Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্যে অবগাহন করেই আমি গান লিখি

একান্ত সাক্ষাৎকারে শহীদুল্লাহ ফরায়জী

নীহার আহমেদ: | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সঙ্গীতের মূল উপাদান এর কথা। কথার যুথবদ্ধ বিন্যাস, ভাব এবং মানুষের মনের অন্তর্নিহিত ইচ্ছা, উচ্ছ¡াস, আনন্দ-বিরহ, আধ্যাত্মিকতা ধারণ করে সঙ্গীতের একেকটি শরীর নির্মিত হয়। সঙ্গীত অনেকেই লিখেন, তবে সবার লেখা কালোত্তীর্ণ হয় না। দেশীয় সঙ্গীত জগতে শহীদুল্লাহ ফরায়জী এমন এক গীতিকবি যিনি সঙ্গীতকে দার্শনিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। সরল কথায় জটিল বিষয়গুলো নিয়ে তিনি অবলীলায় খেলে যান। ফলে শ্রোতাদের মাঝে তার গানের বাণী ভাবের সৃষ্টি করে। চিন্তার খোরাক জোগায়। এই বিশিষ্ট গীতিকবির সাথে সঙ্গীতের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয়।
বব ডিলানের সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্তিতে সংগীতের অর্জন কতটুকু?
বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল বিজয় অর্জন করে সংগীতকে সাহিত্যের সমকক্ষ করেছেন। ১১৫ বছরের ইতিহাসে একজন গীতিকার সাহিত্যে নোবেল পেয়ে সাহিত্যের সংজ্ঞাও বদলে দিয়েছেন। বব ডিলানই প্রথম গায়ক ও গীতিকার যিনি বিশ্ব সাহিত্যের এই আরাধ্য সম্মান অর্জন করেছেন। বব ডিলান বিশ্ব সংগীতের এক অবিসংবাদিত নাম। সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্তিকে তিনি ‘প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার’ সংগে তুলনা করেছেন। তার গান মানেই সমাজ সচেতনতা আর জীবনের জয়গান। দুনিয়া কাঁপিয়েছেন তিনি প্রতিবাদ আর নিপীড়ন বিরোধী গান রচনা করে। তাই গান বা সংগীত এখন আর শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। সংগীতে কাব্যিক মুর্ছনার কারিগর ডিলানের সাহিত্যে নোবেল জয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সুইডিশ কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ডিলান এই সময়ের সবচেয়ে মহান জীবিত কবি-তাঁর গান হয়ে উঠেছে জ্যোর্তিময় কবিতা। ভারতের বিখ্যাত গীতিকার জাভেদ আখতার বলেছেন, ডিলানকে সাহিত্যে নোবেল দেয়ার মধ্যদিয়ে অবিশ্বাস্য এবং আশ্চার্যজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগীত যে সাহিত্যের অংশ এতে তা প্রমাণিত হয়েছে। গানকে সচরাচর সাহিত্য হিসেবে ধরা হয়না। বব ডিলান গানকে সাহিত্যের মর্যাদায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন-এটা অসাধারণ।
আপনার সংগীতে সাহিত্য কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করেছে?
আমি সংগীতকে সবসময় সাহিত্যের অংশ বলে মনে করেছি। সাহিত্যে অবগাহন করেই আমি গান লিখি। সাহিত্যই মানুষের ভিতরে আত্মিক সৌন্দর্য বিনির্মান করে দেয়। জীবনের গভীর চেতনা অর্জন করতে হলে-আত্মমগ্নতায় নিমজ্জিত থাকতে হলে সাহিত্যের মাঝে নি:শব্দে অনুসন্ধান করতে হয়-নিভৃতে বিচরণ করতে হয়। সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক মানুষের মনে মহৎ ধারণা সৃষ্টির সামর্থ্য যোগায়। উৎকর্ষময় সাহিত্যের একটি অর্ন্তনিহিত ক্ষমতা আছে যা মানুষের হৃদয়কে উর্বর করে-স্পর্ধিত আনন্দের অনুভূতিতে পরিপূর্ণকরে। সাহিত্যের এই শক্তি পাঠকের চিত্তে ব্যাপক প্রভাব ফেলে সে প্রভাব বিশেষ কালের সীমায় সীমাবদ্ধ থাকেনা। তা হয় সর্বকালের সার্বজনীন। সাহিত্য প্রশ্নে প্রাচীন কালের সাহিত্য সমালোচক লঙ্গিনাশ বলেছেন, রচনার উৎকর্ষতা হচ্ছে এক মহৎ মনের প্রতিধ্বনি। চরিত্রের মাহাত্ম না থাকলে, মনের প্রসারতা না থাকলে মহৎ চিন্তার সামর্থ্য না থাকলে সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়। সাহিত্য কেবল মহৎ নয়, সুন্দর এবং মহৎ এই দুই এর সমন্বয়। সৌন্দর্য কোন সৃষ্টিকে চিত্তাকর্ষক করে আর মহত্ব আমাদের ক্ষুদ্র পরিসর থেকে বৃহৎ পরিসরে এক সীমাহীন আনন্দলোকে নিয়ে যায়। শ্রেষ্ঠ সাহিত্য আমাদের মনকে আলোড়িত করবে-উত্তেজিত করবে এবং মহত্ত¡র করে উত্তীর্ণ করবে উর্ধ্বলোকে। সাহিত্যের মূল কথা হলো উত্তরণ। তাই সাহিত্যে আমি খুব প্রভাবিত।
একজন গীতিকবির জন্য সাহিত্য কেন জরুরী ?
এর কারণ, গীতিকবিতা হচ্ছে সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। নিজের মাঝে জীবনের সামগ্রিকতার গভীর বিকিরণ যদি না ঘটে, তাহলে জীবনের চরম পরমতা প্রকাশ করা সম্ভব হবেনা। সাহিত্যের কারণেই মানুষ প্রকৃতির অনুবর্তী হতে পারে। মাটির তলায় হীরা জহরতের সঞ্চয় কোথায় আছে, তা উপর থেকে বোঝার উপায় নেই-এর জন্য মাটি খুঁড়তে হয়। পাপমন্ডিত জীবনের নিচে অদৃশ্য যে হৃদয় রয়েছে তার মাঝেও অসংখ্য তারকারাজি, চন্দ্র-সূর্য বিরাজ করছে-তাকেও হৃদয় খুঁড়ে উদ্ধার করতে হয়। হৃদয় খোঁড়ার হাতিয়ারটাই হচ্ছে সাহিত্য। সাহিত্যইতো অনুর্বর হৃদয়ে জীবনের বীজ বপন করে। মানবিক মনস্তত্বের একেবারে ভেতরের স্তরে পৌঁছতে না পারলে, হৃদয়ের অতল তল স্পর্শ করতে না পারলে, নিজের শিকরের গভীরে পৌঁছতে না পারলে, একজন গীতিকার উচ্চস্তরের গান নির্মান করবে কীভাবে? আর উচ্চস্তরের সংগীত ছাড়া সংগীত কীভাবে সাহিত্যের সমকক্ষ হবে?
জীবন সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি কী?
জীবন হচ্ছে ঐশ্বরিক তীর্থ। ‘মানুষ’ এবং ‘মানবিক’ হয়ে ওঠার নিরন্তর সংগ্রাম। মানুষকে তার ভিতরের অন্ধকার দূরীভূত করার জন্য জীবনকে ভালবাসার মধ্যদিয়ে, সত্য ও পবিত্রতার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করতে হয়। জীবনের সমুদ্র থেকে পান করার জন্যে মানুষকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়, মর্ত-স্বর্গ নিয়ে তার ভাবনাকে বিস্তার করতে হয়। মানুষ পোশাক দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে পারে কিন্তু ভিতরের নগ্নতা, লজ্জাহীন অহংকার এবং সৌন্দর্যহীনতাকে ঢেকে রাখতে পারেনা। জীবনকে অর্থবহ করতে হলে-জীবনের শোভাযাত্রায় যোগ দিতে হবে। হৃদয়ের ভিতরে যে সংগীত তা অনুধাবন করতে হবে। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য কাজ হবে জীবনের অন্তরাত্মার গোপনীয়তার সাথে সখ্য গড়ে তোলা। বিখ্যাত সাহিত্যিক দার্শনিক কহলিল জিবরান বলেছিলেন, সৌন্দর্যই হচ্ছে জীবন। সৌন্দর্য হচ্ছে, এমন একটি বাগান যা চিরকালের জন্য ফুটে আছে। মানুষ জীবনে নশ্বর দেহ আর অবিনশ্বর আত্মা পায়। জীবনের অন্তঃস্থলেই মৃত্যুর বীজ বপন করা আছে। সুতরাং একদিন বিলিন হবো-ধ্বংস প্রাপ্ত হবো, একদিন সবকিছুর সমাপ্তি ঘটবে। আত্মা অদৃশ্য আকাশের সীমাহীন উচ্চতায় অবস্থান করবে আর দেহ বিলোপ হবে। মৃত্যুতেই নিশ্চিত হবে পরিপূর্ণ চিরকাল।
একাকীত্ব-নিঃসংগতার জীবন বরণ করার কারণ কী ?
আমি একা কিন্তু আমার কোন একাকীত্ব নেই। নিঃসংগতা আমার উপলব্ধিতেই নাই। সংসার আমাকে অধিগ্রহণ করতে পারবেনা-এটা সচেতন ও স্বতঃফ‚র্ত সিদ্ধান্ত, কিন্তু আমি খুবই হোমলি। ভাই আ স ম আবদুর রব আর ভাবী তানিয়া রব-এর সংসারে তাঁদের প্রশ্রয়ে আমি আমার আত্মা আর হৃদয়ের আশ্রম গড়ে তুলেছি। মৃত্যু ছাড়া এই আশ্রম আমি আর ত্যাগ করতে চাইনা। ভাই-ভাবীর সংসারে আশ্রম গড়তে না পারলে গীতিকার হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। আমি আমার স্থির ‘জীবননীতি’ নির্ধারিত করেছি। এই ‘জীবননীতি’ দিয়েই আত্মার সাথে অলিখিত চুক্তি সম্পাদন করেছি। আমার স্বপ্ন বিক্রি হোক বা আমার স্বপ্ন কেউ অপহরণ করুক তা আমি চাইনা। আমার হৃদয়কে শাসন করতে আমার বিবেক অবিরাম নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে। আমি বিবেক শাসিত একজন মানুষ। জীবনের প্রতি আমার কোন মোহগ্রস্ততা নেই। জীবন আমাকে অনেক প্রতিদান দিয়েছে। নিজের উপর আমার ক্ষোভ হয় অজ্ঞতার কারণে। সৌন্দর্যকে, সত্যকে, ন্যায্যতাকে নিজের জীবনে প্রতিপাদ্য করতে পারিনি। বিবেকের অগ্নি দিয়ে হীনমন্যতা, মানবতাহীনতাকে পোড়াতে পারিনি। চিরকালীন সত্যে নিজেকে চিরস্থায়ী করতে পারিনি। দুঃখ হয়, কেন শ্রেষ্ঠতম নৈতিক জীবন অর্জিত হলোনা; আর কেনইবা প্রকৃতির মত অকৃত্রিম হতে পারলাম না। পবিত্রতা, মহত্ব, পরিশুদ্ধতা-এসবের জন্য রয়েছে আমার আকূল আকাঙ্খা। এসবের জন্য আমি যে কী পরিমাণ অপেক্ষা করি। আমার যাপিত জীবনের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই এবং ভবিষ্যতে আরো জনম পেলেও এ জীবন পরিত্যাগ করবো না।
প্রেম-ভালবাসা, মানবিক সম্পর্ক, ভক্তদের উচ্ছ¡াস কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন ?
আমার মাঝে ভালবাসার বিস্ফোরক রয়েছে, আর আমার রয়েছে অনেক হৃদয়। সুতরাং কোন ধরণের পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই আমি মানুষকে অনেক বেশী ভালো বাসতে পারি। কারো কারো ভালবাসায় আমার চিত্তকে দোলায়িত করেছে বা আমার মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে কিংবা আমি কারো হৃদয় জয় করেছি কিন্তু কোনটাই স্থায়ীত্ব পায়নি। কারণ আমি প্রেম-ভালবাসা প্রশ্নে নিজের চার পাশে একটি অলংঘনীয় দেয়াল তুলে রেখেছি-যা আমি নিজেও অতিক্রম করতে পারিনা। আমি যদি নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করে না রাখতাম অনেকেই হয়তো আমাকে প্রেমের জন্য অভ্যর্থনা জানাতো। আমি এ জীবনে আমার প্রতি কারো দুর্বলতাকে উসকে দেইনি। সর্বগ্রাসী ভালবাসা থেকে সযতনে নিজেকে সংহত করেছি। তবে প্রেম-ভালবাসা আমাকে প্রভাবিত করেছে, বিচ্ছেদ-বেদনা আহত করেছে। প্রেম, ভালবাসার আত্মময়তাই আমার সংগীতের বৈশিষ্ট্য। কবিগুরু গ্যেটে বলেছিলেন, তার প্রতি আমার ভালবাসা নিষ্পাপ, পরম পবিত্র নয় কি? আমার অন্তরাত্মা কি কখনো একটি পাপ চিন্তা দ্বারা কলুষিত হয়েছে? আমি মহান গ্যেটের এ অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করি। আমার সাথে অনেক মানুষের নৈকট্য-বন্ধুত্ব। ভক্তদের ভালবাসা নিয়ে কোন ধরনের সংকট হয়না। কিন্তু কেউ যখন হয়ে যায় হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের তখন কেন জানি দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। এই ধরণের আত্মিক-নৈতিক সম্পর্কে একবার দূরত্ব বা ফাটল ধরলে আমি আর তা পুনরুজ্জীবিত করি না। যা ভালো তা ভালো থাকতেই সমাহিত করতে হয়-চুর্ণ বিচুর্ণ করে নয়। তবে কোন সম্পর্ককে আমি বিসর্জন দেই না, মনের অতলান্তে রেখে দেই।
বিশ্ব সাহিত্য অধ্যায়নে কি অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন ?
আমি বিশ্ব সাহিত্য থেকে জীবনের সামগ্রিতকতার অনুসন্ধান করে যাচ্ছি নিরন্তর। টলষ্টয়, গ্যেটে, বরিস পাস্তেরনাক, মিগেল সার্ভেন্টিস, দস্তয়ভস্কি, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে, আলবেয়ার ক্যামু, হেরমান হেসে, টমাস মান, বালজাক, আলেকজান্ডার ডুমা, মার্সেল প্রæস্ত, জাঁ পল সার্ত্রে, হাওয়ার্ড ফাস্ট, আন্দ্রে জিদ, ভিক্টর হুগো, চিনুয়া অচিবি, স্তাদাল, মিখাইল শলোকভ, আন্তন চেখব, গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজ, নাগিব মাহফুজসহ অসংখ্য সাহিত্যিকদের উপন্যাসের মাধ্যমে নৈতিক চেতনা শানিত করেছি। এর বাহিরে আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে কহলিল জিবরান। বিশ্ব সাহিত্যে বাংলায় ভাষায় অনুবাদকারীদের অন্যতম জুলফিকার নিউটন এর কাছেও আমি অপরিসীম ঋণী। তাঁর অনুবাদকৃত বিশ্ব বিখ্যাত অনেক বই পড়ার সুযোগ পেয়েছি। দার্শনিক ফ্রেডারিক নিতশের দর্শন পড়ে বহুদিন ‘মহাপুরুষ’ এর আদর্শে বিমোহিত ছিলাম। আর কবিতায় ডবিøউ বি ইয়েটস, টি এস এলিয়ট, হুয়ান রামোন হিমোনেথ, বরীস পাস্তেরনাক, জর্জ সেফেরিস, পাবলো নেরুদা, ডেরেক ওয়ালকট, অকটাভিও পাজ, গুনটার গ্রাস, চেসোয়াব ভিউশ, জন কীট্স, কহলিল জিবরান সহ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবিদের কবিতা পড়ার সুযোগ পেয়ে জীবনের রস সংগ্রহ করেছি। শেক্সপিয়ার, হেনরিক ইবসেন, লুইজি পিরানদোনা, ইউজিন ও নীলÑএর মতো বিখ্যাত নাট্যকারদের নাটক পড়েছি। আর গ্রীক সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সফোক্লিস-এর ‘এন্টিগোনে’ এবং ‘ইডিপাস’ নাটকের সর্বশ্রেষ্ঠ ট্রাজেডি আমার অস্তিত্বে ভীষণ নাড়া দিয়েছে। এছাড়া বরীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, লালনতো আমার চৈতন্যেই প্রবাহিত।
৬০-দশকের গানের স্থায়ীত্ব আছে কিন্তু বর্তমান গানের স্থায়ীত্ব নেই কেন?
কালের বিবর্তন ও নতুন প্রযুক্তির সমাবেশ, সমাজ কাঠামোর রূপান্তর-এসব বিষয়কে একীভূত করেই এর উত্তর খুঁজতে হবে। আগে গান শোনা যেতো গ্রামোফোনে, ক্যাসেট-সিডিতে, গাড়িতে, দোকানে, উৎসবে, উচ্চস্বরে প্রকাশ্যে। আর রেডিও-টিভিসহ গান শোনার মাধ্যম ছিলো সুনির্দিষ্ট। সুতরাং একটি গান ঘরে-বাইরে সামাজিকভাবে অসংখ্যবার শোনা যেতো। ফলে গানটি মননে চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায়। আর বর্তমানে গান শোনার মাধ্যম সুনির্দিষ্ট নয়, অসংখ্য। এখন গান ধ্বনিত হচ্ছে হ্যাডফোনে, প্রকাশ্যে নয়। আর নিমিষেই পৃথিবীর সকল ভাষার সকল গান হাতের মুঠোয় সংগ্রহ করে শোনা যায়, ফলে মননে কোন নির্দিষ্ট গান স্থায়ীত্ব পাচ্ছে না। তবে বিদ্যমান বাস্তবতায় গানকে আরো জীবনমুখী-নৈতিকতামুখী করতে হবে, সুরের বৈচিত্র অনুসন্ধান করতে হবে, হৃদয় এবং বিবেক স্পর্শ করার মত গান নির্মান করতে হবে। মানুষের জীবন নামক খনিতে যে মহা মূল্যবান হীরক রয়েছে, তা অনুসন্ধান করে সংগীত রচনা করতে হবে।
ইদানিং গান নিয়ে কি কাজ করছেন ?
দেশের খ্যাতিমান শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, আসিফ আকবর, ফাহমিদা নবী, ন্যান্সি, আখি আলমগীর, সাবিনা লাকী, রাজিব মাহবুব, শিমুল এর গান করেছি। প্রখ্যাত সুরকার আলীউদ্দিন আলী, কুমার বিশ্বজিৎ, মান্নান মোহাম্মদ, নাজির মাহমুদ, কিশোর, মনি জামান, শেখ মিলন, মুরাদ নূরের সুরে কাজ করছি। এছাড়াও সানিয়া রমা, দেবাশীষ কায়সার, হাবিব মোস্তফা ও হৃদয় এর কণ্ঠে গান নির্মানের কাজ চলছে। চলচ্চিত্র পরিচালক হাসান শিকদারের ‘অবতার’ ও অনীরুদ্ধ রাসেলের নতুন সিনেমার গান করছি।
সর্বশেষ গানের বানী কি ?
এক জনমে প্রেমে আর কত পোড়াবে/ তোমার প্রেমে আমার পাপ ধুঁয়ে মুছে যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ