কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে টি এম কামাল : বিশাল জলরাশি যমুনা। কখনো থাকে শান্ত। আবার মূর্ত আকার ধারণ করতেও সময় লাগে না এই যমুনার। কখনো মানুষকে বুক উজাড় করে সবকিছু ঢেলে দেয়। আবার মুহূতেই সবকিছু কেড়ে নেই রাক্ষুসে সেই যমুনা। প্রকৃতির এই বিশাল জলধারার ভাবনাটা বোঝাই মুশকিল। পানি কমে যাওয়ায় ছোট-বড় ভাঙনের অসংখ্য চিহৃ তার দু’কূল জুড়ে। বুক জুড়ে জেঁগে উঠেছে মাইলের পর মাইল চর। সেখানে গজিয়ে উঠেছে ছন। চারদিকে শোভা পাচ্ছে ছন পাতার সবুজ রঙ। আকাশে ঘুড়পাক করছে সাদা-কালো মেঘের ভেলা। আর হওয়ায় দুলছে ছনের গাছগুলো। চরাঞ্চলের মানুষগুলো চরের সেই ছন বাগানগুলোতে ব্যস্ত থাকছেন সারাদিন। কাস্তে বা অন্য কোন ধারালো জিনিস নিয়ে তারা প্রবেশ করেন ছনের বাগানে। এরপর সেগুলো তারা কাটেন। পরে সেগুলো আটি করে বেঁধে নৌকায় ভরে বাড়ি ফেরেন তারা। শুকানোর পর তারা ছনগুলো নিয়ে বিক্রি করেন। আবার দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসে এগুলো কিনে নিয়ে যান। তৈরী করেন বিভিন্ন সামগ্রী। ফলে ছনের সঙ্গে ভাগ্যের চাকা ঘুরছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চরাঞ্চলের মানুষগুলো।
যমুনার দু’কূল ঘেঁষে বিভিন্ন স্থানে একাধিক নৌকা চোখে পড়লো। কিন্তু নৌকাগুলোতে তেমন একটা মানুষের দেখা মিললো না। জানা গেলো নৌকায় আসা মানুষগুলো ছন কাটতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ছন বাগানো প্রবেশ করেছেন। জামাল উদ্দিন, গুলজার হোসেন, আব্দুল মোমিনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, চরাঞ্চলের মানুষ যমুনার সঙ্গে নানাভাবে লড়াই করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন সকালে বাড়ির কাজ সেরে খাওয়ার পর সবাই ছুটে পড়েন জীবিকার সন্ধানে। সন্ধ্যায় তারা ঘরে ফেরেন। এসব ব্যক্তিরা আরো জানান, ছন কেটে নৌকায় ভরে রাস্তা আছে-এমন স্থানে গিয়ে নৌকা ভেরান। এরপর ছনগুলো নৌকা থেকে নামানো হয়। সেখানে থেকে ঘোড়ার গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে ছনগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেগুলো নারী-পুরুষের মিলিত চেষ্টায় শুকিয়ে আটি বেঁধে গুছিয়ে রেখে দেওয়া হয়। পরে চাহিদা অনুযায়ি ছনগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি এসে এসব ছন ক্রয় করে থাকেন। চরের এসব ছন দিয়ে বাহারী ডিজাইনের সামগ্রী বানানো হয়। আর সেসব সামগ্রী দেশ ও দেশের বাইরে চলে যায় বলে জানান চরাঞ্চলের লোকজন।