পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমরা আবার সেখানে!
আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের স্মৃতি অধিকাংশ মার্কিনী ভুলে যাবার পর আফগানিস্তানে আবার মার্কিন সৈন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। এ যুদ্ধের এখন ১৬ বছর চলছে। দু’জন প্রেসিডেন্টের ৪টি মেয়াদ পার হয়ে এখন এ যুদ্ধ তৃতীয় প্রেসিডেন্টের মেয়াদে প্রবেশ করেছে। এবার যে সব সৈন্য পাঠানো হচ্ছে, সরকারী ভাবে তাদের সংখ্যা গোপন রাখা হয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে তাদের সংখ্যা সাড়ে তিন থেকে চার হাজার বলা হয়েছে। আরো ৬ হাজার সৈন্য তাদের পর যাবে। তারপরে যাবে আরো অনির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য। কিন্তু এ সংখ্যাকে বিশ^াস করতে পারে কে? আমরা দেখেছি যে আফগান যুদ্ধকে শেষ পর্যায়ে আনার চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৪ সালে মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগের পদক্ষেপ নেন। তবে তিনি সেখানে সরকারী ভাবে ৮,৪০০ সৈন্য রেখে দেন, যাদের আসল সংখ্যা ১২ হাজার।
আফগান যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, এটা এখন অচলাবস্থায় আছে। এ অচলাবস্থা ভাঙ্গতে হলে আরো আমেরিকান সৈন্য প্রয়োজন। আফগান ন্যাশনাল আর্মির সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা তালিবান ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রæপের সাথে ভালোভাবে লড়াই করতে পারে। তা হলেই মার্কিন সামরিক বাহিনী বিজয় লাভ করতে পারবে। কিন্তু এগুলোর কোনোটাই কি প্রয়োজনীয়? অথবা চৌকস? অথবা এমনকি সত্য? একজন বিশিষ্ট আফগান কূটনীতিক তা মনে করেন না। আফগান পার্লামেন্টের দীর্ঘেিনর সদস্য ও বর্তমানে নরওয়েতে রাষ্ট্রদূত শুকরিয়া বারাকজাই এক সপ্তাহ আগে (এ প্রতিবেদন লেখা হয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদককে বলেন, তালিবানরা ক্লান্ত। তারা ঘরে ফিরতে চায়। কিন্তু আপনারা আমেরিকানরা তাদের যেতে দিতে চান না। উল্লেখ্য, এ মহিলা এমপি ২০১৪ সালে তালিবানদের এক আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে প্রাণে রক্ষা পান।
তিনি প্রতিবেদককে স্মরণ করিয়ে দেন যে তালিবান কিন্তু দখলদার বাহিনী নয়। (যেটা আমেরিকানরা) । তারা আফগান নাগরিক। কিন্তু তারা সাধারণ আফগানিদের চেয়ে প্রধানত পৃথক তাদের উগ্র রক্ষণশীলতাবাদ, নারী বিদ্বেষ ও সরকারের প্রতি প্রতিশোধ মূলক পদক্ষেপের জন্য। তাদের মনে করা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ইভানজেলিক্যাল ডানপন্থী রিপাবলিকানদের সাথে। আপনি প্রায় শহরেই তাদের কিছু লোকের দেখা পাবেন। যতই তাদের দমনের চেষ্টা করবেন তারে সমর্থকের সংখ্যা তত বাড়বে। তবে শান্তির সময়ে, যা গত ৪০ বছর ধরে আফগানিস্তানে নেই, অধিকাংশ তালিবান নিজ গ্রামে চাষী হতে, দোকানি হতে, গ্রামবাসী হতে,তাদের পিতাদের মত ফিরে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদের কাবুল দখলের চিন্তা থাকবে না বা তাদের উপর আমেরিকানদের ফের হামলার ঝুঁকি তারা নেবে না।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন তালিবানদের ক্ষমতাচ্যুত করে তখন তাদের সামান্য সংখ্যক আফগান সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু এখন বিপুল সংখ্যক লোক তাদের পক্ষে, তারা দেশের উল্লেযোগ্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্ প্রাদেশিক রাজধানী তারা দখল করতে পারে বলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তারা আফগান সরকারের সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী, তবে তা শুধু সকল মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়ার পরই।
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এটা কোনো কোনো পথ নয়। (ভাবুন দেখি যে আলোচনার মাধ্যমে কোনো শান্তি এলে তা বেসরকারী অস্ত্র উৎপাদনকারীদের জন্য কেমন হবে যাদের কাছে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সীমাহীন লড়াই মানে অস্ত্র বিক্রয়ের নিশ্চয়তা)। তার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ওভাল অফিসে জেনারেলদের রেখেছেন জেনারেলরা যা করে তা করার জন্য। যারা এখন দায়িত্বে রয়েছেন সেই জেমস ম্যাটিস, এইচ আর. ম্যাকমাস্টার ও জন কেলি প্রত্যেকেই আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ ফেরত, এবং তাদের মধ্যে যা আছে তাকে ফ্রয়েডের ভাষায় বলে বাধ্যতামূলক পুনরাবৃত্তি, পুরনো অভিজ্ঞতা ও পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির এক অন্ধ মানসিকতা। আপনি মনে করতে পারেন যে এই নির্দিষ্ট কিছু জেনারেল বিশে^র সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সামরিক শক্তি আফগানিস্তান বা ইরাকে যা করেছে তা সামান্যই বা কিছুই করা হয়নি বলে মনে করেন।
কিন্তু এ প্রতিবেদক আফগানিস্তানে ছিলেন এবং বহু কিছু স্মরণ করতে পারেন।
“ সে অর্থ কোথায় যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন?”
আমি (প্রতিবেদক) প্রথমবার কাবুল গিয়েছিলাম ২০০২ সালে যে সব আফগান নারী ও বালিকা তাদের পাঁচ বছরের গৃহবন্দীত্ব ছেড়ে সবে বাইরে এসেছে তাদের সাথে কাজ করার জন্য। আমি দেখতে পাই সর্বত্র বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের চিহ্ন। মুজাহিদদের মধ্যকার উপদলীয় সংঘর্ষের কারণে গোটা কাবুলই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই আফগান মৌলবাদীরা মার্কিন, সউদি ও পাকিস্তানের সমর্থনে রেড আর্মিকে আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত করে ১৯৮৯ সালে। আর তা ’৯০-এর দশকে তালিবানদের ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি করে। ২০০১ সালে আমেরিকানরা যখন তালিবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড অভিযোগ করেছিলেন যে সেখানে বোমা ফেলার মত ভালো কোনো লক্ষ্যবস্তু নেই। আমরা যেভাবেই হোক বোমাবর্ষণ যখন শেষ করলাম তখন হাজার হাজার কাবুলি নিহত হয়েেেছ, হাজার হাজার লোক পালিয়েছে, হাজার হাজার লোক রয়ে গেছে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র বা জাতিসংঘের দেয়া নীল তাঁবুগুলোতে।
আমি এক বয়স্কা আমেরিকান মহিলার সাথে থাকতাম। তিনি ’৬০-এর দশক থেকে আফগানিস্তানে থাকছিলেন। তার ব্যবসায়ী স্বামী সোভিয়েত-মার্কিন শীতল যুদ্ধের সময় আফগানদের আনুগত্য অর্জনের দায়িত্ব নিয়ে কাবুলে আসেন। প্রথম দিন সকালে ঠান্ডা যখন আমার হাড়ের মধ্যে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে তখন তিনি ময়লা কিছু নোট হাতে ধরিয়ে দিলেন। মাথা ঢেকে দিলেন উলের স্কার্ফ দিয়ে , তারপর পাঠালেন বরফের ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে রুটি আনতে। আমি এক সময় একটি দেয়াল ঘেরা মাঠের এক কোণে একটি রুটি তৈরির দোকান দেখলাম। সেখানে রুটি ক্রেতাদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়ালাম। তারপ এক সময় গরম রুটি পেলাম। আফগানরা কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হয়ত জানতে চায় কে আমি, কি করছি এখানে? সপ্তাহ শেষে তারা আমাকে দেখে মাথা ঝোঁকাতে শুরু করল এবং দীর্ঘ সারিতে আমার জন্য একটু জায়গা ছেড়ে দিত। (অসমাপ্ত)
*নিবন্ধকার অ্যান জোনস হাফিংটন পোস্টের প্রদায়ক ও ‘দে ওয়্যার সোলজার্স:হাউ দি উন্ডেড রিটার্ন ফ্রম আমেরিকা’স ওয়ারস- দি আনটোল্ড স্টোরি’ গ্রন্থের লেখিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।