পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নানা অনিয়ম সত্তে¡ও ২০১৪ সালের নির্বাচন আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্টের পদে প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটায়। হামিদ কারজাই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন আশরাফ গণির কাছে। এর ফলে একটি আশাবাদের জন্ম হয় যে আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র অবশেষে কাজ করতে চলেছে। কিন্তু তা ক্ষীণ হয়ে আসে যখন দেখা যায় যে আশরাফ গণি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্বরতা ও যুদ্ধাপরাধের জন্য কুখ্যাত উজবেক যুদ্ধবাজ আবদুল রশিদ দোস্তামকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করেন।
২০১৪ হচ্ছে সে বছর যে বছর ওবামা আফগান যুদ্ধের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করলেও অনির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য দেশটিতে রেখে দেন। তাদের সাথে এখন যোগ দিচ্ছে আরো হাজার হাজার সৈন্য। উদ্দেশ্যটা কি?
আমেরিকান বিজয় বাস্তবায়িত হয়নি, কিন্তু বিশে^র এ যাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক বাহিনী পরাজয় স্বীকার করতে পারে না। ব্যর্থ রাষ্ট্র আফগানিস্তান যেমন স্বীকার করতে পারে না যে ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু হতে পারার জন্যই সে ব্যর্থ। এক সময় ‘ ফিক্সিং ফেইলড স্টেটস’ নামে একটি পান্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থের সহ লেখক প্রেসিডেন্ট আফগান-আমেরিকান আশরাফ গণি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তার আমেরিকান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, কিন্তু তিনি তার জনভূমিকে স্থিতিশীল করতে পােেরননি।
২০১৭ সালের মে মাসে আশরাফ গণি কাবুলের জনসমাজে কুখ্যাত গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানান। এই হেকমতিয়ার ছিলেন হেজব-ই-ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা , ১৯৮০-র দশকে মুজাহিদিনের মধ্যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও সিআইএ-র সর্বাপেক্ষা অনুগ্রহ প্রাপ্ত । এ হেকমতিয়ার ’৯০-র দশকে গৃহযুদ্ধের সময় নির্বিচার গোলাবর্ষণ করার জন্য কাবুলিদের কাছে যারপর নাই ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত। তাকে বলা হত কাবুলের কসাই। ২০০২ সালে কাবুলে থাকার সময় আমি এ রকম ব্যক্তির দেখা খুব কম পেয়েছি যে হেকমতিয়ারের গোলাবর্ষণে তার বাড়ি হারায়নি বা তার কোনো আত্মীয় মারা যায়নি বা তার গোটা পরিবার হারায়নি। এখন একজন আমেরিকানিকৃত প্রেসিডেন্ট তার যুদ্ধাপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং অপরাধীকে দায়মুক্তি দেয়ার আফগান সংস্কৃতি পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ওবামার যুদ্ধের নিন্দার কথা ভুলে গেছেন , তার জেনারেলদের অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেছেন এবং এবং নির্বাপিতপ্রায় আগুনকে আবার প্রজ্জ্বলিত করেছেন। তিনি শপথ নিয়েছেন- আমরা দেশ পুনর্গঠনকারী নই। আমরা সন্ত্রাসীদের হত্যা করছি।
মার্কিন উদ্যোগ এখন সম্পূর্ণরূপে সামরিক। আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণের সংখ্যা বা সেখানে কত সময় থাকা হবে সে ব্যাপারে কোনো সীমা নেই। কিংবা সেখানে মার্কিন পরিকল্পনা কি তা না জানে শত্রæরা না জানে আমেরিকার জনগণ। আফগানিস্তানে গণতন্ত্র বা নারী অধিকার বা মানবাধিকার বা শান্তি আলোচনা নিয়ে আর কোনো কথা হবে না।
ট্রাম্প তার দীর্ঘ, ভুয়া, বরাবরের মত স্ব-অভিনন্দনমূলক বক্তৃতায় আফগানিস্তানে নয়া সামরিক কৌশলের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি তার বক্তৃতায় ভদ্রতা করেও আফগানিস্তানের নির্বাচিত নেতার নাম উল্লেখ করেন নি।তার পরিবর্তে তাকে আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ^াসের কথা উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প প্রায়ই এ ধরনের ভুল করেন। তিনি এই বিশেষ বক্তৃতা পাঠ করেছেন টেলিপ্রম্পটার থেকে। অতএব এটা বিশেষ সামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা লেখা, তা না হলেও তারা এটা দেখে অনুমোদন করেছেন যারা আফগানিস্তানের ভবিষ্যত বা সেখানে মার্কিন সমúৃক্ততা বিষয়ে নির্দেশনা দেন। দেড় দশক পরও মনে হয় তারা আফগানিস্তান বা সেখানকার প্রকৃত অধিবাসীদের সম্পর্কে কিছু জানেন না।
ট্রাম্পের দাবি, আমি আফগানিস্তানকে বিশদভাবে এবং ধারণাযোগ্য সকল কোণ থেকেই গবেষণা করেছি। তা সত্তে¡ও তিনি নোংরা ভাবে ও কাপুরুষোচিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে আরো একবার যুদ্ধের বিস্তার ঘটাচ্ছেন। আমরা অবশ্যই আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাবো আগে প্রেরিত নিহত সৈন্যদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতে,আমরা অবশ্যই সৈন্য পাঠাব কারণ আগে সেখানে যাদের পাঠানো হয়েছে তাদের অনেকেই নিহত হয়েছে অথবা এমনভাবে আহত হয়েছে যে চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে।
প্রাপ্ত শিক্ষা (না পাওয়া শিক্ষা)
ট্রাম্প তার পূর্বসূরী বুশ ও বারাক ওবামার কথার প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, আফগানিস্তানকে আমরা সন্ত্রাসীদের স্বর্গভূমি হতে দিতে পারি না। তিনি মনে হয় সচেতন নন যে ৯/১১-র সন্ত্রাসীরা আমেরিকার অন্যান্য শহর ও নগরের মধ্যে সান দিয়েগো ও ওকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, ফিনিক্স ও মেসা, আরিজোনা, ফোর্ট লি ও ওয়েন, নিউজার্সি, হলিউড ও ডেটোনা বীচ, ফ্লোরিডা ও নিউটন , ম্যাসাচুসেটসে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল। ৯/১১-র ১৯ সন্ত্রাসী আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যের ইস্যু করা ৬৩টি মার্কিন চালকের লাইসেন্স পেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রেই নিরাপদ আাশ্রয় পেয়েছিল এ ১৯ সন্ত্রাসী। আফগানিস্তান নয়, হাইজ্যাক করা বিমানের সম্ভাব্য চালকরা বিমান চালনার প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল এ যুক্তরাষ্ট্রেই।
এখন আরো মার্কিন সৈন্য যখন আফগানিস্তনের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে তখন আফগানিস্তানে বহু বছর থাকার সময় ও বেসামরিক আফগানদের মধ্যে কাজ করে আমি কি শিক্ষা লাভ করেছি তা ভাবা ছাড়া আর কোনো সাহায্য করতে পারি না। ২০১০ সালে আমি শেষপর্যন্ত আমেরিকান সৈন্যদের সাথে সম্পৃক্ত হই। আমার প্রথম শিক্ষা ছিল এইঃ আমেরিকা সামরিক বাহিনীতে না বাচক আফটার অ্যাকশন রিপোর্ট বলতে কিছু নেই। সামরিক প্ল্যানগুলো চমৎকার, প্রত্যাশামতই আঘাত হানার ফল মেলে , আমাদের সৈন্যরা বীর এবং ব্যর্থতা ছাড়াই লক্ষ্য অর্জিত হয়। বিস্ময়ের কিছু নেই যে ওয়াশিংটনে আমাদের নীতি নির্ধারকরা বিশ^াস করেন যে বিশে^র এ যাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক বাহিনী আমাদেরই রয়েছে যে কারণে কোনো একদিন আমরা সফল হব যদিও বাস্তবে ১৯৪৫ সালের পর কোনো গুরুত্বপূূর্ণ যুদ্ধে আসলে আমরা জয়ী হইনি।
আমার দ্বিতীয় শিক্ষাঃ যে সব সামরিক অফিসার নিয়মিতভাবে এ ধরনের ইতিবাচক রিপোর্ট ফাইল করেন তারা অন্যদের ভুয়া রিপোর্টে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন। উদাহরণ স্বরূপ বলি, ২০১০ সালে পূর্ব আফগানিস্তানে এক কর্নেলের সাথে আমার দেখা হয়। সম্প্রতি তিনি রণাঙ্গনে ফিরেছেন যেখানে তিনি কয়েক বছর আগে ছিলেন। বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ ঐ অফিসার বলেন, তিনি এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এখানে পরিস্থিতি এত খারাপ অথচ তার ঊর্ধতন অফিসাররা তাকে তা অবহিত করেননি। তিনি এত অল্প সময়ে এত বেশী লোক হারিয়েছেন যে সে জন্য তিনি শংকিত।
অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলোতে আমার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ধারণা যে সর্বশেষ সৈন্য উপস্থিতির মাধ্যমে আফানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধের ভবিষ্যত আরো ঝামেলা পূর্ণ হতে পারে। প্রথমত, আগের ভয়ংকর অতীতের চেয়ে এখনকার পার্থক্য খুব কমই হবে। দি¦তীয়ত, এর ফলে বেসামরিক আফগানদের হতাহতের সংখ্যা বাড়বে এবং সরকারী ভােেব আমরিকান স্ব-অভিনন্দনও বৃদ্ধি পাবে। সর্বশেষ, আমাদের সৈন্যদের একটি অংশ আর জীবিত দেশে ফিরবে না অথবা অঙ্গহানিসহ শারীরিক ক্ষতির শিকার হবে।
তারপর ককুররা আবার আসবে। এবার কালো একটি , ইসলামী মানদন্ডে বরাবরের মতই নাপাক, সিলুয়েটে থাকবে কুরআনের আয়াত খচিত তালিবান পতাকা। পারওয়ান প্রদেশে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বাগরাম মার্কিন বিমান ঘাঁটি অবস্থিত, সেখানে মার্কিন বিমান থেকে ফেলা লিফলেটে এ রকম ছবি মুদ্রিত আছে। মনে করা হচ্ছে, আফগানদের হৃদয়-মন জয় করার জন্য এটা করা হয়েছে ভিয়েতনামে অমোচনীয় পরাজয়ের ছাপ মুছে ফেলতে।
আবার অপমানিত আফগানরা হৈচৈ করছে। আমাদের অনেকের মনেই ভিয়েতনামের স্মৃতি জেগে উঠছে, মনের ভেতর গুঞ্জরিত হচ্ছে পিট সিগারের যুদ্ধ বিরোধী গানের সেই অবিস্মরণীয় লাইন, ‘হায়! কখন তারা শিক্ষা নেবে।’ (শেষ)
*নিবন্ধকার অ্যান জোনস হাফিংটন পোস্টের প্রদায়ক ও ‘দে ওয়্যার সোলজার্স:হাউ দি উন্ডেড রিটার্ন ফ্রম আমেরিকা’স ওয়ারস- দি আনটোল্ড স্টোরি’ গ্রন্থের লেখিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।