পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবজি ক্ষেত। পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা। সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, চন্দনাইশ, দোহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে মিশ্র চাষের প্রচলন দীর্ঘদিন থেকে। পাহাড়ে যেমন জুম চাষে হরেক রকমের ফসল হয়। তেমনি মিশ্র চাষেও আবাদ হয় হরেক রকম সবজির। কৃষকরা বলছেন, চলতি বর্ষায় টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢল এখানকার মিশ্র ক্ষেতের ফসলে অভাবনীয় উর্বরতার যোগান দিয়েছে। মওসুমের শুরুতে পাহাড়ী ঢলে কোন কোন এলাকায় ফসলহানি হয়েছে। তবে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা নতুন মাটিতে নতুন করে আবাদ করার পর বিস্ময়ে হতবাক প্রান্তিক চাষীরা। তারা দেখছেন, সবজি ক্ষেতে অন্যরকম চিত্র। কোনরকম সার ছাড়াই বেড়ে যাচ্ছে গাছ। নির্ধারিত সময়ে ধরতে শুরু করেছে ফলন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার শরৎকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৮১ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ১২ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মিরসরাইয়ে উঁচুনিচু জমি, টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে এখন মিশ্র ফসলের বিস্তৃত মাঠ। হালদার দু’পাশে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষ হয়েছে হরেক রকমের শাকসবজির। শাকসবজির ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও পটিয়াতেও ব্যাপকহারে সবজির আবাদ হয়েছে। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উঁচুনিচু এলাকা এবং তিন পার্বত্য জেলায় জুমের পাহাড়ে এখন সবজির হাসি।
সীতাকুন্ড, মিরসরাই এলাকার সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থেকেও ব্যাপক সবজি চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বাজারে যাচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত সবজি আসছে চট্টগ্রামের বাজারে। শরৎকালীন সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে বেগুন, বরবটি, ঢেড়স, শসা, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কচু, ঘিমা কলমি, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ডাটা, লালশাক, ধুন্দুল, পুঁইশাক ও পাটশাকের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলায় শাক হিসেবে পাটের আবাদ হয়। তবে আশের জন্য এবার ল²ীপুর জেলায় ৯ হাজার ৯৯২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ড এলাকার চাষী মোঃ মুসা মিয়া জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি প্রায় ১০ একর জমিতে মিশ্র শাকসবজির চাষ করেছেন। একই জমিতে করলা, ঢেড়স, মিষ্টিকুমড়া, বরবটি ও চালকুমড়ার আবাদ করেন তিনি। এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে এসব জমি আগের তুলনায় যেমন সতেজ হয়েছে, তেমিন পাহাড়ী ঢলে নতুন মাটি আসায় উর্বরতাও বেড়েছে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার তেমন সার দিতে হয়নি। বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পোকামাকড়ের উপদ্রবও ছিলনা। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে নানারকম রোগবালাই দেখা দেয়। স্বাভাবিক বর্ষণের ফলে প্রাকৃতিকভাবেই এসব রোগবালাই চলে গেছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, আশা করা যায় আগামী কয়েক বছর ভালো ফলন অব্যাহত থাকবে।
সীতাকুন্ডে মোঃ মুসা মিয়ার মতো হালদা পাড়ের চাষী আবদুল আজিজও ফলনে বেজায় খুশি। তিনি জানান, হালদার চরে দীর্ঘদিন ধরে সবজি চাষ করে আসছেন। তবে এবারের মতো ফলন নিকট অতীতে তিনি পাননি। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কয়েক দফায় দু’কূল প্লাবিত করেছে হালদা নদী। আর এ কারণে দুই পাড়ে পলি মাটি জমেছে। টানা বর্ষণ ও সেইসাথে নরম মাটির পরশ ভূমিকে দারুণভাবে উর্বর করে তুলেছে। এর সুফল মিলছে সবজির ফলনে। চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী এবং রাঙ্গুনিয়াতেও শাকসবজির ভালো ফলনের খবর দিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। লবণ পানির আগ্রাসন কমে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধেও সবজির আবাদ হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। বর্ষার শুরুতে কিছু কিছু এলাকায় ফসল নষ্ট হয়। ওইসব এলাকায় কৃষকদের মাঝে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রলম্বিত বন্যার কারণে বাজারে সবজির ঘাটতি দেখা দিতে পারে আর এ কারণে ভালো দামও পাওয়া যেতে পারে এমন আশা নিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ব্যাপকহারে সবজির আবাদ করেছেন। তাছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়, টিলাময় এলাকাগুলো এমনিতেই সবজি চাষের জন্য উপযোগী। তাছাড়া নিয়মিত বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়, টিলার উপরেও সবজির আবাদ করা গেছে। সবজির পাশাপাশি চট্টগ্রাম অঞ্চলে আদা এবং মরিচের চাষও হয়েছে ব্যাপকহারে। গত কয়েক বছর ধরে বাজারে আদার দাম বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের চাষীরা আদা চাষে উৎসাহী হয়ে উঠে। চট্টগ্রামের পাহাড়, টিলামায় এলাকার পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় আদার চাষ হয়। এখানকার আদা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও সরবরাহ দেয়া হয়।
এদিকে আমন ফসল ঘরে উঠার পর রবিশস্যে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। গম, ভুট্টা, সরিষা, চীনা বাদাম, ফ্যালন, খেসারি, বিটি বেগুন, মুগডাল উৎপাদনে পরিবার প্রতি এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি এসব ফসল উৎপাদনের জন্য দেয়া হচ্ছে ডিএপি ও এমোপি রাসায়নিক সার। কৃষকদের এ প্রণোদনা দিতে সরকার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।