Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গৌরীপুরে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিকে সামনে রেখে অবৈধ সনদের জমজমাট ব্যবসা বাদ পড়ছে না

টাকা দিলেই মিলছে জাল শিক্ষাসনদ

| প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


জাতীয় পরিচয়পত্রসহ জন্মনিবন্ধন সনদও
গৌরীপুর (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : টাকা দিলেই মিলছে যেকোনো শিক্ষাবোর্ডের জাল শিক্ষাসনদ ও নম্বরপত্র। বাদ যাচ্ছে না জাতীয় পরিচয় পত্র সহ জন্মনিবন্ধন সনদ। অভিজ্ঞতার সনদ সহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্রও আছে এই তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গোপনে এই ব্যবসা চলে আসছিলো। তবে সম্প্রতি ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির নিয়োগকে সামনে রেখে সেই দোকানগুলোর অবৈধ ব্যবসাটা অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রতিদিন এসকল দোকান থেকে অবৈধ সনদ ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করছে উপজেলা ও আশেপাশের অন্যান্য থানার প্রার্থীরা। আর ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। তবে প্রশাসন এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা। এতে করে বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ বিতর্কিত হবে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় বেকার যুবক-যুবনারীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী আবেদনকারীর বয়স ২৪ থেকে ৩৪ হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে নূন্যতম উচ্চমাধ্যমিক। এই প্রকল্পটিতে বিপুল সংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে এমন ধারণা থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন স্থানীয় বেকার প্রার্থীরা আবেদন করা শুরু করে। তবে অসদুপায় অবলম্বন করে অনেক প্রার্থী অবৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করে প্রকল্পটিতে আবেদন করা শুরু করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে শিক্ষাসনদ তৈরির জন্য বিশেষ সফটওয়্যার আছে। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করলে সনদের ওপর কোনো সিল ও স্বাক্ষর থাকলে সেটি নকল না আসল তা বোঝার উপায় থাকে না। বোর্ডের কাগজের রঙের সঙ্গে মিল রেখে এ সনদ তৈরি করা হয়। সর্বনি¤œ ৫শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার বিনিময়ে মিলেছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমকি, উচ্চমাধ্যমিক, ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তার পর্যায়ের জাল শিক্ষাসনদ ও নম্বরপত্র। ২শ’ টাকায় মিলছে জাল জাতীয় পরিচয়ত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ। এছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে মিলছে অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যেকোন কাগজপত্র। অবৈধ এসব কাগজপত্র সত্যায়িত করতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের সিল ও সাক্ষর জাল করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ব্যবসায়ী বলেন, এখানে ভূয়া শিক্ষাসনদ ও নম্বরপত্র তৈরি হয়না। তবে ন্যাশনাল সার্ভিসে আবদন করার জন্য প্রার্থীদের সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স টাকার বিনিময়ে কম-বেশি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডৌহাখলা ইউনিয়নের এক নারী বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসে আবেদন করার জন্য পৌর শহরের হাতেম আলী সড়কের একটি দোকান থেকে ৭শটাকার বিনিময়ে আমার সার্টিফিকেট ও ভোটার আইডি কার্ডের বয়স কমিয়েছি। তবে তিনি দোকানদারের নাম বলনেনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে কাগজপত্র সত্যায়িত করার জন্য অফিসে লোকজনের ভীড় বাড়ছে। যাদের অসঙ্গতি ধরা পড়ছে তাদেরকে সর্তক করা হয়েছে। তবে আমি সনদের মূলকপির সাথে অনুলিপির তথ্য মিল থাকলেই শুধু সত্যায়িত করছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্জিনা আক্তার বলেন, কোনো আবেদনকারী অবৈধ পন্থায় ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেটা যাচাই-বাছাই করার সময় বাদ পড়ে যাবে। এসব অবৈধ ব্যবসায় যারা জড়িত তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ