পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ : বিশেষজ্ঞদের মত
সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’র ১৭টি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু দেশ আছে উল্টো মেরুতে। কারণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। এসডিজি অর্জনে এই ব্যয় শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের (বিএনএইচএ’র) ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬৭ টাকা মানুষের পকেট থেকে ব্যয় হচ্ছে, যা ২০১২ সালে ছিল ৬৩ শতাংশ। আর সরকার জনপ্রতি ২৩ টাকা, দাতা সংস্থাগুলো ৭ টাকা ও অন্যান্য সংস্থা ৩ টাকা ব্যয় করছে। এদিকে ব্যক্তির জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় ৬৭ টাকার মধ্যে ৪৬ দশমিক ৬ টাকা চলে যাচ্ছে ওষুধপত্র ক্রয়ে। যদিও মানুষের পকেট থেকে ব্যয় বর্তমানে ৭০শতাংশ ছাড়িয়েছে। একই সঙ্গে খরচের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে ওষুধপত্র ক্রয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসডিজি অর্জনে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সর্বজনিন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও এখনো কাজই শুরু হয়নি। তাই অবশিষ্ট ১৩ বছরে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে সন্ধিহান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ জন্য স্বাস্থ্য বীমার কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশ এবং কল্যাণ রাষ্ট্রগুলোতে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা অনেকাংশে বীমার ওপর নির্ভরশীল। ফলে স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত ব্যয় মেটাতে ওইসব দেশের মানুষকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের সব ধরনের উন্নয়নের স্থায়ীত্বের জন্য সবার আগে প্রয়োজন দেশের জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। তাই দেশের সব মানুষকে সর্বজনিন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার বিকল্প নেই। তবে এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত (সরকারি-বেসরকারি) উদ্যোগ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সর্বজনিন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সম্ভব্যতা যাচাইয়ে ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার ৩টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। তিন বছরের জন্য এ প্রকল্প পরিচালিত হবে। এ পাইলট প্রকল্পের ফলাফলের ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সূত্র মতে, বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা পেতে বাংলাদেশের মানুষদের মোট স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়ছেই। দ্রæত স্বাস্থ্য খাত বীমার আওতায় আনতে না পারলে এই খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়তে থাকবে। আর স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতেই মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পড়বে। যদিও জনপ্রতি স্বাস্থ্যব্যয় বেশি যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিএনএইচএ’র রিপোর্টে উঠে এসেছে- সরকারির চেয়ে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা করতে গেলে সবাই নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় তা সম্ভব নয়। এছাড়া চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির একটি অনৈতিক লেনদেনের কারণে রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতিদিনই রোগীর ব্যয় বাড়ছে।
অপরদিকে সামান্য অসুখেও রোগীরা ছোটেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার ঝোঁকও থাকে বেশি। এতে বেড়ে যায় স্বাস্থ্যব্যয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সরকার সর্বজনিন স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি গ্রহনে ইতিবাচক ভূমিকায় আছে। যা অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। তবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ। কারন, শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাহলে এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সম্পূর্ণ বেসরকারি নিয়ন্ত্রনে থাকলে নির্ধারিত অর্থে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাই এটা বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করা সহজ নয়। কারণ দেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পেতে বীমা করতে রাজি নয়। তাছাড়া আগে টাকা দিয়ে পরে সেবা গ্রহনের মনোভাব না থাকা এবং একজনের টাকায় অন্যজনের চিকিৎসা এ বিষয় অনিহা রয়েছে। তাই বীমা নিশ্চিত করতে না পারলে সেবাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। গণস্বাস্থ্যের স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প এর উৎকৃষ্ট উদাহরন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭২ সাল থেকে ‘সামাজিক শ্রেণি ভিত্তিক গণস্বাস্থ্য বীমা’ এবং ‘পারিবারিক স্বাস্থ্য বীমা’ চালু করে স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের আয়ের ওপর ভিত্তি করে ছয় ভাগে ভাগ করে বীমা সুবিধা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে অতি-দরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং ধনী। শ্রেণি ভিত্তিক এই বীমার প্রিমিয়ামের হার (কিস্তি) নূণ্যতম পঞ্চাশ টাকা থেকে তিন হাজার দু’শ টাকা পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৯ টি জেলার ৬১৫টি গ্রামে এ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় ৪৩টি কেন্দ্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে পাঁচটি রেফারেল হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও সাভারে দুটি টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু এসব সুবিধার পরেও গত ৪৫ বছরে বীমা গ্রহণ করেছেন ৯৫ হাজার জন। নবায়নের হার মাত্র ৬ থেকে ৭ ভাগ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য মতে, এ কর্মসূচির আওতায় ২০১৬ সালে ১৯ টি জেলায় ৯৫ হাজার ২৯৬ টি বীমা করেছেন, এরমধ্যে ৬ হাজার ১০৫ জন দ্বিতীয় মেয়াদে বীমা নবায়ণ করেন। বাকি ৮৯ হাজার ১৯১ জন দ্বিতীয় মেয়াদে এই স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণ করেননি। এ থেকে বোঝা যায় এই স্বাস্থ্য সেবার প্রতি জনগণের আগ্রহ একেবারে নেই বললেই চলে। এর আগের বছর বীমা গ্রহনকারী ছিলেন ৯৩ হাজার ৮৯৮ জন।
এ প্রসঙ্গে পানিশাইল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিসংখ্যানবিদ এস এম ফেরদৌস কবীর বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে পুরনো বীমা গ্রহণকারীদের বেশীর ভাগই নবায়ন করেন না। এরা অন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল, ক্লিনিকে সেবা নিতে যায়। কারন হিসেবে তিনি বলেন, নতুন নতুন ক্লিনিক হয়েছে, মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বেড়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে অপেক্ষকৃত দূরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় চলে যেতে পারেন। তাছাড়া কবে অসুস্থ হবে আর কবে চিকিৎসা নেবে এরজন্য আগে থেকে টাকা দেয়ায় পক্ষে নন বেশিরভাগ মানুষ।
তিনি জানান, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষদের বীমা করতে উদ্বুদ্ধ করেন। একটি কার্ডে একটি পরিবারের পাঁচজন করে সেবা নিতে পারে। এমআর আই, সিটিস্ক্যান ও হার্টের অ্যাডভান্স কিছু চিকিৎসা ছাড়া এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে সেবা গ্রহীতারা সবাধরনের পেয়ে থাকেন। তারপরেও বীমায় আগ্রহী নন বেশিরভাগ মানুষ।
অল্প টাকায় স্বাস্থ্য বীমায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্তে¡ও কেন গত ৪৫ বছরে গণস্বাস্থ্যের এই বীমার আওতায় বাড়ছে না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এই বীমার মডেলটি বিশ্বের কোথাও সফল হয়নি। এ ধরণের মডেল দিয়ে গ্রহণযোগ্য বীমা সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। এখানে যেসব সেবা প্রদান করা হয়, তারমধ্যে নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তদের প্রয়োজনীয় সেবা নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র অতি দরিদ্র এবং দরিদ্রদের কিছু সেবা বিদ্যমান রয়েছে। তাছাড়া বীমার একটি শর্তই থাকে, সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করবো না। কিন্তু গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই বীমার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মূল্যে এই সেবা কিনতে হয়।’ সর্বজনিন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে, স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক করতে হবে মন্তব্য করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।