পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক গণআদালতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং দেশটির সেনাপ্রধানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত আট সদস্যের বিচারক প্যানেলে এ রায় দেন। আর এ রায়ের মধ্য দিয়ে গণআদালতে সু চিই প্রথম কোনো নোবেলজয়ী, যিনি ব্যতিক্রমী এ আদালতে বিচারের সম্মুখীন ও দোষী সাব্যস্ত হলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশ নেয়। গণআদালতের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হবে। শুনানিতে রোহিঙ্গা ও কাচিন স¤প্রদায়ের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের বর্ণনা দেন।
আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটনও জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারের সর্বস্তরে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। শুনানিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও অংশ নেন।
ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারে মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। পরে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য শেষে বিবাদী পক্ষ বক্তব্য রাখেন। আর গত বৃহস্পতিবার দিনভর বিচারকমÐলীর সদস্যরা তাদের বক্তব্য পেশ করেন।
পিপিটি মালয়েশীয় শাখার সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, পাঁচ দিনের অধিবেশনে বিচারকরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক, বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার বিশ্লেষণ করে এ রায় দেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলের প্রধান নোবেলজয়ী অং সান সু কি দেশটির সামরিক বাহিনীর সহায়তায় দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় আরাকানে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী তথা আদিবাসী রোহিঙ্গাদের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ নানা ধরনের বৈষম্য করে আসছে এবং বিগত বছরগুলোয় বিভিন্ন অজুহাতে গুলি, ছুরিকাঘাতে বা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে চলেছে। গত ২৫ আগস্ট আরাকানের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ শুরুর প্রাক্কালে তাদের বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্টে হামলায় বেশ ১২ জন নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়। এরপর বর্মী মগদের সাথে নিয়ে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে রোহিঙ্গা পুরুষদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে নির্বিচারে হত্যা, নারীদের গণধর্ষণ এবং নিরপরাধ মাসুম শিশুদের বিভিন্ন পৈশাচিক কায়দায় হত্যায় মেতে ওঠে। মগরা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবং বেঁচে যাওয়াদের সেদেশ ত্যাগে বাধ্য করে। প্রথম প্রথম বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয়া হলেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঢল নামলে তাদের করুণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম দীর্ঘ ৫, ১০ বা ১৫ দিন পাঁয়ে হেঁটে, পাহাড়, টিলা, খাল, বিল পেরিয়ে এক কাপড়ে বাংলাদেশে চলে আসে। জাতিসঙ্ঘ, ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এ যাবত ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন থানা এলাকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ রয়েছে শিশু, ৬০ হাজার গর্ভবতী মহিলা এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধ-অক্ষম মানুষ রয়েছেন। ১৩শ’ পিতামাতাহীন শিশুও তাদের সঙ্গে এসেছে বলে খবরে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রিত প্রত্যেকটি রোহিঙ্গা মুসলিমই মিয়ানমারে নির্মম গণহত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া ও লুটপাটের খবর জানিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণআদালতে মূলতঃ এসব ঘটনাকে তুলে ধরা হয় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।