন্য তিনি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আহŸান জানান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে এই বিএনপি নেতা বলেন, তাহলে এটা নিশ্চিত যে কাজগুলো যারা করছেন তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছেন, একটা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করছেন সুবীর ভৌমিকসহ অন্যান্যরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে খবরটি নাকচ করার আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভিন্ন রকম বক্তব্যে সরকারের স্ববিরোধিতার প্রকাশ ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে বলতে চাই বাকশাল নামক জিনিসটি কী? তিনি বলেন, আসলে শেখ হাসিনার সজ্ঞানুযায়ী গণতন্ত্র বলতে বুঝতে হবে সব দলের কর্মকান্ড বন্ধ করে দিয়ে একক কর্তৃত্বে একমাত্র দল দেশ চালাবে, ভিন্ন মত থাকবে না, গণমাধ্যম সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণে থাকবে, নির্বাচনের অর্থ হবে ভোটকেন্দ্র ভোটারবিহীন শ্মশানভূমি, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীবিহীন নির্বাচন। এই সজ্ঞার সাথে একমতকারীদেরকেই প্রকৃতপক্ষে জনগণ বলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন। সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারীদেরকে তিনি জনগণের অংশ বলে মনে করেন না।
রিজভী বলেন, ভয়েস অব আমেরিকাকে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু নিজ দেশবাসীর কাছেই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও এটি হাস্যকর ও ধাপ্পাবাজিমূলক বক্তব্য বলে মানুষ গণ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে ধ্বংস করেন। দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারাটা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আজ নির্বাচন যত সুষ্ঠু হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে পারছে-এটা আমাদের অবদান। মানুষ তার পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি ইত্যাদি।” প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশবাসী বিস্ময়ে বাক্যহারা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত তাদের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সবগুলোই ছিল নিখূঁত সরকারী সন্ত্রাসনির্ভর। জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদানসহ ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক নির্বাচনে পারদর্শী আওয়ামী লীগ। বারবার বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে সরকারের রাবারস্ট্যাম্প। আমরা বলতে চাই-মিথ্যাচার করে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। হাসিনা মার্কা নির্বাচনের আরেকটি জলন্ত উদাহরণ গতকালই (রোববার) প্রমানিত হয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
পুনরায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) পাইকারিতে প্রায় ১৫ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যে হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কার্যকর করা হলে শিল্পকারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। মিলকারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ চাকরিজীবী বেকার হয়ে যাবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলে এর চেইন রিএ্যাকশনে শিল্প উৎপাদন, শিল্প বহুমূখীকরণ, অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, মানুষের গৃহস্থালীসহ ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ মন্তব্য করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির এই নেতা বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে-রাজধানীর বাসিন্দাদের বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। ক্ষেত্র বিশেষে ট্যাক্স বাড়ানোর হার তিন থেকে দশ গুণ পর্যন্ত। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরীর বাসিন্দারা। উপায় খুঁজতে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে ধরণা দিচ্ছেন তারা। একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে হিমশিম খাচ্ছেন অন্যদিকে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঢাকাবাসীর ওপর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীবাসীর বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। এর ফলে ঘরভাড়া বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাপনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। সৃষ্টি হবে চরম বিশৃঙ্খলা। একই সঙ্গে আমরা রেলের ভাড়া ভাড়া ও রেশনের চাল ও গমের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবেরও প্রতিবাদ জানান তিনি। বর্তমান সরকার গণবিরোধী ও ভোটারবিহীন সরকার বলেই জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপরই করারোপ করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, লুটপাটকে আরো তীব্র মাত্রায় অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের ওপর মাত্রাতিরিক্ত কর বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকার লোকদেখানো ঢাউস বাজেট দিয়ে এখন বাজেটের বিশাল ঘাটতি মেটাতে জনগণের ঘাড় মটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।