হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
সরকার চাল আমদানি ও আমদানিতে শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে সব ধরনের চালের দাম প্রতিকেজিতে দুয়েক টাকা কমার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সে দামমাত্র কয়েকদিন স্থিতিশীল ছিল। তারপর ফের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এরপর টিসিবি’র একটি তথ্য পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, সরু চাল প্রতিকেজি বিক্রী হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৬৬ টাকা। উত্তম মানের নাজির ও মিনিকেট ৬২ টাকা থেকে ৬৬ টাকা। সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট্ ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকা। উত্তম মানের পাইজাম ও লতা ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকা। সাধারণ মানের চাল ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা। এছাড়া স্বর্ণা ও ইরির মোটা চালের দাম ৪৭ টাকা থেকে ৫০ টাকা। সরকারের মজুদবিরোধী অভিযান, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক ইত্যাদির পরও চালের দামে খুব হেরফের হয়নি।
টিসিবির তথ্য থেকে স্পষ্টই লক্ষ্য করা যায়, উপরে যাই হোক ৪৭ টাকার নীচে কোনো চাল নেই। এটা সরকারী সংস্থার তথ্য। তবে দেশের বিভিন্ন বাজারে ও খুচরা পর্যায়ের দোকানগুলোতে চালের দাম সরকারী সংস্থার দেয়া তথ্যের সঙ্গে মেলেনা। সরু, মধ্যম ও মোটা চালের দাম আরও বেশি। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশের চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজা নগরে প্রথম ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালায়। ওই অভিযানে চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদের চালকলে ৫০ হাজার টন চাল জব্দ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, অভিযানের পর চালের বাজারে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরেও নানা জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। বরং উল্টো খবর পাওয়া গেছে। মিনিকেট চালের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রী হচ্ছে ৬০ টাকায়। কুষ্টিয়ার এবং পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর প্রভৃতি এলাকায়ও সকাল-বিকাল দাম বাড়ার খবর আছে। এক মাসের ব্যবধানে ওই অঞ্চলের বাজারগুলোতে চালের দাম প্রতিকেজিতে ৭ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সারাদেশে চালের যোগান আসে যেসব এলাকা থেকে সেসব এলাকাতেই চালের দামে এমন অস্থিরতা দেখা গেলে দেশের সর্বত্র পরিস্থিতি কি হতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। গত এক বছর ধরে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেটা সম্প্রতিককালে উপর্যপরি বন্যায় ব্যাপকভাবে চালের উৎপাদন-ক্ষতি হওয়ায় আরও বেড়েছে। চালের এই লাগাতার দাম বাড়ার কারণে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-যাপন রীতিমত দু:সহ হয়ে পড়েছে। বন্যায় ফসল হারানো লাখ লাখ কৃষকের অবস্থাও তথৈবচ।
সরকারের তরফে বড় গলা করে দাবি করা হয়, দেশে খাদ্যশস্যের কোনো অভাব নেই; দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। চালের বাজারের হাল-অবস্থা থেকে এ দাবির সত্যটা খুঁজে পাওয়া যায় না। বলা হয়, দেশে প্রতি বছর সামান্য কম-বেশী সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়। প্রতি ৪ মাসে গড়ে ১ কোটি ২ লাখ টন চাল লাগলে বছরে চাল লাগার কথা ৩ কোটি ৬ লাখ টন। উদ্বৃত্ত থাকার কথা বাকীটা। বিগত কয়েক বছরে ধানের পাম্পার উৎপাদন হয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত চাল মজুদ থাকার কথা। এবার বন্যার কারণে ধানের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে বড়জোর ২৫ লাখ টন। এ ক্ষতি বিরাট ক্ষতি বটে; তবে এ জন্য চালের সংকট হওয়ার কথা নয়। সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, সরকারী গুদামে চালের মজুদ আছে ৩ লাখ ৩২ হাজার টনের চেয়েও কম। গত বছর এই সময়ে চাল মজুদের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৫৫ টন।
উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে কোথাও না কোথাও গড়মিল আছে। প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৩ কোটি টন চাল উৎপাদিত হলে বার্ষিক চাহিদা মিটিয়ে চালের যে উদ্বৃত্ত থাকার কথা, সেই উদ্বৃত্ত চাল তাহলে কোথায়? আর যদি চালের উৎপাদন যথার্থই সাড়ে ৩ কোটি টন হয় এবং উদ্বৃত্ত তেমন কিছু না থাকে তাহলে অবশ্যই ধরে নিতে হবে বার্ষিক যে চাহিদা দেখানো হয়, প্রকৃত চাহিদা তার চেয়ে বেশী। অতএব, ধরে নিতে হবে, হয় চাল উৎপাদনের তথ্য বা হিসাব সঠিক নয়, আর না হয় চাহিদার তথ্য বা হিসাব সঠিক নয়। আমাদের দেশে পরিসংখ্যান নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন ওঠে। পরিসংখ্যান ও বাস্তবতার মধ্যে গড়মিল লক্ষ্য করা যায়। আমরা কেউই জানি না, আমাদের দেশের লোকসংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত। এক্ষেত্রে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্যের মধ্যে ফারাক দেখা যায়। আদমশুমারি প্রতিবছর হয় না। ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রতিবছর লোকসংখ্যা কিছু না কিছু বাড়ছে। আদমশুমারি যদি সঠিকভাবে হয় তবে এই বৃদ্ধির হার বা প্রবনতা অনুধাবন করা কঠিন হওয়ার কথা নয়। খাদ্য, সেবা, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করতে হলে জনসংখ্যার সঠিক বা তার কাছাকাছি হিসাবটি খুবই জরুরি। এই হিসাবে কোনো বড় ধরনের অমিল হলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা কঠিন। পরিকল্পনা হয়তো করা যায়, তবে বাস্তবক্ষেত্রে সে পরিকল্পনা কাজে আসেনা। জনসংখ্যা ও খাদ্যচাহিদার হিসাবের সঙ্গে চাল উৎপাদনের হিসাবে বড় কোনো গড়মিল না থাকলে খাদ্যসংকট এতটা প্রকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। আগের বছরের তুলনায় তা দু’লাখ টনের বেশি। তাছাড়া চাল-গম ইত্যাদি আমদানীও হয়েছে। পূর্বেই যে হিসাব আমরা উল্লেখ করেছি, তাতে এ বছর চালের বড় ধরনের উদ্বৃত্ত থাকারই কথা। নেই কেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। চাল উৎপাদনের পরিসংখ্যান নিয়েও বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ আছে, চাল উৎপাদন বেশি করে দেখানো হয় সরকারের কৃতিত্ব জাহির করার জন্য। প্রকৃত উৎপাদন দেখানো বা ঘোষিত উৎপাদনের চেয়ে কম। বলা বাহুল্য, চাল উৎপাদন যদি এতটাই হয়, তাহলে প্রতিবছর লাখ লাখ টন চাল আমদানি করা হয় কেন?
সরকারের চালবাজিটা এবার হাতে নাতে ধরা পড়ে গেছে। চালের সঙ্গে তিনটি মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত। চাল বা ধান উৎপাদনের বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা ও উৎপাদনলক্ষ্য নির্ধারণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা ও উৎপাদনলক্ষ্য বাস্তবায়নের দায়িত্বও এ মন্ত্রণালয়ের। খাদ্যশস্য, বিশেষত চাল ও গম সংগ্রহ, মজুদ, সরবরাহ, বাজার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কোনো কারণে খাদ্যশস্যের ঘাটতি বা ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিলে আমদানির প্রয়োজন অপরিহার্য। এ দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। খাদ্যব্যবস্থাপনা ও খাদ্যনিরাপত্তা যে কোনো দেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দু:খের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এ ব্যাপারে আমাদের তিন মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। যদি থাকতো তাহলে খাদ্যপরিস্থিত কোনোক্রমেই এতটা নাজুক হয়ে পড়তে পারতো না। এখন শেষ সময়ে খাদ্যমন্ত্রী চাল আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশে ধরনা দিচ্ছেন। ১৬ লাখ টন চাল ও গম আমদানির লক্ষ্য নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার সফর করেছেন। ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরেছেন তিন লাখ টনের। আর মিয়ানমারের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন তিন লাখ টনের। ভারত বাংলাদেশের অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো চালেরও সবচেয়ে বড় উৎস। ভারত এক্ষেত্রে হাতটান দিয়েছে। পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ভারত আপাতত চাল রফতানি করবেনা, করলেও সীমিত পর্যায়ে করবে। এরকমটা যে হতে পারে, খাদ্যমন্ত্রী আগে তা ভাবেননি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছেন। বোরো মওসুমে ৮ লাখ টন চাল সংগ্রহের কর্মসূচী ছিল। সে কর্মসূচী ব্যর্থ হয়েছে। মাত্র আড়াই লাখ টন চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংগ্রহ সম্ভব হলে এখন তা অনেকখানি কাজে আসতো। এও বড়ই পরিহাস যে, এ পর্যন্ত সরকারী পর্যায়ে যে চাল আমদানি করা হয়েছে তার একটি বড় অংশই আতপ। দেশের মানুষ সিদ্ধ চাল খেয়েই অভ্যস্ত। তাদের জন্য কেন আতপ চাল আনা হয়েছে, তার কোনো জবাব নেই। মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রীর যে কর্মসূচী নিয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে আসছে না। আতপ চাল কেউ কিনতে চাইছে না। আবার এ চালের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। সাধারণত, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ এই চালের ক্রেতা। তাদের বিমুখ হওয়া এই কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ায় ইঙ্গিত দেয়। ওদিকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রীর কর্মসূচীও স্থগিত করা হয়েছে। সবমিলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। বাধা আয়ের মধ্যবিত্তের অবস্থাও শোচনীয়।
চালের দাম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনবরত বাড়লেও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীল করতে পারেনি। সরকারের তরফ থেকে গঁথবাধা একটা বক্তব্য দেয়া হয়। বলা হয়, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। অথচ এই কারসাজি রোধ করার জন্য শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এর আগে কয়েক হাজার চালকল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। তা কোনো সুফল দেয়নি। সাম্প্রতিক মজুদ বিরোধী অভিযান সম্পর্কে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযান আরও বিপরীত ফল দিতে পারে। তিন মন্ত্রী চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একযোগে বৈঠক করেছেন। অনেক হুমকি-ধমকি ও বাঁকবিতন্ডা হয়েছে ওই বৈঠকে। শেষ পর্যন্ত চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কথা আদায় করা হয়েছে, তারা চালের দাম কমাবেন। কিন্তু এই কথার কোনো প্রতিফলন বাজারে এখনো পড়েনি। এসবই আইওয়াশ কিনা, অনেকের মনেই সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
যা দেখা যাচ্ছে বা অনুভব করা যাচ্ছে, খাদ্যপরিস্থিতি যে, তার চেয়েও খারাপ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফ এও) সম্প্রতিক প্রতিবেদনে তার ইঙ্গিত রয়েছে। ওই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত তিন মাসে বাংলাদেশে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যা উদ্বেগজনক। এই সময়ে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান-তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। খাবার পাওয়ার সুযোগ কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক মাসে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে এবং দামও কমেছে। বিশেষ করে চাল, গম বা দানাদার খাবারের দাম কমতির দিকে। তবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮টি দেশের বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এই ৮টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকী দেশগুলো হলো আফ্রিকার। এগুলো হলো, দক্ষিণ সুদান, নাইজার,নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও বুরুন্ডি। আফ্রিকার এইসব দেশ অভ্যন্তরীণ সংঘাতসহ নানামুখী সমস্যার নিমজ্জিত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশ্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের যে ভূগোল, এই দেশগুলো তারই অর্ন্তগত। বাংলাদেশও এ মুর্হূতে তাদের কাতারে গিয়ে শামিল হয়েছে, এটা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, অত্যন্ত উদ্বেগজনক বটে। এফ এও এই মর্মে সর্তকবার্তা দিয়েছে, বাংলাদেশের খাদ্যপরিস্থিতির আগামীতে আরো অবনতি ঘটতে পারে।
দেশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় উপর্যপরি বন্যায় কেবল ব্যাপক ফসলহানিই ঘটেনি, লাখ লাখ মানুষ রীতিমত নি:স্ব হয়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে খাদ্যভাব প্রকট। আগামী ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত তাদের হাভাতে অবস্থার অবসান হবে না। সেই সময় পর্যন্ত তাদের খাদ্য যোগান দেয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের জন্য দরকার লাখ লাখ টন চাল। সেটা রিলিফ হিসাবে বা ন্যনুতম দামে তাদের দিতে হবে। ওদিকে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রীর কর্মসূচী বাতিল হওয়ায় ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার একেবারের নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। তাদের কথাও ভাবতে হবে। এছাড়া গত মাসাধিককালে ৮ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা শরণার্থী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরও প্রধান খাদ্য ভাত। তাদের জন্যও চালের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
বলা যায়, খাদ্য নিয়ে একটা কঠিন সময়ে পড়েছে দেশ। এজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অবহেলা দায়িত্বহীনতা ও অপরিনামদর্শিতা প্রধানত দায়ী। ‘আমরা কি আগে থেকে জানতাম যে, বন্যায় এত সফলহানি হবে’, একথা বলে পার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। ‘চাল নিয়ে চালবাজি ও রাজনীতি হচ্ছে’, একথারও কোনো মানে নেই। কোনো অজুহাতই দেশবাসী গ্রহণ করতে রাজি নয়। তারা প্রয়োজনীয় চাল চাই, চাই যুক্তিসঙ্গত দাম। এটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। চালের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত চাল থাকতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করার উপায় থাকলে তা কাজে লাগাতে হবে। অন্যদিকে আমদানি বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করার কার্যব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি উৎসাহিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে যথাযথ সহযোগিতা দিতে হবে। কী পরিমাণ চাল প্রয়োজন তার সঠিক হিসাবে নির্ণয় করে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে কী পরিমাণ আমদানী হচ্ছে তা নিয়মিত মনিটারিং করতে হবে। চালের অবৈধ মজুদ ও সিন্ডিকেটবাজির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চালের বিকল্প হিসাবে গম ও আলুকে কাজে লাগানো যেতে পারে। জানা গেছে, আলুর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, যার মূল্য অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা। এই মজুদ আলুও এ সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সুষ্ঠ খাদ্যব্যবস্থাপনা এ মুর্হূতে সবচেয়ে জরুরি। এই ব্যবস্থাপনাকে উন্নত, মসৃণ এবং বাস্তবসম্মত করতে হবে।
চাল নিয়ে দেশের মানুষ যে অনাকাঙ্খিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে অনুরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন তাদের না হতে হয়, সে জন্য সঠিক পরিসংখ্যান, উপযুক্ত সচেনতা ও দূরদর্শিতার কোনো বিকল্প নেই। কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান ও কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয় একান্তভাবেই আবশ্যক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।