Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জার্মানিতে ম্যার্কেলের ফাঁপা বিজয়

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাস্তায় হাজারো মানুষের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ
নির্বাচন শেষে এঙ্গেলা ম্যার্কেল যখন তার দলীয় কার্যালয়ে আসেন, সে সময় তাকে বেশ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত মনে হচ্ছিল। গাড়ি থেকে নেমে তিনি যখন দলীয় অফিসের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন ক্যামেরার সামনে দিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে যান। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু যেভাবে তিনি জয়লাভ করেছেন, সেটি তার জন্য কাক্সিক্ষত ছিল না।
নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ম্যার্কেলের নেতৃত্বে তার দল এতোটা খারাপ ফলাফল এর আগে কখনো করেনি। ১০ লাখ শরণার্থীর জন্য জার্মানির দরজা খুলে দেবার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছিলেন, সেটিকে অনেকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। সেজন্য নির্বাচনের ফলাফল চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের আশা অনুযায়ী হয়নি।
দলীয় ফোরামে বক্তব্যের সময় চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেন, গত চার বছর তারা কঠিন সময় পার করেছেন। ইমিগ্রেশন বিরোধী দল এএফডি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। শুধু ইমিগ্রেশন বিরোধী নয়, একই সাথে এ দলটি ইউরো বিরোধী।
এ দলটি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছে এবং একই সাথে জার্মান পার্লামেন্টে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ দলটির অন্যতম নেতা আলেকজান্ডার গুয়াল্যান্ড এখন সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, তার দল ম্যার্কেলকে তাড়িয়ে বেড়াবে। বার্লিনের রাস্তায় একজন বলছিলেন, ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীদের উত্থানে তিনি আতঙ্কিত।
তিনি বলছিলেন, ‘তারা হিটলারের নাৎসীদের মতো। ১৯৩৯ সালে আমার জন্ম। আমি একজন যুদ্ধ শিশু। আমি তাদের ঘৃণা করি। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে আমি বেড়ে উঠেছি। আমি এঙ্গেলা ম্যার্কেলকে চাই’।
সরকার গঠনের জন্য এঙ্গেলা ম্যার্কেলকে রাজনৈতিক জোট গঠনের মাধ্যমে অন্য দলের সমর্থন নিতে হবে। দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে যে জার্মানিকে নেতৃত্ব দেবার জন্য তিনিই যোগ্য ব্যক্তি।
এঙ্গেলা ম্যার্কেল নির্বাচনের জয়লাভ করলেও, এটা তার কাছে বিজয় উদযাপনের মতো নয়। জার্মানির এ নির্বাচন দুটো কারণে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। এঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থ দফা নির্বাচনে জয়লাভ করলেও তার নেতৃত্বে এটি সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। এছাড়া এ নির্বাচনের মাধ্যমে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীরা এখন জার্মানির একটি অংশ হয়ে গেলো।
জার্মানির রাস্তায় হাজারো মানুষের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ
জার্মানির পার্লামেন্টে কট্টর ডানপন্থী দল এএফডির প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই ফ্যাসিবাদ-বিরোধীদের আন্দোলনে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই হাজারো ডানপন্থী সমর্থক রাস্তায় নেমে ম্যার্কেল বিরোধী সেøাগান দিতে থাকে।
প্রতিবাদকারীরা ‘মুতি ম্যার্কেল আমার মা নন’, ‘ম্যার্কেলকে জেলে পাঠানো উচিত’ সহ নানা জাতীয়তাবাদি ও সহিংস ব্যানার উত্তোলন করে ও সেøাগান দেয়। তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। তারা জাতীয় সংগীতের তালে তালে বলতে থাকে, ‘আমরা এবার ফিরে পাব আমাদের দেশকে, ফিরে পাব মানুষকে।’ এছাড়া জার্মানিতে এএফডির বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থী নেত্রী ম্যারিন লি পেন।
এএফডির অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ডের ১৩ শতাংশ ভোট ও সংসদে ৮৮ আসনে প্রতিনিধিত্ব করার কারণ হিসেবে ম্যার্কেলের যৌথ সহযোগী এসপিডির নেতা মার্টিন শুলৎজ বলেন, ‘লাখ লাখ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার নীতি জার্মানিকে বিভক্ত করে ফেলেছে।’ কারণ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ ও প্রযুক্তির মত বিষয়ে এএফডি দলের স্পষ্ট অবস্থান নেই। কিন্তু শরণার্থী ও অভিবাসীদের কারণে জার্মানির মূল সংস্কৃতির অবক্ষয়, ইসলাম-বিরোধিতা ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের হাতে মূল ক্ষমতার মতো বিভাজনমূলক বিষয়কে হাতিয়ার করে তারা এই সাফল্য দেখিয়েছে। নির্বাচনের সময় দলটি ‘ইসলাম জার্মানির অংশ নয়’ দাবি করে প্রচারণা চালিয়েছে।
এসপিডির তিন সমর্থক ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন চার বছর আগের তুলনায় ১৪ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে। তাই ম্যার্কেল নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ডানপন্থীদের প্রতি অবাধ সমর্থন ও তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের এই নেত্রীর। বলতে গেলে তাকে এখন গুরু হেলমুট কোলের একত্রিক করা জার্মানিকে আবার নতুন করে সংঘবদ্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে তিনি বলেছেন, তিনি অবশ্যই নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির দ্বারা জার্মানিকে সুসংহত রাখবেন। সূত্র : ডেইলি মেইল, দ্য সান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জার্মান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ