পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। হাজার বছরের বন্দর তথা পোতাশ্রয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) থিম শ্লোগান হচ্ছে- Country Moves With Us’, অর্থাৎ ‘আমরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি’। প্রধান বন্দরের কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল দেশের একক বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। জাতীয় আমদানি-রফতানি প্রবাহের ৯২ শতাংশই সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। যার বার্ষিক পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। কন্টেইনার শিপিং বাণিজ্য খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ১৪ শতাংশ এবং খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিংয়ে (ব্রেকবাল্ক কার্গো) প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৮ শতাংশ। প্রতিবছর জাহাজ গমনাগমনের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৭ইং অর্থবছরে বন্দরের ট্যারিফ-মাসুল, সার্ভিস চার্জ এবং কাস্টম হাউসের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে আমদানি-রফতানিমুখী শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় সেবার মান বৃদ্ধি ও দ্রুতায়িত করা, রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া আরো সহজ ও গতিশীল করে বন্দর-কাস্টমস ভিত্তিক কর্মকান্ডকে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ জুলাই সচিবদের সভায় চট্টগ্রাম বন্দর এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন। ১৯ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আলোচনার ভিত্তিতে গত ১ আগস্ট থেকে সার্বক্ষণিকভাবেই (২৪/৭) চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস সচলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সার্বক্ষণিক সচলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত দেড় মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে হরেক ধরনের সমস্যা-সঙ্কট, সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্দর-কাস্টমসের সচলতা কার্যকরের পথে বাস্তব বাধা-প্রতিবদ্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বয়ংক্রিয় ও পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের অভাব এবং যুগোপযোগী প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। পোর্ট-শিপিং সার্কেলের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর কাগজে-কলমে শুধুই ‘সচল’ হয় না। বাস্তবে ‘সার্বক্ষণিক’ সচলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বন্দরের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। আর সেই অটোমেশন ব্যবস্থা একা বন্দর বিচ্ছিন্নভাবে চালু করেও সাফল্য আসবে না। কাস্টম হাউসকে সম্পৃক্ত ও সমন্বিতভাবেই তা বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। অন্যথায় কন্টেইনারসহ যাবতীয় খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রী ও জাহাজ হ্যান্ডলিং এবং কাস্টমসের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় প্রত্যাশিত দক্ষতা ও গতিশীলতা আসবে না। বাড়বে না সেবার মানও।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দর-কাস্টমসে গতি, দক্ষতা ও সেবার মানবৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবিটি দীর্ঘদিনের। তা আধুনিক প্রযুক্তিগত কৌশলেই নিশ্চিত হতে পারে। তবে নেপথ্যে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজ চক্র নানামুখী কারসাজি চালিয়ে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করছে। যাতে বন্দর-কাস্টমস বর্তমান ‘আধা-অটোমেশনের’ মধ্যেই হরেক সমস্যা-সঙ্কটে ঘুরপাক খায়। পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনে যেতে না পারে। কেননা পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড হলে বন্দর ও কাস্টমসে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইলের চালাচালির (ম্যানুয়াল) কাজ প্রয়োজন হবে না। ঘুষ-বকশিশ-স্পিডমানির লেনদেন প্রযুক্তির কাছে হার মানবে। তাছাড়া এ ব্যাপারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের অভাব ও সিদ্ধান্তহীনতা কাটেনি। সমন্বয়হীনতা রয়েছে বন্দর ও কাস্টমসেও। বন্দর-শিপিং-কাস্টমস কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য সরকারি বেসরকারি, আধা-সরকারি ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, স্টিভিডোরিং, সিএন্ডএফ, বেসরকারি আইসিডি (অফডক), ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয়ের ঘাটতি রয়ে গেছে পদে পদে। এরফলে সার্বক্ষণিক (২৪/৭) বন্দর ও কাস্টমস সচলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে এখনও সমস্যা ও প্রতিবদ্ধকতা দূরীভূত হয়নি।
জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে দুর্নীতি-অনিয়ম, হয়রানি রোধের উপায় এবং ‘কারিগরি প্রযুক্তিগত হাতিয়ার’ হচ্ছে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা। ৬ বছর যাবত চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) বাস্তবায়নের কাজ চলছে ঢিমেতালে। বন্দরের সাথে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে জড়িত হলেও সমন্বয়ের অভাব প্রকট। বিগত ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন বীর প্রতীকের নিবিড় তদারকিতে দেশের প্রধান বন্দর এবং কাস্টম হাউসে পরিচালিত যুগান্তকারী সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উভয় দপ্তরে অটোমেশন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সূচিত হয়। তবে দুর্নীতিবাজদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বাধা-বিপত্তি, বন্দর ব্যবহারকারী একাংশের গড়িমসি ও অজুহাত, অদক্ষতা ও অবহলোয় সিটিএমএস অটোমেশন পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করবে কবে তা অনিশ্চিত।
এদিকে টিআইবি’র গবেষণা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, অটোমেশন চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে দুর্নীতি অনিয়ম হ্রাসে অনেক সহায়ক হতে পারে। বন্দর কাস্টম হাউসে এখনও কাগুজে পদ্ধতি চালু থাকায় স্তরে স্তরে অবৈধ অর্থ লেনদেন হচ্ছে, যা ওপেন সিক্রেট। চট্টগ্রাম কাস্টমসে অটোমেশনের সাথে ম্যানুয়াল পদ্ধতিও চালু অবৈধ অর্থ তথা ঘুষ-বকশিশ স্পিডমানি আদায়ের সুযোগ অবারিত থেকে যায়। শুল্কায়ন ও পণ্য ছাড় করানোর সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন সুবিধার আওতায় আনা হলে দুর্নীতির অবৈধ লেনদেন অনেকাংশে বন্ধ হতে পারে। বন্দর ও কাস্টমসের আমদানি-রফতানি সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ অটোমেশনে ব্যবস্থাপনা এবং এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ৯ দফা সুপারিশ করে টিআইবি। এতে আছে বন্দরে সিটিএমএস’র পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মডিউল তৈরি ও ব্যবহার, বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার খুলে (আন-স্টাফিং) পণ্য ডেলিভারি পরিবহন বন্ধ এবং স্বাধীন, নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত বন্দর ও কাস্টম হাউসের কর্মদক্ষতা ও অটোমেশনের কার্যকারিতার সূচক পরিমাপের জন্য ‘পারফরমেন্স ইভ্যালুয়েশন’, কাস্টম হাউস ও বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
তবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমসে অটোমেশন পদ্ধতির আংশিক বাস্তবায়নেও কিছু উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে অটোমেশন বা সিটিএমএস প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমানে ইন্টারনেট কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টার্মিনালের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনারের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জানা এখন সম্ভব হচ্ছে। ওয়েব নির্ভর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সংস্করণের ফলে যে কোনো স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিল-অফ-এন্ট্রি ও বিল-অফ-এক্সপোর্ট ফরমে তথ্য দেয়ার সুবিধা, অনলাইনে ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (আইজিএম) দাখিলের পর বিল-অফ-এন্ট্রি ফরম পূরণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর তৈরি করা, অনলাইনে বিল-অফ-এন্ট্রি ফরম পূরণের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্যের এইচএস কোড অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ, নির্ধারিত হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধের ব্যবস্থা এবং বন্দরে ইন্টারনেট বা মোবাইলের মাধ্যমে টার্মিনালের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনারের অবস্থান সম্পর্কিত ইত্যাদি তথ্য-উপাত্ত আপডেট সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে। তবে অটোমেশন আংশিক বাস্তবায়নে প্রায়োগিক সফলতা নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীদের অসন্তুষ্টি ও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। কাস্টম হাউসে অটোমেশনের মাধ্যমে কাগজবিহীন অফিস (পেপারলেস) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এখনও প্রতি ধাপে ম্যানুয়াল স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েই গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়া, কন্টেইনারের অবস্থান, জাহাজেবাহিত পণ্যের বিবরণ, বিল দাখিল ও পরিশোধ ইত্যাদি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালনার জন্য বিগত নভেম্বর’১১ইং থেকে সিটিএমএস’র আওতায় অটোমেশন ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। এরফলে বন্দরে বহুল আলোচিত ‘টেবিলে টেবিলে ২৪টি স্বাক্ষরে’র ঝামেলা কিছু কমলেও পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের অভাবে মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আয়ত্তে আসেনি পরিপূর্ণ ডিজিটাল সক্ষমতা। চট্টগ্রাম বন্দর সিটিএমএস অটোমেশন ব্যবস্থাপনার কারিগরি প্রযুক্তি বিন্যাস করেছে সিঙ্গাপুর, উত্তর আমেরিকা এবং দেশীয় পোর্ট-অটোমেশন বিশেষজ্ঞদল। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিটিএমএস প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সিটিএমএস অপারেশন-উত্তর আরও ৫ বছর প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এসটি ইলেকট্রনিক্স, নেভিস এবং কানাডীয় ও দেশীয় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি সরবরাহকারী নামিদামি আইটি, বন্দর-অটোমেশনে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বিতভাবে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে ২০১১ সালের মার্চে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরআগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনলাইন ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে ‘এসাইকুডা প্লাস প্লাস’ সার্ভারের মাধ্যমে, যা যখন-তখন বিগড়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংক্রিয় অটোমেশন ব্যবস্থাপনার আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসের কার্যক্রম সমন্বিতভাবে পারিচালনা নিশ্চিত না হওয়ায় সমস্যা-সঙ্কট আর জটিলতার পুরোপুরি অবসান হয়নি। প্রত্যাশিত সেবার মান ও গতি থমকে আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।