Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতিরিক্ত করের বোঝায় বিপাকে বিএটিবি

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানী লিমিটেড (বিএটিবি)। এনবিআর’র বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) ২০১৩ সালের নভেম্বরে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করার দায়ে ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার ভূতাপেক্ষ দাবীনামা বিএটিবি’র বিরুদ্ধে জারী করে। তবে এলটিইউ কমিশনার (মূসক) নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে সিগারেট বিক্রির কোন তথ্য প্রদান করতে পারেনি। তারপরও এলটিইউ কমিশনারকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে দাবিনামা জারি করতে বাধ্য করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিএটিবি’র মতে, অতিরিক্ত ভূতাপেক্ষ কর দাবি করা অযৌক্তিক ও বেআইনি। এই দাবীনামার অতিরিক্ত কর তারা কখনই ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করেনি। তাই এই অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে এবং এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, যা দেশে বৈদশিক বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিবেশের তৈরি করবে। একই সঙ্গে সরকারের বিনেয়োগ বৃদ্ধির প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
সূত্র মতে, প্রতিযোগী এক কোম্পানীর মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) নভেম্বর ২০১৩ সালে (জুলাই ২০০৯ থেকে জানুয়ারি ২১০৩ পর্যন্ত নি¤œ মূল্য স্তরের ব্রিস্টল ও পাইলট সিগারেটের বিক্রয়ের উপর) ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার ভূতাপেক্ষ দাবীনামা বিএটিবি’র বিরুদ্ধে জারী করে। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) এর মতে, বিএটিবি যদি নি¤œ মূল্যস্তরের উল্লেখিত সিগারেট অনুমোদিত মূল্য থেকে বেশি দামে অর্থাৎ মধ্যম মূল্য স্তরে বিক্রি করতো তাহলে এনবিআর ১৯২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত কর পেতো। তবে তৎকালীন এলটিইউ কমিশনার (মূসক) এনবিআরকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলো যে, ভোক্তাদের কাছ থেকে বিএটিবি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক অধিক দামে সিগারেট বিক্রি করেছে এর যথাযথ প্রমানাদি তার কাছে নেই। তারপরও বিভিন্নভাবে চাপ সৃস্টি করে তৎকালীন এলটিইউ কমিশনারকে দাবীনামা জারি করতে বাধ্য করা হয়।
সূত্র মতে, এনবিআর’র বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) অনুমোদিত মূল্যের ভিত্তিতেই বিএটিবি তার সকল সিগারেট নির্ধারণ করে বাজারজাত করে আসছে। যদিও মূসক আইনে সিগারেটের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য কোনরুপ রাসায়নিক পরীক্ষা পদ্ধতির উল্লেখ নেই। তাই সম্পূর্ণ কল্পণাপ্রসূত ও নজিরবিহীন রাসায়নিক পরীক্ষার ভিত্তিতে, শুধুমাত্র উল্লেখিত সিগারেটের উপর বর্ধিতমূল্য ভূতাপেক্ষভাবে অতিরিক্ত কর দাবি করা হয়। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) উক্ত রাসায়নিক পরীক্ষাটি বিসিএসআইআর’র মাধ্যমে সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে এই রাসায়নিক পরীক্ষা কোর্টে চ্যালেঞ্জে করলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন এই পরীক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। তাই বিএসটিআই-এ রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ভ্যাট কমিশনারেট বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) কে নির্দেশনা প্রদান করে। পরে বিএসটিআই পরীক্ষা করলে যে রিপোর্ট আসে তা পুরোপুরি বিসিএসআইআর’র চেয়ে পৃথক এবং উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বলে উঠে আসে।
আর তাই ক্রেতা সাধারণের কাছ অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয়পূর্বক অধিক মূসক আদায়ের কোন নজির বা প্রমান উপস্থাপন না করেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিএটিবিকে রাজস্ব ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। যে মূসক কখনও আদায় করা হয়নি। সেই মূসক জমা দেয়ার জন্য দাবীনামা জারী করা অযৌক্তিক। এদিকে গত ৩বছর থেকে এনবিআর’র সাথে বার বার আলোচনার পরও বিষয়টির কোন সুরহা হয়নি। দাবী নামার উপর বিএটিবি উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে স্থগিতাদেশ পায়। পরবর্তীতে বিসিএসআই’র রিপোর্ট বিএসটিআই থেকে ভুল প্রমানিত হওয়ার আগেই হাইকোর্ট সামান্য পরিবর্তন করে আদেশটি বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৬ আগস্ট সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে আদালত শুনানী শেষে দুই মাস সময় মঞ্জুর করেন এবং আগামী ৫ অক্টোবর পুনরায় শুনানীর দিন ধার্য্য করে। তবে আদালতের ভাষ্যমতে এই সময়ের মধ্যে যে কোনো প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার (ভ্যাট) মো. মতিউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই আদালতই একমাত্র বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবে। আমাদের কোন করণীয় নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ