Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলিন্ডারে গ্যাসের বদলে পানি

প্রতারিত গ্রাহকরা

মো: আকতারুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাইচ্ছুটি এলাকায় অবস্থিত ইউনিভার্সাল প্লান্টে বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
অভিযোগে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বসুন্ধরা, যমুনা, বিএম, ওমেরা, বিএসবি, পদ্মা, টোটাল কোম্পানীর গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার বেশি ব্যবহার হয়। এ সুযোগে ইউনিভার্সাল প্লান্টে তাদের নিজস্ব ইউনিভার্সাল সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলপিজি নীতি অনুসারে অন্য কোম্পানীর সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করা অবৈধ। নীতির তোয়াক্কা না করেই ইউনিভার্সাল প্লান্টে অহরহ ক্রস ফিলিং করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার ক্রস ফিলিংকৃত গ্যাসভর্তি বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডার আটক করেছে কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসাররা। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিভার্সাল প্লান্ট থেকে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডারের মুখ সিল করা নেই। শুধুমাত্র প্লাস্টিক লাল ক্যাপে মুখ আটকানো থাকে। ওজন ১২ কেজি নিশ্চিত হয়ে দোকান থেকে গ্রাহকরা গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার ক্রয় করেন। কয়েকদিন ব্যবহার করার পর দেখা যায় সিলিন্ডার থেকে আর গ্যাস বের হচ্ছে না। এতে গ্রাহকদের সন্দেহ হয়। এক গ্রাহক ডিলারের দোকানে সিলিন্ডার নিয়ে গেলে ওজন দিয়ে দেখা যায়, তখনও সিলিন্ডারে ৩ কেজির মত গ্যাস রয়েছে। কিন্তু চুলা জ্বলছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানি তাকে জানান, ‘ওই ৩ কেজি তরল গ্যাস নয়, সিলিন্ডারের নিচে পানি রয়েছে।’ আপনার ভাগ্য খারাপ বলে দোকানি তাকে সান্তনা দেয়। দোকানি জানালেন, এভাবে বেশ কিছুদিন ধরে সিলিন্ডারে গ্যাসের সাথে পানি পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে চল্লিশ হাজারেরও বেশি এলপি গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় অধিকাংশ বাজার দখল করে আছে বেসরকারি এলপি গ্যাসের কোম্পানিগুলো। বাজারে বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে বসুন্ধরা, টোটাল, যমুনা, ওমেরা, পদ্মা, বিএম এবং ইউনিভার্সাল নামে ৭টি কোম্পানির গ্যাস পাওয়া যায়। খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিভার্সালে ফিলিং করা সিলিন্ডারে পানি পাওয়া যায়। একটি সিলিন্ডারে ১২ কেজি গ্যাসের স্থানে ৩ থেকে ৪ কেজি পানি ভরা থাকলে একজন গ্রাহককে অন্তত আড়াইশ’ থেকে ৫’শ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে।
ক্রেতাদের নিকট থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ১০ শতাংশ সিলিন্ডারে পানি পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ভিতরে পানি থাকায় নির্ধারিত ১২ কেজি ওজন ঠিকই থাকে। সিলিন্ডারের মুখ প্লাষ্টিক ক্যাপে বন্ধ করা থাকে। কিন্তু যে সিলিন্ডার এক থেকে দেড় মাস চলার কথা, তা যখন ১০-১৫ দিন চলার পর অচল হয়ে পড়ে তখনই গ্রাহকদের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয়।
গত ২২ আগস্ট পদ্মা এলপি গ্যাসের পরিবেশক নাঙ্গলকোটের শাকিল যমুনাসহ অন্যান্য কোম্পানীর সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করে আনার পথে যমুনা এলপি গ্যাসের পরিবেশক বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক হাজী মোস্তাফিজুর রহমানের লোকজন ঢাকা মেট্রো ন-১৮-৩৭৮২ নাম্বারের একটি পিকআপ ভ্যান তল্লাশি করে ভেজাল রিফিল করা ১২টি যমুনা সিলিন্ডার উদ্ধার করে। এরপর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে থামাচাপা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পদ্মা এলপি গ্যাসের পরিবেশক মো. শাকিল তার গাড়িতে ১২টি যমুনা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার উদ্ধারের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আসলে ওই সিলিন্ডারগুলো আমাদের লেভার (শ্রমিক) তুলে নেয়। কিন্তু কেন নিল তা আমি জানি না। এছাড়াও তিনি তার কোম্পানীসহ অন্যান্য কোম্পানীর সিলিন্ডার ইউনিভার্সাল গ্যাস প্লান্ট থেকে রিফিল করার বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যমুনা এলপি গ্যাসের পরিবেশক বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের সত্ত¡াধিকারী হাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যমুনার সিলিন্ডার যমুনা প্লান্টে বায়ু ও পানিশূন্য করার পরেই তাতে গ্যাস ভর্তি করা হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অসাধু একটি চক্র যমুনার সিলিন্ডার ব্যবহার করে এ ধরনের অনৈতিক কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে যমুনা এলপি গ্যাসের চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলার মার্কেটিং অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউনিভার্সাল গ্যাস প্লান্টে আমাদের কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানীর সিলিন্ডারে ক্রস ফিলিং করার অভিযোগ পেয়েছি। গত ৫ আগস্ট ইউনিভার্সাল প্লান্ট থেকে গ্যাস ভর্তি করে বের হওয়া নোয়াখালীর রায়পুরের তারেক এন্টারপ্রাইজ, জয়নাল এন্টারপ্রাইজ, দত্তেরহাটের টু স্টার, ফেনীর ছাগলনাইয়া মীর্জা এন্টারপ্রাইজের গাড়ি আটক করি। এতে যমুনা, বিএসবি, পদ্মা কোম্পানীর অনেক সিলিন্ডার পাওয়া যায়। ৫ সেপ্টেম্বর চৌদ্দগ্রামের খিরণশাল বাজারের ইউনিভার্সাল গ্যাসের ডিলারের একটি আটক করলে সেখানেও অনেকগুলো লালক্যাপে যমুনা সিলিন্ডার পাওয়া যায়। যা কোম্পানী আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে শনিবার বিকেলে ইউনিভার্সাল গ্যাসের মার্কেটিং অফিসার মোঃ হেলাল উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল করলে তিনি প্রথমে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আপনি প্লান্ট ম্যানেজারের সাথে কথা বলুন। তাকে প্লান্ট ম্যানেজারের মুঠোফোনের নাম্বার দিতে বললে তিনি পরে ম্যাসেজ করে দিবেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পর তাকে ম্যানেজারের নাম্বারের জন্য কল করলে তিনি জানান, ভাই প্লান্টের ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। আপনাকে প্লান্টে গিয়ে তার বক্তব্য নিতে বলেছে। এরপর তিনি আরও বলেন, আগে অন্য কোম্পানীর সিলিন্ডার রিফিল করতো। এখন অন্য কোম্পানী সিলিন্ডার রিফিল করে না বলেও তিনি দাবি করেন।



 

Show all comments
  • মানিক ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৫৯ পিএম says : 0
    কিছু বলার নাই
    Total Reply(0) Reply
  • shahidul islam ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:৩৫ পিএম says : 0
    dudok ki kore?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিলিন্ডার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ