পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি আকারে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যূষিত কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫জন রোহিঙ্গার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসময় পাহাড়ী ঢলে তলীয়ে গেছে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা শেড। এসব রোহিঙ্গারা তাবু ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে নিকটবর্তী বন, জঙ্গল ও পাহাড়ে। তাদের শেষ সম্বলটুকুও বৃষ্টির পানি কেড়ে নেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষকে। সর্বস্ব হারানো এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্য, পানি, ঔষুধ, সেনিটেশন ও বাসস্থানের প্রকট সংকট দেখা দিয়েছে। এসব রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
মিয়ানমারের আরাকানে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসে যেভাবে নানামূখী সমস্যায় পড়ছে এটি চরম অমানবিক বলা চলে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মতে মিয়ানমারের মগদস্যুরা তাদের শত্রু হলেও বাংলাদেশের মুসলমানরা তাদের ভাই। কিন্তু সীমান্ত পারাপারের সময় বাংলাদেশী কিছু কিছু মুসলিম ভাইদের তরফ থেকে তারা যে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছে তা খুবই ভয়াবহ। এছাড়াও নিরন্ন করপদকহীন এসব রোহিঙ্গাদের আগে থেকেই পরিকল্পিত ভাবে উচুঁ স্থানে শেড করার সুযোগ করে দিলে বৃষ্টিতে তাদের এই সমস্যায় পড়তে হতো না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা শেডগুলোতে খাবার পানি, পায়খানা-প্রশাবের কোন ব্যবস্থা এখনো নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধের মারাত্মক সংকট। কিছু কিছু ব্যক্তি বা সংস্থা এ বিষয়ে এগিয়ে এলেও এগুলোর অভাব এখনোও প্রকট। হাজার হাজার শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ে দ্রæত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া না হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে মহামারী আকারে রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের মংডু থানার হাইচ্চুরাতা এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয় নেয় বালুখালী তেলিপাড়া খালের পাড়ে। এখানে আশ্রয় নেয় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের দস্যু হায়েনাদের নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে পালিয়ে এলেও বিপদ যেন তাদের পিছু ছাড়ছে না। গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টির ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় তাদের শেডগুলো। পানিতে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমার থেকে চলে এসে তারা আশ্রয় নিয়েছিল খালের পাড়ে। কিন্তু হঠাৎ প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে শেড গুলো তলীয়ে গিয়ে তাদের একমাত্র সম্বলটুকু শেষ হয়ে গেছে। তাদের কয়েকজন বলেন, সকালে একজন অজ্ঞাত লাশ এই খাল দিয়ে ভেসে যেতে দেখেছে তারা। তবে তার নাম ঠিকানা তারা জানেনা। ওই রোহিঙ্গাটি কুতুপালং লম্বাশিয়া অথবা মাছকারিয়া এলাকা থেকে ভেসে এসেছে হয়ত।
অপরদিকে থাইংখালী তাজনিমার খোলা খালের পাড়ে তাবু করে আশ্রিত রোহিঙ্গা মহিলা ফাতেমা বেগম (৩৫) খালের পাড়ে আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। তার নিকট জানতে চাইলে সে বলেন, তার একমাত্র স্বামী লালু মিয়াকে মিয়ানমার সেনা বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। তার বয়োবৃদ্ধ পিতা কালা মিয়ার (৭০) সাথে ঘুমধুম জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। কান্না জড়িত কণ্ঠে সে বলেন, সেই বয়োবৃদ্ধ পিতাকে পাহাড়ি ঢল ভেসে নিয়ে গেছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। থাইংখালী হাকিমপাড়া বস্তিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা কবির আহমদ জানান, তার ২টি ছেলে সন্তান নিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে আসে। ৩দিনের বৃষ্টির কারনে স্বাসকষ্ট বেড়ে শামশুদ্দোজা (১৮) নামের ছেলেটি মারা গেছে। স্থানীয় মুফিদুল আলমের নিকট থেকে টাকা নিয়ে কাপন কিনে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহামুদ চৌধুরী বলেন, ৩দিনের বৃষ্টির কারনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাবু ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে ঔষুধপথ্য, খাবার ও কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য ২৪ আগষ্ট আরাকানে নতুন করে সংগঠিত সহিংস ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষকে মিয়ানমার সেনা-পুলিশ ও মগদস্যুরা হত্যা করে বলে জানাগেছে। যদিও তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি। সেই সহিংসতা পরবর্তী মিয়ানমার থেকে দশ লাখ মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গা উখিয়ার ৭টি এবং টেকনাফের ৫টি শিবিরে থাকার ব্যবস্থা নেয়া হলেও শিবিরে শেড গুলোর অবস্থা বসবাস উপযোগী হয়নি এখনো।
দেখা গেছে একইভাবে ত্রাণ বিতরণে এখনো কোন ধরণের সমন্বয় বা শৃঙ্খলা স্থাপিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেনা বাহিনীকে ত্রাণ সমন্বয় ও পুণর্বাসনের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সেনা সদস্যরা আজ শুক্রবার থেকে ত্রাণ সমন্বয় ও পূনর্বাসনের কাজ শুরু করবেন বলে জানাগেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।