Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

’৭৪-এর মতো ভয়াল দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে -রিজভী

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশে চালের সঙ্কট নেই তো দাম বাড়ছে কেন। তার মানে দেশে ৭৪-এর মতো ভয়াল দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে বলে মনে করে বিএনপি
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এমন মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে মিথ্যাচার করছেন তাতে প্রকৃত ও প্রকট সংকট আড়াল করা যাবে না। ৭৪ এর ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। বর্তমানে চালের দাম বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহে এক লাফে প্রায় সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, বর্তমানে চালের দাম বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মোটা চালের দাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ অনাহার-অর্ধাহার থেকে তাদের আগামী দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কিত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের পরম বন্ধু ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকার সুস্পষ্টভাবে বলেছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর দুই মাস তারা কোন চাল বাংলাদেশে রফতানি করবে না। রিজভী বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার গর্ব খর্ব হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের চাল রফতানি বন্ধ করার প্রতিবাদ করতেও ভয় পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চালের সরবরাহ বৃদ্ধির জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে-সরকারি গোডাউন খালি, বেসরকারিভাবেও চালের তেমন মজুদ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশের বিভিন্নস্থানে যে অভিযান চলছে তা নিস্ফল অভিযানে পরিণত হয়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখনও নির্বিকার। তাদের ভাবখানা এরকম যেন না খেয়ে মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। সরকারের বিশৃঙ্খল অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকিতে। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নতুন নয়। ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে এবং ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে এই সংকট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছিল। সেই সময় তাদের বলিষ্ঠ নেতৃৃত্ব ও জোরালো আন্তর্জাতিক তৎপরতায় মিয়ানমার সরকার তাদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। চালের পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে মন্ত্রীরা দাবি করলেও বাজারে দাম বাড়ছে কেন, সেই প্রশ্ন সরকারের কাছে রেখেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা বলছেন, কোটি কোটি টন চালের মজুদ আছে। আমাদের প্রশ্ন- তাহলে চালের বাজারে অস্থিরতা কমছে না কেন?” দুই দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি চালের মজুদ তলানিতে নেমে আসায় সরকার তিন মাস আগে আমদানির উদ্যোগ নেয়।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে গত আড়াই মাসে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি হলেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে, যার পেছনে মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করে আসছে সরকার। সরকারি হিসেবেই মোটা চালের দাম গত এক মাসে বেড়েছে ১৮ শতাংশ, এক বছরে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। রিজভী বলেন, বর্তমানে চালের দাম সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মোটা চালের দাম এখন ৫৫ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা পর্যন্ত। যে মজুদ থাকার কথা ছিল, তার অর্ধেকের কম চাল আছে কি না, সন্দেহ। ’৭৪ সালের ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। এই জাতির অনাহার ও দুর্বিষহ অবস্থার যে বিষণœ মেঘটি আমরা আকাশে দেখতে পাচ্ছি সেটা জন্য আমরা সবাই আতঙ্কিত। অভিযানের নামে চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা। পাশাপাশি তিনি বলেন, মজুদদারি ও সিন্ডিকেট তো সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। তারাই দীর্ঘ ৯ বছর যাবত সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করছে।
উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক সহায়তা দিতে কক্সবাজারে বিএনপি একটি কন্ট্রোল রুম (নিয়ন্ত্রণ কক্ষ) স্থাপন করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সেখানে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা পর্যায়ক্রমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
বিভিন্ন পূজামন্ডপে হামলার নিন্দা
দুর্গাপূজার আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ডপে হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেন বিএনপি নেতা রিজভী। তিনি বলেন, বিভিন্ন পূজামন্ডপে প্রতিমা ভাঙার উৎসবে মেতে উঠেছে ক্ষমতাসীনরা। সাতক্ষীরা, নাটোর, মানিকগঞ্জ, যশোরে পূজামন্ডপে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। মানিকগঞ্জে ১৫টি ও নাটোরে ১৮টি পূজামন্ডপে হামলা হয়েছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নোংরা রাজনীতি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব যাতে আনন্দমুখর হয়, সেজন্য বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে হিন্দু স¤প্রদায়ের পাশে থাকার আহ্বান জানান রিজভী।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলায় ৫ অক্টোবরের মধ্যে হাজির হওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর হাকিমের আদেশ দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্দেশ সরকারের একটা ঘৃন্য নীল-নকশার পরিকল্পনার অংশ। তার (খালেদা জিয়া) অনুপস্থিতিতে নিম্ন আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন এটি আমি মনে করি শেখ হাসিনার গোপন নির্দেশ। আমি এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ, ধিক্কার জানাচ্ছি।
নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ