Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এখনো পুড়ছে রোহিঙ্গাদের গ্রাম

সু চি’র মিথ্যাচার ধরিয়ে দিলো অ্যামনেস্টি

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মিয়ানমারে আর কোনও সেনা অভিযান হয়নি বলে যে দাবি করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রাখাইন রাজ্যের ভেতর থেকে স¤প্রতি ধারণ করা নতুন তিনটি ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি দেখিয়েছি, শুক্রবারও নতুন করে জ্বলতে দেখা গেছে রাখাইনের গ্রাম। উড়তে দেখা গেছে, ধোঁয়ার কুন্ডলি। রাখাইন রাজ্যে অবস্থানকারী সূত্রের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি আরো দাবি করে, গত শুক্রবার বিকেলে রোহিঙ্গাদের গ্রাম থেকে ধোঁয়া উড়ার ছবি পাওয়া গেছে। গ্রামগুলো পুড়িয়ে দেয় মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। অ্যামনেস্টির সংকট মোকাবিলা তথা ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক টিরানা হাসান গত শুক্রবার দিবাগত রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, তৃণমূল ও মহাকাশ থেকে গৃহীত মারাত্মক এই প্রমাণ বিশ্বের কাছে অং সান সুচির করা দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। সন্ত্রাসে ভীত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে, পালানোর ক্ষণে এবং পরেও রোহিঙ্গাদের বাড়ি ও গ্রাম পোড়ানো অব্যাহত আছে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িতে ফেরার কোনো সুযোগ দিতে চাচ্ছে না। গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের ৩০টি পুলিশ ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা হয়। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ বা আরসা) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এর পর থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামে অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা। এই অভিযানের পর থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের দাবি, নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদে ডুবে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। সংঘর্ষের তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাখাইনে ১৫ সেপ্টেম্বরের পর সেনা অভিযান বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি। তবে বিবিসিসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা সেই দিন থেকেই সু চির দাবি নাকচ করে আসছে। স্থানীয় জনতার সূত্রে অ্যামনেস্টির দাবি, স্থানীয় উগ্র বৌদ্ধরা এবং নিরাপত্তা বাহিনী সম্মিলিত উদ্যোগে এইসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের একজন মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন, ওইসব ছবি আর ভিডিও সু চির দাবির অসারতা প্রমাণ করে। বৃহস্পতিবার রাখাইনের হাপর ওয়াট চুয়াং নামে গ্রামের কাছে ধারণ করা তিনটি ভিডিও হাতে পেয়েছে অ্যামনেস্টি। ওই গ্রাম থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিগুলো অ্যামনেস্টি ১৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যালোচনা করে। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বরেও ওই গ্রাম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ওই দিনের ছবিতে দেখা গেছে, কয়েক দিন আগেও গ্রামে যেসব স্থাপনা ছিল, সেগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাখাইন রাজ্যের একটি সূত্র অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আর স্থানীয় এক বাসিন্দা তাদেরকে জানান, মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং নজরদারি দলের সদস্যরা শুক্রবার বিকেলের দিকে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। একই দিন কিছু সময় পরে আবার অগ্নিসংযোগ করা হয় গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়। ওয়াট চুয়াং গ্রামের আশপাশ থেকে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রামের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা আগুনে পুড়ছে। বুথিডং এলাকায় নাগা ইয়ান্ট চুয়াং গ্রামের বাইরে ধারণ করা অপর দুটি ভিডিওর ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, গতকাল বিকেলেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। স¤প্রতি ধারণ করা নতুন তিনটি ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে তিরানা হাসান আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে সেনা অভিযান শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহ পরও আমরা দেখছি, রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ও গ্রাম পোড়ানো হচ্ছে। ভয়ে রোহিঙ্গারা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। অভিযানে রোহিঙ্গাদের শুধু গ্রাম থেকে তাড়ানোই হচ্ছে না, তারা যাতে আর ফিরতে না পারে, সে জন্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে। ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ তুলেছে। দ্য গার্ডিয়ান, ইনডিপেনডেন্ট, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৭:৪৩ এএম says : 0
    হে আল্লাহ সূচি সহ সে দেশের সকল জালিমদেরকে তুমি ধংশ করে দাও,
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫০ পিএম says : 0
    যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ সকল মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বলছি, নির্যাতন হচ্ছে এটা সবাই জানে। এগুলো বলে বিবৃতি দিয়ে কোন লাভ নাই। পারলে সবাই মিলে এই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Taslima Najneen ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১৪ পিএম says : 0
    ওদের বিচার এই দুনিয়াতেই হবে,আল্লার গজব আসতে সময় লাগবেনা।।ওদের শক্তি কি এতই হয়ে গেল যে ফেরাউনকে হার মানাবে,যদি তাই হয় তবে ওদের ধ্বংশ অনিবার্য।।।
    Total Reply(0) Reply
  • কাঞ্চন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:১৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ আরাকানবাসীদের রক্ষা কর
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Mehedi ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৩৫ পিএম says : 0
    sara bisser muslim der oikkor bohir prokas kano ghottece na ?
    Total Reply(0) Reply
  • মঞ্জুরুল ইসলাম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪০ পিএম says : 0
    ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার। রোহিংগাদের প্রতি চালানো জেনোসাইড ঢাকতে মিয়ানমার সফল হচ্ছে। সব মিডিয়া ও জাতিসংঘের অবসার্ভারদের প্রথম থেকেই আরাকানে ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিলো মিয়ানমার। সুতরাং, কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমান নেই। এদিকে সময় ক্ষেপনের কথা বলে আক্রান্ত অঞ্চল আগে থেকেই পরিষ্কার করে ফেলবে তারা। তারপর নির্দিষ্ট স্থানে বিশ্ব দরবারের প্রতিনিধি দলদের তারা ঘুরে দেখাবে, তাদের লজিক, অবাধে ঘুরা যাবে না কারণ জংগি হামলার আশংকা আছে। চায়নার সাপোর্ট ওরা আগেও পেয়েছিলো, এখন সেটা কাজে লাগিয়ে অন্যদেরো লবিং করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমেও তাদের ইনফ্লুয়েন্স ব্যাপক।
    Total Reply(0) Reply
  • আসিফ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৩ পিএম says : 0
    মুসলিমরা এক না হলে আরো নির্যাতন অপেখ্খা করছে
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম উদ্দিন ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৩৪ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • সবুর খান ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৩৬ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ, ওআইসি, আবরলীগ ও সার্কসহ বিশ্বসংস্থাগুলোকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Uddin ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৪৪ পিএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ....!!! আপনার সাহায্য চাই মায়ানমারের মুসলমানদের জন্য এবং বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ