রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : রূপালী ইলিশের ভর মওসুম হলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছে না মেঘনা নদীর চাঁদপুর এলাকার জেলেরা। তবে সাগর পাড়ের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় সে অঞ্চলের ইলিশে ঠাঁসা চাঁদপুর মাছঘাট। প্রতিদিনই বাড়ছে এখানে ইলিশের আমদানি। গড়ে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ মণ ইলিশ ঘাটে উত্তোলনের পর বিক্রি হচ্ছে। হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে । সেই সাথে মাছ সংরক্ষণে রাখার ফ্যাক্টরীতে।
বড় আকৃতির ঝুঁড়িতে যাকে বলা হয় ডোলের মাছ এবং ফিশিং বোটে করে এসব ইলিশ আনা হয় চাঁদপুর ঘাটে। সড়ক ও নদী পথে ইলিশ বেপারীরা সাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের কাছ থেকে তাদের আহরিত ইলিশ মাছ কিনে ভালো দাম পাবার আশায় মাছ বিক্রির জন্যে চাঁদপুর নিয়ে আসছে। এখানকার অনেক আড়তদারের আবার দক্ষিণ অঞ্চলে দাদন রয়েছে। যে পরিমাণ মাছ এখন ঘাটে আসছে তার সিংহভাগ দাদনের মাছ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মৎস্য আড়তদাররা। মাছ বেশি হওয়াতে এবার পঁচা ইলিশও দেখা গেছে প্রচুর। ১২ হাজার টাকা মণ দরে সেই ইলিশ কিনে নিয়ে ঘাটেই লবণ দিয়ে কাটা ইলিশের স্তুপ করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। জামালপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গে লবণ কাটা ইলিশের বেশ চাহিদা রয়েছে।
সরেজমিনে মাছঘাটে দেখা যায়, আড়তদার, বেপারী, চালানী, ইলিশ উত্তোলন, বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে জড়িত শ্রমিক কর্মচারী, মহাজনসহ সবাই ব্যস্ত। কারোরই দম ফেলার সময় নেই। ডাক চিৎকার চেঁচামেচি আর ইলিশ আমদানি ও সরবরাহের ক্রয়-বিক্রয়তে সরগরম চাঁদপুর মাছঘাট। ইলিশের দাম প্রতি মণ সর্বনিম্ন সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং আকারভেদে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় আড়তে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। তবে ১৪ হাজার থেকে ২০/২২ হাজার টাকা মণ দরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ঘাটে বিক্রি হয়। দুই থেকে তিনটা ইলিশে এক কেজি এই আকারের’ ইলিশের কেজি সাড়ে তিন শ’ টাকা আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি চার শ’ সাড়ে চার শ’ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির চেয়েও ওজনে বেশি হলে দাম আরো বেশি। তবে লোকাল মাছের দাম কমেনি। এখনো সেই মাছের কেজি হাজার ১২শ’ টাকা থেকে ১৫শ’ টাকা।
ভরপুর ইলিশ আমদানির ফলে গেলো ভাদ্র মাসে এবং আশ্বিনের শুরুতে ভাটি অঞ্চলের মাছ হওয়াতে দাম কিছুটা কমেছে। এই মওসুমে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে বাবুল হাজী, মালেক খন্দকার, হাজী কুদ্দুছ খাঁ, মানিক জমাদার (গফুর জমাদার), বড় সিরাজ চোকদার, মেজবাহ মাল, উত্তম দাস ও হাজী শবেবরাত কোম্পানীর আড়তে। ইলিশের বড় চালানীতে ভালো অবস্থানে রয়েছেন দেলু খাঁ, দুলাল গাজী, জান শরীফ, খালেক বেপারী, বাবুল হাজী, ইয়াকুব মাসুদ, হাজী জমিদার, হাজী মালেক খন্দকার, মুনছুর বন্দুকশী, ছানা মাঝি, আনোয়ার গাজী, বিলাল কাজী, নান্টু কাদিরসহ আরো ক’জন। তারা বিভিন্ন মোকামে প্রতিদিনকার মাছ চালানী করে থাকেন।
হরিণা ফেরিঘাটের ক্ষুদ্র মৎস্য আড়তদার মনির শেখ (২৫) জানান, আমাদের নদীতে মাছের দেখা না পাওয়ায় চাঁদপুরের জেলেরা ইলিশ শিকারে ভাটির দিকে চলে গেছে। কারেন্ট ও সাদা সুতার জালের জেলেরা কিছু মাছ পায় তা দিয়ে কেই লাভবান না। বহরিয়া ঘাটের আড়তদার ছলেমান মাঝি জানান, নদীতে এ সময় প্রচুর মাছ পাবার কথা কিন্তু আমাদের এই নদীতে মাছ খুবই কম হওয়ায় আমরা হতাশ।
চাঁদপুরের বরফ ব্যবসায়ী হাজী মোঃ আরব আলী জানান, চাঁদপুরের এরিয়াতে মাছ কম। ঘাটে যে মাছ আসছে তার অধিকাংশই চাঁদপুরের বাইরের মাছ। দক্ষিণাঞ্চলের শশীগঞ্জ, পাথরঘাটা, মহিপুর, লেতরা ও হাতিয়ার গভীর সাগরের মাছ। গত ১৫/২০ দিন চাঁদপুর ঘাটে ইলিশের আমদানি বেশি। তবে বরফ সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায় রয়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ক্যান বরফ চাঁদপুরে চাহিদা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে চালু ৭টি বরফকল চাহিদা অনুযায়ী সেই বরফ উৎপাদন করছে। ১৬৫ টাকায় প্রতি ক্যান বরফ তারা ফ্যাক্টরী থেকে কিনে ২শ’ টাকায় মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন ওই বরফ ব্যবসায়ী।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শবেবরাত সরকার জানান, লোকালে মাছ নেই। বৃহত্তর বরিশাল, নোয়াখালীর হাতিয়া ও ল²ীপুরে মাছ ধরা পড়ছে। সামনে ইলিশের অবরোধ পর্যন্ত মাছ থাকবে ভরপুর। চাঁদপুর ঘাটে এখন যে সব মাছ আসছে, সব মাছ ভোলার লালমোহন, চরফ্যাশন, ঢালচর, সামরাজ, মহিপুর ও হাতিয়া এলাকার। নামার মাছের চাপ বাড়ায় ইলিশের দাম কমে এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রয়েছে। ছোট সাইজের কেজি সাড়ে তিনশ’ টাকা। তিনি আরো জানান, এ বছর ইলিশের সিজন পাওয়া গেছে হাতে গোনা ২০/২৫ দিন। নদী ও সাগরে কোটি কোটি টাকা অর্থ লগ্নি করে সুবিধায় নেই এখানকার ব্যবসায়ীরা। ইলিশের অবরোধ পনর দিন পিছিয়ে দেয়ার দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।