বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
২০১১ সালের রেলওয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনার মতোই পড়ে যাচ্ছে ধামাচাপা
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদী রেলস্টেশন মাস্টারের অফিস কক্ষে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসী চক্র এখনো ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। ঘটনার ৫ দিন অতিক্রান্ত হলেও রেল পুলিশ এ পর্যন্ত কোন একজন অস্ত্রধারীকেও গ্রেফতার করতে পারছে না। উদ্ধার করতে পারেনি একটি অস্ত্রও। সিসি টিভির ফুটেজে অস্ত্রধারীদের ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠার পরও অস্ত্রধারীদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যার ফলে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডের সুযোগ নিয়ে সেই ভয়াবহ হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ অতীতের বহুসংখ্যক হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার মত এই গুলিবর্ষণের ঘটনাটিও ধামাচাপা পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বেঁচে যাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নরসিংদী রেলস্টেশনে বার বার হামলাকারী, ভাংচুরকারী, লুণ্ঠণকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও সরকারী সম্পদ বিনষ্টকারী চক্রের সদস্যদের। নরসিংদী রেলস্টেশন এলাকার লোকজন জানিয়েছে, নরসিংদী রেলস্টেশনটি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত এই রেলস্টেশনটি রক্ষা তথা যাত্রী সাধারণের জান মালের নিরাপত্তার জন্য স্টেশনের পাশেই ্স্থাপন করা হয়েছে একটি রেল পুলিশ ফাঁড়ি এবং স্টেশন মাস্টারের অফিস কক্ষের পাশেই রয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিস। স্টেশনটিতে প্রতিদিন ৪/৫ জন রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকে। প্রাপ্ত তথ্য মতে রেল ফাঁড়ি ও নিরাপত্তা বাহিনী মিলে এখানে ২০ জনের অধিক সদস্য কর্তব্যরত রয়েছে। এরপরও বেসরকারী হিসেব মতে ৭০ দশকের পর নরসিংদী রেলস্টেশন ও আশেপাশের এলাকায় কমবেশী ১৭টি ছোট বড় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে তথা সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
প্রতিটি হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে। রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চোখের সামনে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করলেও কর্তব্যরত রেলপুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী একটি হামলাও প্রতিহত করতে পারেনি। গ্রেফতার করতে পারেনি একজন হামলাকারী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকেও। প্রায় প্রতিটি ঘটনায়ই ভৈরব রেল থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু একটি মামলাও কোট পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানা যায়নি। একজন সন্ত্রাসীরও বিচার হয়েছে বলে শুনা যায়নি। সর্বশেষ এবং বৃহত্তর হামলাটি ঘটে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর। মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডের সময় একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হামলাকারীরা নরসিংদী রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে লন্ডভন্ড করে ফেলে। প্রাপ্ত তথ্যমতে সেদিন হামলাকারীর সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ২৫ জন। হামলাকারীরা রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে সহকারী স্টেশন মাস্টারদের কক্ষে ঢুকে মূল্যবান প্যানালবোর্ডসহ অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। রিলে রুমে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করে গোটা সিগনালিং সিস্টেম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অকেজো করে দেয়। এরপর দিন সকাল ৯টায় তারা কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারোসিন্দুর ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বিনাশ করে দেয় ট্রেনের ৮/১০টি মূল্যবান বগি। এই সর্বশেষ হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর নরসিংদী রেলস্টেশনটির কার্যক্রম দীর্ঘ ৪ বছরেরও বেশী সময় বন্ধ থাকে। এই দীর্ঘ ৪ বছর জিনারদী ও আমিরগঞ্জ রেলস্টেশনের সিগনালিং সিস্টেমের মাধ্যমে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনে ট্রেন চলাচল করে। এই ঘটনাগুলো একের পর এক রেলপুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই ঘটেছে। পুলিশ হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদেরকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, এ ঘটনা নিয়ে ভৈরব রেল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলাদুটি রেল পুলিশের হিমাগারে পড়ে রয়েছে। অদ্যাবধি রেল পুলিশ এসব হামলাকারীদেরকে কাউকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে সন্ত্রাসীরা রেলস্টেশন মাস্টারের অফিস কক্ষে ঢুকে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ২০১১ সালে সেই ভয়াবহ ঘটনা। সচেতন রেল যাত্রীরা বলছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে ঘটেছিল সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। সেই ঘটনার যখন কোন বিচার হয়নি, সামান্য গুলি বর্ষণের ঘটনার কি হতে পারে। তা সচেতন জনগনের আন্দাজ করতে কষ্ট হয় না। এব্যাপারে ভৈরব রেল থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কজনকে ধরেছে, কজনকে চালান দিয়েছে তা বলতে পারছি না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।