Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রাণ বিতরণ ও পূনর্বাসনে কাজ করছে সেনাবাহিনী

পাল্টে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দৃশ্য

শামসুল হক শারেক ও মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী শিশু পুরুষের উদ্দেশ্যহীন ঘুরাঘুরি আর দেখা যাবেনা। দেখা যাবেনা ত্রাণ বিতরণের সময় একসাথে হাজারো ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গাদের বিশৃঙ্খল ভীড়ও হুড়াহুড়ি। থাকবেনা ত্রাণ বিতরণে অসমতা ও কেউ পাবে আর কেউ পাবেনা অবস্থা। থাকতে হবেনা বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খোলা আকাশের নীচে। এখন থেকে উখিয়ায়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, রেজিষ্ট্রেশন ও সুষম ত্রাণ বিতরণে কাজ শুরু করেছে দেশের গর্বিত সেনাবাহিনী। গত শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করলেও শনিবার সকাল থেকে পুরোদমে কাজ করতে দেখা গেছে সেনাসদস্যদের। উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফের নয়াপাড়া পর্যন্ত একযোগে কাজ শুরু করেছেন সেনাসদ্যরা। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সেড নির্মাণ, ক্যাম্প গুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধার জন্য রাস্তা নির্মাণ, পর্যাপ্ত টয়লেট নির্মাণ, পয়নিষ্কাশন, রেজিষ্ট্রেশন কাজে সহযোগিতা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছেন সেনাসদস্যরা। সেনাবাহিনীর রামু ১০ ডিশিনের জিওসি মেজর জেনারেল মাকসুদুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকানে চলমান গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বনে জঙ্গলে রাস্তার ধারে ও বাড়ি ঘরে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। গত ২৪ আগস্ট থেকে আরাকানে মিয়ানমার সেনা-পুলিশ ও মগদস্যুদের পোড়ামাটি নীতি ও গণহত্যা শুরু হলে সেখানকার লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান আশ্রয় নিতে শুরু করে বাংলাদেশে। এর সংখ্যা দশ লাখের মত হবে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করলেও এর সঠিক পরিসংখ্যান আরো বেশী হতে পারে। সরকার এসব রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষদের উখিয়া- টেকনাফের ১২টি শিবিরে আশ্রয় নেয়ার সুযোগ করে দেয়। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা ও রেজিষ্টেশনে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে দেখা দিয়েছিল ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী রোহিঙ্গাদের জন্য আসতে থাকলেও এর সুষম বন্টন ও বিতরণ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছিল কঠিন বিষয়। তাই দেশের সুশীল সমাজ, সচেতন জনগোষ্ঠী ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সুষ্ঠু ত্রাণ বিতরণ, পূণর্বাসন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের গর্বিত সেনাবহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার দাবি উঠে। দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময়ের দূর্যোগকালীন সময়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। গতকাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসনে সেনাবহিনীকে দায়িত্ব দেয়ায় সরকারের সিদ্ধান্ত যেমন প্রশংসিত হয়েছে একইভাবে আশস্ত হয়েছে দেশের মানুষ এবং খুশি হয়েছে রোহিঙ্গারাও।
আইএসপিআর সূত্রে জানাগেছে, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার উখিয়া-টেকনাফের যে ৪ হাজার একর জমি নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে সেনাবাহিনী তৈরি করবে শেড, চলাচলের রাস্তা, সুপেয় পানি ও পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। শুধু উখিয়াতেই তারা নির্মাণ করবেন ১৪ হাজার শেড। এসব শেডের প্রতিটিতে ৬ জন করে ৮৪ হাজার পরিবারকে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হবে জানাগেছে। শেড নির্মাণের পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনাও রেজিষ্ট্রেশন কাজে অংশ নিচ্ছেন সেনাবাহিনী।
এদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক জানান, উখিয়ার ৭১ কিলোমিটার জুড়ে বসানো হয়েছে ১২টি চেকপোস্ট। ২২টি মোবাইল টিম কাজ করছে। তারা সাজা দিয়েছে রোহিঙ্গা নির্যাতনকারী ২১২ দালালকে। আগত রোহিঙ্গারা যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। জেলা প্রশাসক জানান, ইতোমধ্যে চেকপোস্টগুলোতে ৫ হাজার ১১৯ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
যেসব ক্যাম্পে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল সেসব ক্যাম্পে যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনী রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারকাজ করবে। তিনি সব ধরনের ত্রাণ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রদানের জন্য আবারও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।



 

Show all comments
  • Al-Amin Mahmud ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৪ পিএম says : 0
    Hats off to Bangladesh Army. We have deep faith in your sincere efforts for serving and saving the nation.
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Rahman ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৫ পিএম says : 0
    এখন যদি সুন্দর ভাবে কিছু হয়।ভরসা করা যায় সুশৃংখল ভাবে বন্টন হবে মানবতার এই আমানত যথা যথা বিপন্ন জনগোষ্ঠীর তরে। যাযাকাল্লাহ খাইরান।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Alom ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৪৯ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ্‌, তাই সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। তাদের উপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md based Howlader ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৫০ পিএম says : 0
    আমাদের সেনাবাহিনী অতুলনীয়, বাংলার গৌরব।
    Total Reply(0) Reply
  • Sakayat Moon ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৫০ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা সেনাবাহিনী কে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দিন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • এম ডি আব্দুল হান্নান ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ২:৩০ পিএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের জন্য সেনাবাহিনী কাজ করলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:২৩ পিএম says : 0
    এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনী তার মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করবে, এটাই একান্ত প্রত্যাশা।
    Total Reply(0) Reply
  • নাজিম ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:২৩ পিএম says : 0
    আমরা আশা করি, সেনাবাহিনী অর্পিত দায়িত্ব সুচারু রূপে সাফল্যের সঙ্গে পালন করতে পারবে। সেনাবাহিনীর জন্য বিপন্ন মানুষের সেবা করার এটা একটা বড় সুযোগ।
    Total Reply(0) Reply
  • আতিক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:২৫ পিএম says : 0
    জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, একমাত্র সেনাবাহিনীর পক্ষেই সম্ভব সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা। সেনাবাহিনী নিয়োগ করায় অচিরেই এর সুফল মিলবে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শৃঙ্খলা যেমন ফিরে আসবে, তেমনি ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে কোনো রোহিঙ্গাই বঞ্চিত হবে না। ত্রাণ নিয়ে অসাধু চক্রের অপতৎপরতাও থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:২৫ পিএম says : 0
    সরকার সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সকল মহলই সাধুবাদ জানিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ