Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘুরে দাঁড়াতেও হোঁচট খাচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

| প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) থেকে রেজাউল করিম : প্রতি বর্ষার শুরুতেই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর দু‘পাড় ভাঙন শুরু হয়। পানি নেমে যাওয়ার সময়ও আবার ভাঙন। চলতি বছরেও ভাঙন দিয়েই শুরু হয় যমুনা ও ধলেশ্বরীর বানের পানি প্রবাহ। কিছুদিন চলতে না চলতে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির ফলে যমুনা ও ধলেশ্বরীর পানি বিপদসীমার দেড়শ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রভাহিত হয়। ওপচে পড়া পানিতে নদীকূলবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে টাঙ্গাইলের ৯টি উপজেলাতেই বানের পানি ঢুকে পড়ে। তবে ৫টি উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এসব এলাকায় লোকসানের পরিমানও বেশি। বিশেষ করে জেলার রোপা আমনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও বারবার হোঁচট খাচ্ছে। দু‘দফায় জমিতে চারা লাগানোর পরও বানের পানিতে তলিয়ে দু‘বারই নষ্ট হয়েছে রোপা আমনের চারা। নিজের পরিবারের আগাম খাদ্য সংকট ভেবে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কৃষক। তৃতীয়দফায় জমিতে চারা রোপন করছে কৃষক। যদিও তিনবার রোপন করা খরচের ক্ষতি তুলতে পরবে না তবু জমি অনাবাদী রাখতে চায় না তারা।
রোপা আমন, বোনা আমন ও কালিজিরা ধানের ক্ষতি কাটিয়ে তুলতে বাড়ির উঠান ও উচু জায়গায় তৈরী করে রেখেছেন বীজতলা। জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তৃতীয়বারের মতো কৃষক ধানের চারা রোপন করছেন। এতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় ব্রীধান ৪৯, বিআর১১ ও বিনাশাইল আগাম জাতের রোপা আমন, বোনা আমন ও সুগন্ধী ধানের। স্থানীয় কৃষি বিভাগও চিন্তিত হয়ে পরে ধানের লক্ষমাত্রা অর্জন নিয়ে। পরে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দেন বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে বীজতলা তৈরীর।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওসমান গনী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয় নিজেদের বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে ব্রীধান ৪৬, বিআর ২২ ও কালিজিরার লেট জাতের ধানের বীজতলা তৈরীর। এজাতের ধান দেরীতে রোপন করলেও অল্প সময়েই ফসল ঘরে তোলা যায়। অনেকেই নিজেদের বাড়ির উঠান ও উচু স্থানে তৈরী করে ফেলেন বীজতলা।
এদিকে ধানের চারা সংকট থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের অনেকে নতুন করে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। অধিকাংশ কৃষক সরকারি সহযোগিতা পাননি বলেও অভিযোগ করেন। সম্প্রতি জেলার একমাত্র কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ধানেরর চারা পাওয়া যাচ্ছে। যেসব চারার প্রতি আটির মুল্য ছিল ২ থেকে ৩ টাকা বর্তমাতে সেই আটি কিনতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ফলে কেউ কেউ এতো মূল্যের চারা কিনে জমিতে ধান রোপন করছে না।
জেলার দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে দেখা গেল জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ায় জমি পুণরায় প্রস্তুত করতে কৃষক ব্যস্ত। কয়েকদিন পানি থাকায় আবর্জনায় ভরে গেছে জমি। আগের চারার লেশ মাত্রও নেই। এসময় জমিতে কাজ করা অবস্থায় থাকা দুলাল মিয়া বলেন, জমিতে চারা লাগানোর চেয়ে জমি পরিস্কার করে উপযুক্ত করতেই বেশি খরচ পড়ছে।
বগুড়া থেকে আসা শ্রমিক ধানের চারা রোপন করছেন। তিনি বললেন এখনকার চারা বিস্তার হবে কিনা সন্দেহ। তবুও জমি যেন অনাবদি না থাকে সেজন্য তাদের মাধ্যমে জমির মালিক আব্দুর রাজ্জাক চারা রোপন করাচ্ছেন।
এদিকে শ্রমিকের মজুরি বেশি। এমনিতে ক্ষতি। তারপরও শ্রমিকের মূল্য ৫শ টাকা। ফলে ঘরের নারীদের চারা উঠাতে ব্যবহার করছে কৃষক। এরকম এক নারী জানালেন, অর্থনৈতিক খরচ বাঁচতে ও দ্রæত জমিতে চারা রোপন শেষ করতে ও পুরুষদের সাহায্য করার জন্য চারা তুলছেন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি স¤প্রসারন উপ-পরিচালক আবু আদনান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩২ হাজার ৩শ ৪৫ হেক্টর জমিতে বোনা আমন রোপন ও ৮১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিই তলিয়ে পতিত হয়ে পড়ে আবাদি জমি। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেছে এখন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুর্নবাসন করা হবে। এছাড়া কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের চারা ও সারসহ অন্যান্য উপকরন বিনামুল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ